সিলেটটুডে ডেস্ক

২৮ মার্চ, ২০১৯ ০১:৪৬

দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীর চিঠিতে বন্ধ হলো ইটভাটা

বিদ্যালয়ের পাশেই একটি ইটভাটা। ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। এমন সমস্যার মাঝেই আরও একটি ভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বাঁচার আকুতি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি লিখে বিদ্যালয়টির দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী। শিক্ষার্থীর আবেগঘন চিঠিটি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে যায়। পরে ভাটার কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে। জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিঠিটি ভাইরাল হওয়ার পর ভাটাটির কার্যক্রম আপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

পার্বতীপুর উপজেলার হযরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী মায়িশা মনওয়ারা মিশুর লেখা ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মাননীয় ডিসি স্যার দিনাজপুর, ছালাম নেবেন। আমরা দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুর উপজেলার হযরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ি। আমাদের স্কুলের পাশে বিপ্লব নামের একজন লোক ইটভাটা দিয়েছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। পরিবেশের ক্ষতি হয়। চোখ জ্বালা করে। এখন আবার স্কুলের পাশে মুক্তা নামের এক লোক আরেকটি ইটভাটা দিতেছে। তাহলে আমাদের আরও ক্ষতি হবে। আমরা কীভাবে বাঁচবো? আপনি আমাদের বাঁচান।’

চিঠিটি জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলমের দৃষ্টিগোচর হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হককে ভাটাটি বন্ধ করতে নির্দেশ দেন।

বুধবার বিকেলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হক পুলিশ নিয়ে ইটভাটাটিতে অভিযানে যান। কিন্তু গিয়ে দেখেন ভাটাটি পরিচালনার জন্য উচ্চ আদালতের রিট রয়েছে। পরে তিনি ভাটা মালিককে বুঝিয়ে ভাটাটি বন্ধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করেন।

সরেজমিন এলাকা পরিদর্শন করে দেখা গেছে, পার্বতীপুর-দিনাজপুর সড়কের পাশেই গড়ে উঠেছে ইটভাটাটি। ভাটার চিমনি থেকে কয়েক গজ দূরেই ভূট্টাক্ষেত। তার কয়েকশ গজ দূরে রয়েছে আরও একটি ইটভাটা। দুই ভাটা থেকে দেড় থেকে দুইশ গজ দূরে হযরতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

শিশু মিশু জানায়, তার মতো বিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি শিশুর চোখ দিয়ে পানি পড়ে। চোখ জ্বালা করে। কেউ ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারে না।

সে এও বলে, ‘চাচ্চু, ভাটাটি বন্ধ করে দেন তো। আমরা যেন ভালোভাবে শ্বাস নিতে পারি।’

শিশুটির বাবা গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মমিনুল হক বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে ভাটা হওয়ায় শিশুরা শ্বাকষ্টসহ নানা রোগে ভুগছে। শিশুদের চোখ জ্বালা করে। তার মেয়ে নিজেই চিঠি লিখে আমার ফেসবুক আইডি থেকে পোস্ট করেছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিনাত রেহানা বলেন, ভাটার কারণে বিদ্যালয়ের শিশুদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।

ইটভাটার মালিক হাসান শাহারিয়ার বলেন, উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করে ভাটা চালিয়ে আসছেন।

পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হক জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশের প্রেক্ষিতে বুধবার বিকেল ৩ টায় পার্বতীপুরের ওই ইটভাটায় গিয়ে কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায় সেটির রিট পিটিশন রয়েছে। পরে ভাটা মালিককে বুঝিয়ে আপাতত ইটভাটাটির কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মায়িশা মনওয়ারা মিশুর ইটভাটা বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে লেখা একটি চিঠি দৃষ্টিগোচর হয়। পরে পার্বতীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহানুল হককে ভাটাটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন থাকায় আইনগতভাবে ভাটাটি বন্ধ করা না গেলেও পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে ভাটা মালিককে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে আপাতত ইটভাটাটি বন্ধ রাখা হয়।

তিনি জানান, পরবর্তীতে আইনগত বিষয়ে বিবেচনা করে ভাটাটির ব্যাপারে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত