সিলেটটুডে ডেস্ক

১১ মার্চ, ২০২২ ২২:৫৮

করোনায় মৃত্যু: ল্যানসেটের তথ্যে ৪ লাখ, সরকারি হিসাবে ২৯ হাজার

চিকিৎসাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪ লাখের বেশি মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে, তবে সরকারি হিসাবে এই সংখ্যা ২৯ হাজারের কিছু বেশি। কেবল বাংলাদেশের তথ্যেই গরমিল নয়, আন্তর্জাতিক এই জার্নালে বিশ্বেও মৃতের এই তথ্য তিনগুণ বেশি বলে দাবি করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ল্যানসেট এই গবেষণাপত্র প্রকাশ করে।

গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনা মহামারিতে প্রায় ৪ লাখ ১৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। ল্যানসেটের গবেষণাপত্রে আরও দাবি করা হয়েছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর বিশ্বে করোনাভাইরাস মহামারিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী এই সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ।

শুক্রবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

তবে সরকারি তথ্য অনুযায়ী করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশে শুক্রবার (১১ মার্চ) পর্যন্ত ২৯ হাজার ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০২০ সালের বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়, এবং এর দশদিন পর ১৮ মার্চ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ার পর ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এর দুই বছর পরই চিকিৎসাবিষয়ক আন্তর্জাতিক জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে মৃত্যুর নতুন পরিসংখ্যান হাজির করা হলো। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা, মৃত্যুর কারণের তথ্য ঠিকমতো রেকর্ড না করা ও কিছু দেশে রাজনৈতিক বিবেচনায় করোনার মৃত্যু কম করে দেখানোয় এতদিন করোনার কারণে মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা পাওয়া যায়নি।

গবেষণায় করোনাভাইরাসে সরাসরি মৃত্যুর পাশাপাশি মহামারির কারণে হওয়া মৃত্যুকেও বিবেচনায় আনা হয়েছে। এর মধ্যে করোনা সংক্রমণের কারণে ফুসফুস বা হৃৎপিণ্ড অকেজো হয়ে মৃত্যু, করোনা আক্রান্ত হওয়া পরবর্তী স্বাস্থ্য জটিলতায় মৃত্যু এবং স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনাকেও বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

গবেষক দলের প্রধান ও ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিকস অ্যান্ড এভালুইয়েশনের পরিচালক ক্রিস মুরে বলেন, ‘এই মহামারি কল্পনার চেয়েও ভয়াবহ ছিল। করোনার কারণে বৈশ্বিক মৃত্যু প্রায় ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।’

গবেষক দলের মতে, মৃত্যুর সঠিক হিসাব ছাড়া করোনাভাইরাস মহামারির প্রভাব ঠিকমতো বুঝে ওঠা সম্ভব নয়। ভবিষ্যতের সংকট মোকাবিলায় রাষ্ট্রগুলোর উচিত করোনায় মৃত্যুর সঠিক পরিসংখ্যান রাখা।

তবে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গবেষণা পেপারটি আমি এখনও পড়িনি। এছাড়া মৃত্যুর সংখ্যার পার্থক্যটা অনেক। সরকার থেকে প্রত্যেক দিনই করোনা শনাক্ত ও মৃত্যুর তথ্য জানানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হিসেবে সরকারের তথ্যের বাইরে আমি যেতে পারব না। তবে একটি বিষয় বলতে চাই যদি এত অধিক সংখ্যক মানুষ গত দুই বছরে মারা যেত, তাহলে অবশ্যই কোনো না কোনো সাংবাদিক এ তথ্য তুলে নিয়ে আসতেন। অন্যান্য দেশের তুলনায় সরকার করোনা সংক্রমণ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখিয়েছে।’

ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণার জন্য মোট ৭৪টি দেশ ও অঞ্চলের ডাটা ব্যবহার করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসে সরকারি হিসাবের বাইরে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ভারতে। দেশটিতে করোনায় প্রায় ৪০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এরপরেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এই দেশ দুটিতে করোনায় প্রায় ১০ লাখ করে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত