নিজস্ব প্রতিবেদক

১৩ এপ্রিল, ২০২০ ১৬:০০

পুরো সিলেট বিভাগ এখন লকডাউন

বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সিলেট, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলা লকডাউন করার পর এবার লকডাউন করা হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা। এর মধ্য দিলে পুরো সিলেট বিভাগই লকডাউনের আওতাধীন হয়ে পড়লো।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক জরুরি সভা শেষে মৌলভীবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়। বিকেল ৫টা থেকে এ লকডাউন কার্যকর হবে।

মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক (ডিসি) নাজিয়া শিরিন বলেন, এখন থেকে মৌলভীবাজার থেকে কেউ অন্য জেলায় যেতে পারবেন না। আবার অন্য জেলা থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না। এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় যাতায়াত করা যাবে না।

এর আগে শনিবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে সিলেটের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সিলেট জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।

সিলেট জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে গঠিত সিলেট জেলা কমিটির সদস্যগণের মতামতের আলোকে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঝুঁকি মোকাবেলায় সিলেট জেলাকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) ঘোষণা করা হয়েছে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ১১ এপ্রিল শনিবার এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে হবিগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন।

গণবিজ্ঞপ্তিতে জেলা প্রশাসক উল্লেখ করেন সকল ধরনের গণপরিবহন, জনসমাগম ও জনগণের চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি পরিসেবা, চিকিৎসা সেবা, কৃষিপণ্য, খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ ও সংগ্রহ এর আওতা বহির্ভুত থাকবে।

রোববার (১২ এপ্রিল) বিকেলে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক জরুরি সভা শেষে সুনামগঞ্জ জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আব্দুল আহাদ।

তিনি বলেন, আজ থেকে জেলায় জনসাধারণের প্রবেশ ও প্রস্থান নিষিদ্ধ করা হলো। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত জাতীয় ও আঞ্চলিক সড়ক-মহাসড়ক ও নৌপথে অন্য জেলা থেকে কেউ সুনামগঞ্জ জেলায় প্রবেশ কিংবা জেলা থেকে অন্য জেলায় গমন করতে পারবেন না। জেলার অভ্যন্তরে আন্তঃউপজেলা যাতায়াতের ক্ষেত্রেও এই নিষেধাজ্ঞা বলবত থাকবে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে দেশে ২০ মার্চ সর্বপ্রথম মাদারীপুরের শিবচর পৌরসভা ও উপজেলার তিন ইউনিয়ন লকডাউন করা হয়। এর পরে দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা বা এলাকায় পর্যায়ক্রমে লকডাউন করা হয়।

যে সকল এলাকায় বা পাড়া-মহল্লায় করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হচ্ছেন সাথে সাথে সেই এলাকা বা উপজেলা এমনকি জেলাও লকডাউন করা হয়েছে।

আজ সোমবার মৌলভীবাজার জেলা লকডাউনের মধ্য দিয়ে সিলেট বিভাগের চার জেলাই লকডাউন হয়ে পড়লো। দেশে এই প্রথম পুরো বিভাগ লকডাউন হয়ে পড়লো।

সিলেট বিভাগের মধ্যে সিলেট জেলায় ৫ এপ্রিল রোববার প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হন। মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) রাত ১১টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স করে তাকে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে (সদর হাসপাতাল) নেওয়া হয়। পরের দিন ৮ এপ্রিল রাতে তাকে তার পরিবারের ইচ্ছায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। আজ ১৩ এপ্রিল তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

৫ এপ্রিল মৌলভীবাজারের রাজনগরে আকুয়া গ্রামে ৪ এপ্রিল করোনার উপসর্গ নিয়ে ৪৫ বছর বয়সী মারা যাওয়া ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। সিলেট বিভাগে এটিই একমাত্র করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার ঘটনা।

হবিগঞ্জে জেলায় ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম এক ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। আক্রান্ত ব্যক্তি সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ থেকে এলাকায় ফিরেছিলেন।

সর্বশেষ ১২ ও ১৩ এপ্রিল দুই দিনে সুনামগঞ্জে দুইজন নারীর দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে মোট ১৮২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এনিয়ে দেশে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হলো ৮০৩ জন। এছাড়া এই সময়ে আরও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৩৯ জনের মৃত্যু হলো। নতুন তিনজন সুস্থ হওয়ায় এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৪২ জনে।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস রোগী শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দেয় আইইডিসিআর। ১৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) মহামারী ঠেকাতে ঘরে থাকার মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। নতুন নির্দেশনায় সন্ধ্যা ৬টার পর বাইরে বের হতেও নিষেধ করা হয়েছে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে সরকার প্রথম দফায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব অফিস আদালত বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এরপর এটা বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। পরে তৃতীয় দফায় সেই ছুটি ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট কোভিড-১৯ রোগে বিশ্বব্যাপী মোট আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৮ লাখ ছাড়িয়েছে। সোমবার পর্যন্ত এক লাখ ১৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং চিকিৎসা নিয়ে নিয়মিত জীবনে ফিরে গেছেন ৪ লাখ ৩০ হাজার।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত