শাকিলা ববি

০৭ মে, ২০২০ ০১:৪১

উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকে, তবু উপসর্গহীনদের পরীক্ষা কেনো?

নভেল করোনাভাইরাস

এখন প্রায়ই শোনা যায় এমন- শনাক্ত হওয়া ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ ছিলো না। আবার প্রতিদিনই দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে মারা যাচ্ছেন অনেকে। প্রশ্ন ওঠেছে, উপসর্গ রয়েছে এমন অনেক লোকের যেখানে পরীক্ষা সম্ভব হচ্ছে না সেখানে উপসর্গবিহীনদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে কেন?

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, বাইরের এলাকা থেকে আসা ও আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি যাওয়া লোকদের উপসর্গ না থাকলেও করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করানো হচ্ছে। এছাড়া করোনা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও মাঠ পর্যায়ে কাজ করা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগের অনেক কর্মীর উপসর্গ ছাড়াও পরীক্ষা করানো হচ্ছে তাদের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য। অনেকক্ষেত্রে তাদের পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভও আসছে।

গত ২২ এপ্রিল সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক শিক্ষানবিস চিকিৎসকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। তবে তার শরীরে করোনাভাইরাসের কোনো লক্ষণই ছিলো না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর তার সংস্পর্শে আসা আর ১৬ শিক্ষানবিস চিকিৎসকের সোমবার করোনা পজিটিভ আসে। তাদেরও কোনো উপসর্গ ছিলো না।

এছাড়া ২২ এপ্রিল মৌলভীবাজার জেলার কুলাউয়া উপজেলার এক পুলিশ সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়। তার শরীরেও করোনার কোনো উপসর্গ ছিলো না।

তবে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষানবিস চিকিৎসকরা গাজীপুরসহ বিভিন্ন জেলা থেকে সিলেটে ও পুলিশ সদস্য নারায়ণগঞ্জ থেকে কুলাউড়ায় আসায় সতর্কতামূলকভাবে তাদের পরীক্ষা করানো হয়েছিলো। পরীক্ষায় করোনা শনাক্ত হয়।

অপরদিকে, গত ২২ মার্চ করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে সিলেটে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ওইদিন সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক প্রবাসী নারীর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর নমুনা পরীক্ষায় জানা যায় তিনি করোনা আক্রান্ত ছিলেন না। গত দেড়মাসে সিলেটে এরকম আরও অন্তত ৮টি মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। উপসর্গ থাকলেও মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যাদের করোনা পরীক্ষাই করানো হয়নি।

বিজ্ঞাপন



সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. শামস উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জে যাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে  বেশিরভাগই নারায়ণগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ ফেরত মানুষ। উপসর্গ নেই এমন অনেকের নমুনাও পরীক্ষা করতে পাঠানো হয়েছে। এবং স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিতদেরও নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে।

একই কথা জানিয়েছেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইশতিয়াক মামুনও। তিনি বলেন, করোনা পরীক্ষার জন্য উপসর্গ আছে এমন মানুষের যেমন নমুনা পাঠানো হয়েছে, তেমনি উপসর্গ ছাড়াও অনেকের নমুনা পাঠানো হয়। উপসর্গ ছাড়া যাদের নমুনা পাঠানো হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ফেরত মানুষ। স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মী ও মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করেন এমন মানুষজন।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান বলেন, সিলেটের বিভিন্ন জেলায় সিভিল সার্জন অফিসে সব নমুনা একত্র করে ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এখানে আমাদের পক্ষে কোনটা উপসর্গসহ ও কোনটি উপসর্গ ছাড়া নমুনা তা আলাদা করা সম্ভব নয়। ল্যাবে যে নমুনা পাঠানো হয় সেখানেও উপসর্গের ব্যাপারে কিছু উল্লেখ থাকে না।

উপসর্গ থাকা সকলকেই পরীক্ষায় আওতায় নিয়ে আসা উচিত জানিয়ে তিনি বলেন, পুরো বিভাগে এখন পর্যন্ত এক জায়গায়ই করোনা ভাইরাস পরীক্ষা হয়। প্রতিদিন এখানে ৮৩ থেকে ১৬৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। ল্যাব আরও বাড়ানো গেলে পরীক্ষার পরিমাণও বাড়তো। তখন উপসর্গ থাকা সবাইকেই পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হতো।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত