সিলেটটুডে ডেস্ক

০৯ মে, ২০২০ ০৩:৫৬

করোনার ঔষধ রেমডেসিভির দাম কত পড়বে বাংলাদেশে?

নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) চিকিৎসায় কার্যকারিতার নিরিখে এখন পর্যন্ত যে ওষুধটিকে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময় বলে মনে করা হচ্ছে, সেই 'রেমডেসিভির'-এর উৎপাদন বাংলাদেশে শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশের আটটি ফার্মাসিউটিকাল প্রতিষ্ঠানকে 'রেমডেসিভির' উৎপাদন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান। এই ওষুধের দাম কর পড়বে এনিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এদিকে, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর বলছে তারা রেমডেসিভিরের দাম নিয়ন্ত্রণে কোন হস্তক্ষেপ করবে না। খবর বিবিসি বাংলার।

বিজ্ঞাপন

মাহবুবুর রহমান জানান, বাংলাদেশের বেক্সিমকো, এসকায়েফ, ইনসেপ্টা, স্কয়ার, বিকন, হেলথকেয়ার, অ্যাকমি ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস রেমডেসিভি উৎপাদন করছে। এর মধ্যে বেক্সিমকো আর এসকায়েফের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। এই মাসের মধ্যেই হয়তো তারা তাদের পণ্য বাজারে ছাড়বে।

এসকায়েফ ফার্মাসিউটিকালসের মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, চলতি মাসের মধ্যেই তাদের প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত রেমডেসিভির বাজারে ছাড়া হবে।

এদিকে, এই ওষুধটি করোনা রোগীদের জন্যে কতখানি কার্যকর হবে এনিয়ে কেউ নিশ্চিত করেনি। ওষুধটি প্রথমে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। রেমডেসিভির ওষুধটির পেটেন্ট যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক বায়োফার্মাসিউটিকাল কোম্পানি গিলিয়াড সায়ন্সেস-এর।

ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় দেখা গেছে, নভেল করোনাভাইরাস সহ আরও কিছু ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে যেভাবে বংশবৃদ্ধি করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, সেই প্রক্রিয়াটি কিছুটা হলেও থামানোর সক্ষমতা রয়েছে এই ওষুধের।

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় এই ওষুধ কার্যকর হতে পারে, এমন গবেষণার তথ্য গিলিয়াড সায়ন্সেস প্রকাশ করার পর গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জরুরি ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এই ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। বলা হচ্ছে, এই ওষুধের প্রয়োগ বেশি অসুস্থ রোগীদের হাসপাতালে থাকার সময়কাল চার দিন পর্যন্ত কমাতে পারে।

রেমডেসিভিরের পেটেন্টের মালিকানা গিলিয়াড সায়ন্সেস-এর, অর্থাৎ শুধুমাত্র তাদেরই এই ওষুধ তৈরির অধিকার রয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় নাম থাকায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি অনুযায়ী এই ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে ওই নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের ওপর প্রযোজ্য হবে না।

ওষুধের দাম কত হবে- এনিয়ে এসকায়েফের মার্কেটিং ও সেলস বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম জানান, এই ওষুধটি ইনজেকশন প্রক্রিয়ায়, অর্থাৎ রোগীর শরীরে সুঁইয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করাতে হয়। যেসব রোগীদের অবস্থা গুরুতর, তাদের ব্যবহারের জন্য মূলত এই ওষুধ। পাঁচ দিন ও দশ দিন - এই দুই ধরণের মেয়াদে বা কোর্সে ওষুধটি প্রয়োগ করার অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কর্তৃপক্ষ।

মুজাহিদুল ইসলাম জানান, পাঁচ দিনের মধ্যে যাদের রোগ সারবে না, তাদের ক্ষেত্রে দশ দিনের কোর্সের পরামর্শ দেয়া হবে। যারা পাঁচ দিন ধরে চিকিৎসা নেবেন তাদের জন্য রেমডেসিভিরের ৬টি ভায়াল, আর দশ দিনের চিকিৎসা নেয়া ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ১১টি ভায়াল প্রয়োজন হবে বলে জানান তিনি।

মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, "প্রতিটি ভায়ালের দাম হবে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে।" অর্থাৎ যারা পাঁচদিন চিকিৎসা নেবেন তাদের রেমডেসিভির ওষুধ কিনতে খরচ হবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। আর যারা দশ দিন চিকিৎসা নেবেন তাদের খরচ পড়বে ৬০ হাজার টাকার মতো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজাও জানিয়েছিলেন যে তাদের প্রতিষ্ঠানের তৈরি করা রেমডেসিভিরের প্রতিটি ভায়ালের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা হবে। অর্থাৎ কোভিড-১৯ চিকিৎসায় রেমডেসিভির ব্যবহার করতে হলে বেশ বড় অংকের অর্থ খরচ করতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, শুরুর দিকে শুধু সরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ওষুধ সরবরাহ করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে বেসরকারি পর্যায়ে বাজারজাতকরণের অনুমোদন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

"যেহেতু বিভিন্ন জায়গায় এই ওষুধের প্রয়োজন হবে, তাই সীমিত পরিসরে এর যোগান দিলে হয়তো অনেক মানুষই ওষুধ পাবেন না। তাই আমরা এটি বাজারজাতকরণের অনুমোদন দিচ্ছি।"

তবে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এই ওষুধ যেন বিক্রি করা না হয়, এই শর্তে ওষুধ বাজারজাত করা হবে বলে জানান তিনি।

"সরকারিভাবে যেন এই ওষুধের বিপণন করা হয়, আমরা সেই পরামর্শ দিয়েছি। তবে তার মানে এই নয় যে এটি বেসরকারিভাবে দেয়া যাবে না। একমাত্র শর্ত হলো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এটি ব্যবহার করা যাবে না।"

মাহবুবুর রহমান বলেন, "নিয়ন্ত্রিতভাবে এই ওষুধ বাজারে ছাড়া হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও এটি সরবরাহ করতে পারবে। তবে ফার্মেসিতে খুচরো কেনার জন্য সেভাবে পাওয়া যাবে না এই ওষুধ।"

আপনার মন্তব্য

আলোচিত