সিলেটটুডে ডেস্ক

১৭ মে, ২০২০ ১৯:০১

করোনা সংক্রমণ: এশিয়ার নতুন হটস্পট কি ভারত?

কঠোরভাবে লকডাউন পালনের পরও ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কভিড-১৯ রোগী সংখ্যা। এমনকি জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশটি নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় ছাড়িয়ে গেছে সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীনকেও। অবশ্য ভারতে প্রাণহানি তুলনামূলকভাবে এখনো কম। কিন্তু সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এশিয়ার নতুন হটস্পটে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে তারা। খবর ব্লুমবার্গ ও রয়টার্স।

সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৬ হাজার ছুঁই ছুঁই। চীনে এ সংখ্যা প্রায় ৮৩ হাজার। সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪ লাখ ৭০ হাজার। ২ লাখ ৭২ হাজার সংক্রমণ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। ভারত তালিকার ১১তম অবস্থানে রয়েছে। গতকাল একদিনেই দেশটিতে ৩ হাজার ৯৬৭ জন নতুন কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ভৌগোলিকভাবে রাশিয়ার অবস্থান এশিয়া ও ইউরোপ দুই মহাদেশেই। একই কথা প্রযোজ্য তুরস্কের ক্ষেত্রেও। এ কারণে তাদের বাদ দিলে ইরানের পর এশিয়ায় নভেল করোনাভাইরাসের সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ এখন ভারতেই। ইরানে সংক্রমণের গ্রাফ এখন নিম্নমুখী। এজন্যই ভারতকে এশিয়ায় নভেল করোনাভাইরাসের নতুন হটস্পট ভাবা হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন



করোনা প্রতিরোধে ভারত সবচেয়ে কঠোর লকডাউন পালন করছে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। তার পরও ভাইরাসটির সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। এ অবস্থায় বিভিন্ন রাজ্যের সরকার, ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি বিধিনিষেধ তুলে নেয়ার আহ্বান জানালেও কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউনের মেয়াদ আরো বাড়াতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

অবশ্য সংক্রমণ বাড়লেও ভারতে কভিড-১৯ রোগীর মৃত্যুর ঘটনা তুলনামূলক কম। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল সকাল পর্যন্ত প্রাণঘাতী রোগটিতে মৃত্যু হয়েছে ২ হাজার ৭৫২ জনের। চীনে মৃতের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৩৩। আক্রান্তদের বেশির ভাগই উপসর্গবিহীন অথবা হালকা উপসর্গ থাকায় ভারতে মৃত্যুর ঘটনা তুলনামূলক কম বলে মনে করা হচ্ছে।

আক্রান্তের সংখ্যায় গতকাল চীন ছাড়াও পেরুকে টপকেছে ভারত। দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮৪ হাজার ৪৯৫ জন। আর মারা গেছে ২ হাজার ৩৯২ জন।

ভারতের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন অবশ্য করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন। তিনি বলেছেন, ‘লকডাউনের কারণে পরিস্থিতির সুস্পষ্ট উন্নতি দেখা যাচ্ছে। লকডাউনের মধ্যে সংক্রমণ শনাক্ত, তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনকে শনাক্ত, ব্যবস্থাপনা উন্নত করাসহ জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ত্বরিত পদক্ষেপ নেয়া গেছে।’

ভারতে এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের এক-তৃতীয়াংশ শনাক্ত হয়েছে পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রে। এছাড়া তামিলনাডু, গুজরাট ও দিল্লিতেও উল্লেখযোগ্যসংখ্যক কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন



ভারতে কভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলো প্রস্তুতিও নিয়ে রাখছে। এজন্য লাখ লাখ আইসোলেশন বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর অসুস্থদের চিকিৎসার জন্য হাজার হাজার আইসিইউ বেড প্রস্তুত রেখেছে কর্তৃপক্ষ।

তবে দেশটিকে একটি জায়গায় আরো উন্নতি করতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে করোনার পরীক্ষা করা হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। ফলে তাদের মতে, দেশটিতে কভিড-১৯ রোগী শনাক্তের যে সংখ্যা পাওয়া যাচ্ছে, বাস্তবে আক্রান্ত হচ্ছে তারচেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং মহামারী মোকাবেলায় দেশটির প্রকৃত সক্ষমতা বিচারের জন্য আরো বেশি পরীক্ষা করতে হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত