শাহ শরীফ উদ্দিন

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০৫

আজ ভোট: উৎসবের সাথে আছে উদ্বেগও

সকল অপেক্ষা শেষ। আজ ভোট। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে আজ জনগন নির্ধারিত করবে আগামী দিনে কারা দেশ পরিচালনা করবে।

নির্বাচন মানেই এখানে উৎসবের আমেজ। তবে এবার উৎসবের সাথে আছে উদ্বেগ আর নানা শঙ্কাও। নির্বাচনে সংঘাত আর সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির শঙ্কায় রয়েছেন অনেকে। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখ পরিবেশে ভোটের সকল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
 
সিলেটের ৬টি আসনে প্রার্থী সংখ্যা ৪৪ জন। তাদের মধ্যে আজ ৬ জনকে বেছে নেবেন সিলেটের ২২ লাখ ৫২ হাজার ৭৬৪জন ভোটার। আজ ভোটাররা তাদের আগামী দিনের আইন প্রণেতা নির্বাচন করবেন।

ইতোমধ্যে সিলেটে ভোটের সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে পৌছানো হয়েছে ভোটের সরজ্ঞামাদি। এবার শুধু ভোটগ্রহণের অপক্ষো। আজ সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত একটানা চলবে ভোটগ্রহণ।

নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে যেমন ছিলো উৎসবের আমেজ তেমনই শেষের দিকে বড় দুই দলের প্রার্থীদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, মামলা, হামলা আর পুলিশের ধরপাকড়ে জনমনে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা। শেষ পর্যন্ত ভোটের পরিবেশ কি হবে এ নিয়েও আছে শঙ্কা। তবে নির্বাচনে সকল রকম প্রশাসনিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে, উৎসবমুখর পরিবেশে সিলেট জেলার সকল আসনে ভোটগ্রহণ হবে, এমনটাই জানালেন সিলেট জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী এমদাদুল ইসলাম।

এদিকে শনিবার (২৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে নগরীর সকল কেন্দ্রে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে এবং অন্যান্য আসনে উপজেলা কার্যালয় থেকে নির্বাচনের সকল সরঞ্জামাদি পাঠানো হয়েছে।  পুলিশ, আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে এ সকল সরঞ্জাম প্রতিটি কেন্দ্রে ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) রাতে নির্বাচনী সরঞ্জাম সারাদেশের প্রতিটি উপজেলায় পৌঁছানো হয়। প্রতি কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিশ স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে থাকবে। প্রতি উপজেলায় ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।

আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন গুরুত্বপূর্ণ ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সকল কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা জানিয়ে তিনি বলেন, মফস্বলের সাধারণ সকল কেন্দ্রে ১৪ জন, পৌর এলাকায় সাধারণের ১৫, নগরীর সাধারন কেন্দ্রে ১৬ জন করে পুলিশ থাকবে। এছাড়াও সকল গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ১ জন করে ও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে ২ জন করে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এদিকে ভোটে সিলেট জেলায় নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা ৪৪, নিয়োজিত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১৪ জন। সেনাবাহিনীর ১৪টি ইউনিট সিলেটে মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া বিজিবি ২৯.৫ প্লাটুন বিজিবিও নির্বাচনের মাঠে রয়েছে। নির্বাচনে মোট ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন ১৫ হাজার ২শত ৫৪ জন। এছাড়া ১৫ হাজার ২৫ জন ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা রিজার্ভে আছেন ।

নির্বাচন কমিশন ভোট উৎসবের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করলেও জনমনে আছে শঙ্কা। প্রচারণার শেষ দিকে এসে সিলেট জেলার সকল আসনে বিচ্ছিন্ন সংঘাত আর পুলিশের ধরপাকড়ে পরিস্থিতি অনেকাংশে উত্তপ্ত হয়ে ওঠেছিলো। এতে নির্বাচনের দিন ভোটের পরিবেশ নিয়ে রয়েছে উৎকণ্ঠা। নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা যাবে কি না এ নিয়েও আছে শঙ্কা। তবে ভোটের পরিবেশ এখনো ভালো আছে এবং মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন বলে মনে করছেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা আর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিসে হামলা, প্রচার গাড়িতে হামলা, এসব ঘটনা ছাড়া এখনো সামগ্রিক ভাবে সিলেট জেলায় ভোটের পরিবেশ সন্তোষজনক। তিনি আরো বলেন, আশা করি ৩০ তারিখ মানুষ ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে নৌকা মার্কায় তাদের রায় প্রদান করে পুনরায় শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখবেন।

এদিকে ভোটের পরিবেশ নিয়ে অনেকটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ। তিনি বলেন, আমাদের এজেন্টদের ঘরে ঘরে তল্লাশি করছে পুলিশ। তাদেরকে ঘরে না পেয়ে তাদের বৃদ্ধ বাবা-মাকে শাসানো হচ্ছে। ২ তারিখ পর্যন্ত ঘরে না ফেরার হুমকিও দেয়া হচ্ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।

জেলা বিএনপির এ সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ তুলে আরো বলেন, ভোটের বর্তমান যে পরিবেশ তাতে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে কি না এ নিয়েও সন্দেহ আছে। তবে সামান্যতম সুষ্ঠু ভোট হলে বিপুল ভোটে ধানের শীষের বিজয় হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত