সাইফুর রহমান মিশু

১৩ মে, ২০১৬ ২৩:৩১

শুভাকাঙ্ক্ষীদের জ্ঞাতার্থে...

চট্টগ্রামে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা প্রশ্রয়ে মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জেলুর রহমানের জমি দখল করতে সে পরিবারের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাইফুর রহমান মিশু ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। পাঠকদের জন্যে মিশুর ফেসবুক স্ট্যাটাস হুবহু তুলে ধরা হলো

শুভাকাঙ্ক্ষীরা যারা জানতে চেয়েছেন তাদের জ্ঞাতার্থে (সংক্ষেপে)
১) বিগত প্রায় চার বছরের বেশী সময় ধরে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলতাফ হোসেন বাচ্চুর বাড়ীর দারোয়ান আবু সিদ্দিক, যাকে এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবেই সবাই জানে, একাধিক হত্যা, ধর্ষণের চেষ্টা মামলার আসামী, হত্যা মামলায় দীর্ঘসময় কারাভুক্ত আমার বাবার কেনা জমির পাশে তার মায়ের জমিতে বসবাস করার সুবাদে আমাদের ছোট ঘরসহ জমি দখল করার চেষ্টা করে আসছিল।

২) গত ২০১৪ সালের আগস্ট মাসে আমি আমার ক্যান্সারাক্রান্ত মা-কে দেখার জন্য দেশে গেলে সে আমাকে হুমকি দেয় আমরা কেউ উক্ত জমিতে কোন রকম অধিকার দাবী করলে সে প্রাণে মেরে ফেলবে। এমন অবস্থায় আমি স্থানীয় থানায় প্রায় ৬ ঘণ্টা বসে থেকে একটি সাধারণ ডায়েরী করি। পরদিন সন্ধ্যায় আমার ফিরতি ফ্লাইট ছিল, এবং সেদিন বিকেলে উক্ত জমির অদূরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আমি আমার এক বাল্য বন্ধুর সাথে কথা বলা অবস্থায় সেই সন্ত্রাসী অতর্কিতে আমার উপর হামলা করে মারধর করে। সেই হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হই আমার সেই বাল্যবন্ধু, আমার ছোট বোন এবং আমি। তাৎক্ষনিক আমি তৎকালীন চট্টগ্রামের ভারপ্রাপ্ত জেলা জজ যিনি আমাদের পরিবারের সদস্য তাকে জানালে স্থানীয় থানা থেকে পুলিশ এসে আমাদের উভয় পক্ষকে থানায় যেতে অনুরোধ করে। আমি সাথে সাথে থানায় গেলেও অপরপক্ষ প্রায় দুই ঘণ্টা পরে থানায় আসে। এবং ইতিমধ্যে তার নেতা থানায় জানিয়ে দেয় থানা থেকে যেন কোন রকম ব্যবস্থা গ্রহণ না করে। ফলাফল কোন রকম ন্যায়বিচার ছাড়াই আমাকে রাতে ফ্লাইটে আহত অবস্থায় ফিরতে হয়।

৩) পরদিন কিছু পুলিশ সদস্য আমার বাসায় এসে আমার বোনকে থানায় নিয়ে যেতে চাইলে আমার বোন উক্ত জজ সাহেবকে জানালে তারা আর সেদিন থানায় নেয়নি। তবে পুলিশের একজন কর্মকর্তা শাসিয়ে যায় যেন আমরা এই ব্যাপারে আর কোন রকম বাড়াবাড়ি না করি।

৪) এর কিছুদিন পর আমার বোনের বর দেশে গেলে সে সহ আমাদের উক্ত জমিতে আমার বোন গেলে, উক্ত সন্ত্রাসী দলবল নিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে তাদেরকে। আমার বোন সেবারও থানায় যেয়ে কোন রকম প্রতিকার না পেয়ে আদালতে যেয়ে মামলা দায়ের করে। যেই মামলায় আবু সিদ্দিকের নামে গ্রেপ্তারী পরওয়ানা জারি হবার পরেও স্থানীয় থানা থেকে কোন রকম পদক্ষেপ না নিয়ে তাকে পলাতক দেখানো হয়। থানায় একাধিকবার যোগাযোগ করলে তারা জানায় আসামীকে তারা ঘর থেকে ছাড়া গ্রেপ্তার করার অধিকার নেই। অথচ সে প্রকাশ্যের এলাকাই ঘুরে বেড়ায় এবং আশ পাশের লোকজনকে হুমকি দেয় কেউ যেন কোন রকম সাক্ষী না দেয় তার বিরুদ্ধে। এমন অবস্থায় সে জামিন নিয়ে নেয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। অতঃপর সে আমার বাবাকে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় প্রাণ নাশের। আমার বাবা হৃদরোগের রোগী সেদিন হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। উল্লেখ তিনি ৭১ এর মুজিব বাহিনীর একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা।

আরও পড়ুন : মুক্তিযোদ্ধার জমি দখলে নিতে আ. লীগ নেতার প্রশ্রয়ে হামলা

৫) তারপর আদালতে জামিন না মঞ্জুরের আবেদন করলে তা গৃহীত হয় এবং উক্ত আবু সিদ্দিক গ্রেপ্তার হয়ে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সে বেরিয়ে এসে দ্বিগুণ বেপরোয়া হয়ে উঠে। এবং আমার বোনের স্বামীকে রাস্তায় পেয়ে প্রচণ্ড মারধর করে। আমাদের ঘরে বাস করা আমার চাচাতো বোনকে শ্লীলতাহানি করে। আমিসহ একাধিক সাংবাদিক এবং পরিচিত লোকজন এই ব্যাপারে আলতাফ হোসেন বাচ্চুর সাথে যোগাযোগ করলে সে সবকিছু অস্বীকার করে বলে এমন কিছুই ঘটেনি। অতঃপর আমি নিজের পরিচয় দেয়ার পরে সে স্বীকার করতে বাধ্য হয়, এবং বলে শুধু আমার গায়ে হাত তোলার ঘটনা সত্যি বাকী সব মিথ্যা।

৬) দীর্ঘদিন নানা জায়গায় যোগাযোগ এবং তদবিরের ফলে একসময় বাচ্চু সাহেব আমাদের পরিবারের সদস্যকে আমাদের সকল কাগজপত্র নিয়ে তার কার্যালয়ে দেখা করতে বলেন। আমার বাবা-মা এবং বোন সকল কাগজ পত্র নিয়ে তার সাথে দেখা করার পরে, অপর পক্ষ কোন রকম কাগজ পত্র দেখাতে পারেনি। বাচ্চু সাহেবের ভাষ্য ওয়ারিশ সম্পত্তির কোন কাগজ/দলিল হয় না। এরপর বাচ্চু সাহেব, স্থানীয় কমিশনারের মাধ্যমে দুই পক্ষের সব অভিযোগ শুনে আমাদের চাপ দেন আবু সিদ্দিককে আড়াই লক্ষ টাকা দিতে। কারণ জানতে চাইলে বলেন, মামলায় তার অনেক খরচ হয়েছে সেসব আমাদের দিতে হবে। এবং আমাদের সকল মামলা প্রত্যাহার করে নিতে বলেন। অপরদিকে আবু সিদ্দিক আদালতে আমাদের দলিল বাতিলের একটি মামলা করে, সেই মামলা বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেয়। বাচ্চু সাহেবের এই বিচারের (২৫০০০০) আড়াই লক্ষ টাকা দাবী করাটা আমাদের বিবেচনায় পরোক্ষ চাঁদাবাজি মনে হওয়াতে আমরা তা দিতে অসম্মতি জানাই এবং আমরা জানিয়ে দেই যেহেতু আবু সিদ্দিক আমাদের দলিল বাতিল চেয়ে তার দাবী জানিয়ে আদালতে মামলা করেছে, আমরা সেই মামলা ফেস করবো। যদি আদালতের মাধ্যমে সে জমি পেয়ে যায়, আমরা সকল অধিকার ছেড়ে তাকে বুঝিয়ে দিয়ে আসবো। আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আমাদের কোন কথা থাকবে না। তবে আদালত আমাদের পক্ষে রায় দিলে আমরা আমাদের ন্যায় পাওনা ছাড় দিবো না। আদালতে মামলা চলাকালীন সময়ে কেউ কাউকে কোন রকম বিরক্ত করবে না, এমন কথা হয়েছিল।

৭) এর মধ্যে আমার মা এবং বোন যতবার আমাদের জমিতে গেছে ততবার প্রচণ্ড অসদাচরণ করেছে এবং নানা রকম প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে আবু সিদ্দিক। তার ভাষ্যমতে আলতাফ হোসেন বাচ্চু তাকে ছেলে ডেকেছে তাই কারো কোন ক্ষমতা নেই তার কিছু করার।

৮) গতকাল সকালে আমার বোন যার দুইটি ছোট কন্যাশিশু রয়েছে এবং দুইবারের সিজারের রোগী আমার বোন আমাদের উক্ত ঘরে বিদ্যুৎ বিল আনতে গেলে, আবু সিদ্দিক এবং তার স্ত্রী আমার বোনকে মাটিতে ফেলে প্রচণ্ড মারধর করে রক্তাক্ত করে আমাদের জমির সীমানার ভিতরেই। ইতিপূর্বে আমার আপলোড করা ভিডিওগুলোর মধ্যে একটিতে দেখা যায় আবু সিদ্দিক আশ পাশের লোকজনকে হুমকি দিচ্ছে তারা যেন এই ব্যাপারে কোথাও সাক্ষ্য না দেয় সেই জন্য। প্রচণ্ড আহত অবস্থায় আমার বোন পাশের পুলিশ ফাঁড়িতে গেলে উক্ত ফাঁড়ির একজন কনস্টেবল আমার বোনকে ধরে বসিয়ে থানায় খবর দিলে, থানা থেকে কোন ফোর্স পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। এই অবস্থায়, একজন সিএনজি চালক আমার বোনকে তার সিএনজিতে করে থানায় নিয়ে গেলে থানার দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পাঠায়। উল্লেখ উক্ত সিএনজি চালক ব্যতীত সে সময় পর্যন্ত আমার বোনের পাশে আর কেউ ছিল না।

৯) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নেয়াকালীন সময়ে দুজন ব্যক্তি উক্ত স্থানে পৌঁছান। একজন আমার এক বোন অন্যজন একজন সাংবাদিক জনাব আলম দিদার। আপনাদের দুইজনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।

১০) হাসপাতাল থেকে আবারো থানায় ফেরত আনার পরে তারা ঘটনাস্থলে তদন্ত করার কয়েকজন পুলিশ সদস্য পাঠালে তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে যায়। এবং সর্বশেষ আপডেট হলো, থানায় একটি মামলা করা হয়েছে এবং আমাদের পরিবারকে জানানো হয়েছে তাদেরকে উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে এই ব্যাপারে কোন রকম পদক্ষেপ না নেয়ার। কতিপয় নেতা থানায় জানিয়েছে স্থানীয় সমস্যা স্থানীয়ভাবে সমাধান করার জন্য। উল্লেখ বিগত চার বছর একমাত্র চাঁদা দেয়ার চাপ এবং একাধিকবার হতাহত হওয়া ব্যতীত কোন স্থানীয় সমাধান পাইনি আমরা।

আরও পড়ুন : প্রাণনাশের হুমকি আর নিজ বাড়িতে নিরাপত্তাহীন এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবার

১১) আলতাফ হোসেন বাচ্চু সাহেবের সাথে এই ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, "সে একটি দিয়েছে, আপনারা পাঁচটি দেন, তাইলেই জমি আপনাদের।"

সর্বশেষ বলতে চাই, আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেননি। যেই মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নেতা সেজে এমন অন্যায়-অবিচার করতে পারে সেই মুক্তিযুদ্ধ আমার বাবা করেননি। আমি মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির বলে পরিচয় দিতে আর রাজি নই। বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে কাজ করেছি প্রচুর। সবকিছুর প্রতিদান পেয়ে গেছি। তবে সেই কাজ কর্মের সুফল ভোগ করে ভোট চাওয়া নেতারা আমার বাংলাদেশের নেতা হয়ে থাকলে এই দেশ আমার বাবার নয়, আমার নয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত