সিলেটটুডে ডেস্ক

২১ জুলাই, ২০১৬ ০০:৫৩

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে চট্টগ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর বারবার চালানো নির্যাতনের প্রতিকার চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে সে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জায়গা দখল করতে বারবার আক্রমণের অভিযোগ আনা হয়েছে।   

বুধবার (২০ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জেলুর রহমানের মেয়ে ফারজানা কুলসুমা। ফারজানা কয়েকদিন আগে হামলার শিকার হয়ে হাসপাতালেও চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বিষয়টি নিয়ে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতারা ‘নির্বিকার’ বলেও অভিযোগ তাঁর।

সংবাদ সম্মেলনে ফারজানা কুলসুমা বলেন, আমার বাবা ১৯৯৬ সালে আগ্রাবাদ আবিদর পাড়ায় স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল আজিজের কাছ থেকে একটি ছোট জমি ক্রয় করেন, যাতে পরবর্তীতে আমরা একটি টিনশেড ঘর করে ভাড়া দেই। বিগত প্রায় কয়েক বছর যাবত আমাদের ভাড়াটিয়াকে পার্শ্ববর্তী জমিতে বসবাসরত আবু সিদ্দিক নানা রকম ভয় ভীতি দেখিয়ে ভাড়াটিয়াদের বাসা ত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা করে আসছিলো।

তিনি স্থানীয় আবু সিদ্দিক বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বলেন,গত ১৭ জুলাই ২০১৬ আনুমানিক সন্ধ্যা ৭টার দিকে আবু সিদ্দিক তার দলবল নিয়ে আমাদের ভাড়াটিয়া পরিবারকে ঘর থেকে জোরপূর্বক বের করে দিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এই ব্যাপারে স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করলে তারা জানায় এই ব্যাপারে তাদের করণীয় কিছু নেই।

আবু সিদ্দিকের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ এনে ফারজানা বলেন, ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে আমার বড় ভাই এবং আমি উক্ত জমিতে গেলে আবু সিদ্দিক আমাদের ঢুকতে বাধা দেয়। আমরা স্থানীয় থানায় এই ব্যাপারে জানালে, একটি সাধারণ ডায়েরী হয় এবং পরদিন থানা থেকে আমাদের জানানো হয় আমরা নির্বিঘ্নে আমাদের জমিতে যেতে পারবো। পরদিন বিকেলে আমরা দুই ভাইবোন থানা থেকে সরাসরি আমাদের জমিতে গেলে আবু সিদ্দিক তার দলবল নিয়ে চড়াও হয়ে মারধর করে। পরবর্তীতে থানায় মামলা না নিলে আমরা আদালতে মামলা করি, এরপর সে জামিন নিয়ে আবারও নানা রকম হুমকি ধমকি দিতে থাকে আমাদের পরিবারকে।

"অতঃপর তার জামিন বাতিল হলে সে গ্রেপ্তার হয়। এ সময় আমরা আমাদের ঘরটি পুনরায় ভাড়া দেই। কিছুদিন পরে আবু সিদ্দিক জামিনে বের হয়ে আমাদের ভাড়াটিয়া মহিলার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এই ব্যাপারে নারী নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে আদালতে, যা বিচারাধীন আছে। উক্ত জামিন অযোগ্য মামলায়ও স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সে জামিন নেয় এবং আমি ও আমার স্বামী খালেদ মাহমুদকে রাস্তায় পেয়ে আক্রমণ করে প্রচণ্ড মারধর করে। আমরা স্থানীয় থানায় জানিয়ে কোন রকম প্রতিকার পাইনি।"

ফারজানা আরও জানান, পরবর্তীতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে আমরা স্থানীয়ভাবে ব্যাপারটি সমাধানের চেষ্টা করি, যাতে আবু সিদ্দিক পরোক্ষভাবে দুই লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে এবং শর্ত দেয় তার পছন্দমত ভাড়াটিয়াই শুধুমাত্র আমাদের ঘরে থাকতে পারবে। এমন অযৌক্তিক দাবী আমরা প্রত্যাখ্যান করি এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা আমাদের ঘর আমাদের বুঝিয়ে দেন। তখন থেকে আমাদের ঘরে আমাদের ভাড়াটিয়া বসবাস করে আসছিল।

এমন অবস্থায় একদিন বিদ্যুৎ বিল দিতে পিডিবি’র লোক আসলে সে আমাদের ভাড়াটিয়ার কাছে তা দিতে বাধা দেয়। আমি তা জানতে পেরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে উক্ত স্থানে হাজির হই। আমাকে দেখামাত্রই আবু সিদ্দিক এবং তার স্ত্রী আমার উপর হামলা করে এবং আমাকে রক্তাক্ত করে। ঘটনাস্থল থেকে আমি কোন মতে প্রাণে বেঁচে পালিয়ে পাশে পুলিশ ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়ার পরে ফাঁড়ি থেকে থানায় যোগাযোগ করে ফোর্স পাঠাতে অনুরোধ করলেও কোন ফোর্স পাঠানো হয়নি। ফাঁড়ির একজন পুলিশ ভাইয়ের সহায়তায় একটি সিএনজি নিয়ে আমি থানায় গেলে আমার অবস্থা দেখে আমাকে সরাসরি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। মেডিকেল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে আমি থানায় গেলে তারা একটি অভিযোগ গ্রহণ করে। উক্ত ঘটনার দেশের অনেকগুলো পত্রিকায় সে সময় প্রকাশিত হয়, যোগ করেন ফারজানা।

তিনি আরও জানান, পরদিন আমার অবস্থা আশংকাজনক দেখে আমার পরিবার আমাকে আবারও মেডিকেলে ভর্তি করায় এবং আমি দুইদিন চিকিৎসা নেয়ার পরে আমার দুই কন্যা সন্তানের দেখাশোনার কেউ ছিলনা বলে বাসায় ফিরে এসে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিই।

উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে দায়েরকৃত মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও পরদিনই সে জামিনে বেরিয়ে আসে এবং সরাসরি আমার পরিবারকে হুমকি দিতে থাকে। এমন অবস্থায় আমার পরিবার নিতান্তই অসহায় হয়ে বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও স্থানীয় প্রশাসন যে কোন রকমের পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করে।

অসুস্থ মা ভারতে চিকিৎসাধীন এবং ছোট ভাই ও স্বামী বিদেশ থাকেন জানিয়ে ফারজানা বলেন, পরিবারের ‘অসহায়ত্বের’ সুযোগে আবু সিদ্দিক সরকার দলীয় নেতাদের ‘নাম ভাঙ্গিয়ে’ এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত