এস এম নাদিম মাহমুদ

০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ১৪:৩৮

প্রবাসী ও একজন কবি

কবি আবু হাসান শাহরিয়ার, ফেসবুক থেকে নেওয়া ছবি। প্রবাসীদের নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ফেসবুকজুড়ে সমালোচনা চলছে তাঁর

এইবছর বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন কবি আবু হাসান শাহরিয়ার। প্রায় ১৩ টি কাব্যগ্রন্থ, একটি ছোটগল্প, ৮ টি প্রবন্ধ লিখেছেন তিনি। আবু হাসান শাহরিয়ার দীর্ঘদিন থেকেই আমার ফেইসবুকে বন্ধু ছিলেন। আমি কোন সাহিত্যিক নই তাই তার সাহিত্য নিয়ে সমালোচনা করার কোন যোগ্যতা আমার নেই।

তবে গত কয়েকঘণ্টা ধরে ফেইসবুকে প্রবাসী বাঙালিদের ইতর, বজ্জাতে যে বিশেষণে তিনি ভূষিত করেছেন, তা আমি তার কাছ থেকে কখনোই আশা করিনি। আমি ধরে নিচ্ছি, কোন প্রবাসীর সাথে তার হয়তো মনোমালিন্য হয়েছে তবে যেভাবে তিনি প্রবাসীদের একাধারে আজে বাজে কথা বলছেন, তাতে নিজেকে বড়ই অপরাধী মনে হচ্ছে। শাহরিয়ার ভাইয়ের ধারনা যে যারা প্রবাসী তারা মূলত অর্থের কাছে অন্যের প্রভুত্বকে বরণ করে নেয়। উনি বলেছেন প্রবাসীরা মিসকিন। জুতা-পালিশ করাকে উনি কোন কর্ম মনে করেন না বরং তার স্ট্যাটাসে স্পষ্টত জুতা পালিশের কাজকে ছোট জাতের কাজ মনে করা হয়েছে। উনি হয়তো জানেনে না দেশের বাহিরে নিজেদের জুতা নিজেদেরই পালিশ করতে হয়। দেশের একজন কবির কাছে থেকে এতো বড় কথা কখনো আমরা প্রত্যাশা করি না।

উনি বলেছেন, যারা দেশে ফিরে আসার স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে গেছেন তাদের তিনি ইতর-বজ্জাত ভাবেন না। কথাটির সাথেও আমি একমত পোষণ করি না। তিনি যদি সেটাই মনে করেন, তাহলে সদ্য প্রয়াত শহীদ কাদরীকে তিনি ইতর ভাবেন কি? উনি তো আর দেশে ফিরেনি? ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটনও কি বজ্জাত ইতর? দেশে থাকলেই দেশপ্রেম থাকবে আর দেশের বাহিরে থাকলে দেশ প্রেম থাকবে না এ কেমন কথা হাসান ভাই?

উনি বলেছেন, ‘স্বদেশত্যাগীরা সামান্যই রেমিটেন্স পাঠায় তার চেয়ে বেশি আসে রপ্তানি খাতে। উনার কথা সত্য, কোন দেশের আয়ের অন্যতম অংশ হলো রপ্তানি খাত। রেমিটেন্স আর রপ্তানি আয়ে যে পার্থক্য আছে তা মনে শাহরিয়ার ভাই ভুলে গেছেন। ষোল কোটি মানুষের দেশে মাত্র ৮৬ লাখ বিদেশে থাকেন যারা দেশের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখে আমাদের প্রবাসীদের পাঠানো এই বৈদেশিক মুদ্রা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক হাজার ২৭৭ কোটি (১২.৭৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স পাঠানোর খবর গণমাধ্যমে এসেছে। সর্বশেষ গত অগাস্ট মাসের ২৫ দিনে মোট ১০৪ কোটি ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।

শাহরিয়ার ভাই জানেন কি না জানি না, দেশের বাহিরে যারা থাকে তারা শাহরিয়ার ভাইয়ের মতো ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার সময়টুকু পান না। সকালের সূর্য উঠা থেকে রাত অবধি কাজের মধ্যেই পরে থাকে। দুই পয়সা ইনকামের জন্য, পরিবারের মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য এরা রাতের ঘুমের পরিবর্তে ‘ওভারডিউটি’ করতেও ভুলে না। যেসময় টুকু শাহরিয়ার ভাই তার বন্ধুদের সাথে চা পানে আড্ডা দেয়ার সময় বের করেন, সেই সময়টুকু প্রবাসীরা কাজের মধ্যে দিয়ে ব্যয় করে। এরা ঈদের-পূজার আনন্দ বুঝতে পারে না। এদের বেঁচে থাকার অবলম্বন একমাত্র আশা।

শাহরিয়ার ভাই যদি মনে করেন, প্রবাসীরা কেবল অর্থ উপার্জনের জন্য দেশের বাহিরে কুকুর-বিড়াল হয়েছে তাহলে একটু ভুলই করবেন মনে হয়। অর্থ উপার্জনই যদি মূল লক্ষ্য হয় তাহলে বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ সিদ্দিকী, রুশনারারা ব্রিটেনে পার্লামেন্টে নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালিদের সম্মান উপরে তুলে দিতো না। মনিবদের যদি পূজায় করতো তাহলে বিশ্বব্যাপী জ্যোতির্বিজ্ঞান, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, পদার্থবিজ্ঞান ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে নাসার রুবাব খান, সেলিম শাহরিয়ার, দীপঙ্কর তালুকদার আর মাকসুদুল আলমরা পাটের জীনের নকশা তৈরি করে বাংলাদেশকে পেটেন্ট এনে দিতো না।

উনাকে যদি ব্যক্তিগতভাবে কোন প্রবাসী আক্রমণ করে, তাহলে উনি তার নাম উল্লেখ করে স্ট্যাটাস দিয়ে নিজেরে ক্ষোভ ঝাড়তে পারতেন কিন্তু তিনি ‘প্রবাসী’দের নিয়ে বলেছেন। যা সত্যিই অস্বস্তিকর বটে। উনার মতো একজন মুক্তমনা মানুষের কাছ থেকে এ ধরনের রুচিহীন শব্দ প্রত্যাশা করি না।

  • এস এম নাদিম মাহমুদ: প্রবাসী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত