এস এম নাদিম মাহমুদ

১৮ নভেম্বর, ২০২০ ১৩:৫৯

সাংবাদিকতায় সাবধানতা জরুরি!

লেখাটি বাংলাদেশের গণমাধ্যমের কর্তাদের উদ্দেশ্যে। এটি কেবলই আমার পর্যবেক্ষণ।

গত কয়েকদিন ধরে বিষয়টি আমাদের কাছে বেশ অস্বস্তি তৈরি করেছে। একটি সংবাদ যে কতটা ভয়ানক হতে পারে, তা আমরা দেখলাম। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের কলকাতায় কালীপূজোর উদ্বোধনে’ শিরোনামে বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে খবর বের হয়েছে গত ১২ নভেম্বর মধ্যরাতে। এরপর ১৩ নভেম্বর নিউজপোর্টাল ও মূলধারার কয়েকটি গণমাধ্যম যেসব শিরোনামে সংবাদ করেছে, সেখানে স্পষ্টত সাকিবের কালীপূজো উদ্বোধনকে হাইলাইট করা হয়েছে।

গত ৫৯ বছর ধরে চলা পূর্ব কলকাতার কাঁকুড়গাছি এলাকায় পূজাটির মূল উদ্যোক্তা বিধায়ক পরেশ পাল। প্রতি বছর তার এলাকাবাসীদের চমক দেয়ার জন্য একটি ভিনধর্মী আয়োজন করে থাকেন। এবারও তারই ধারাবাহিকতায় সাকিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেটি কেবল স্থানীয়দের আমোদের জন্য।

অথচ আমাদের গণমাধ্যমে সংবাদগুলো পড়ার পর যে কারও মনে হতে পারে সাকিব কালীপূজো করেছে। সংবাদটিতে সাকিবই যে কালীপূজো উদ্বোধন করেছে, সেই সম্পর্কে আয়োজকদের কোন মন্তব্য নেই। এমনকি সাকিব, সেখানে যে বক্তব্য দিয়েছে তার কোথাও কালীপূজো উদ্বোধনের বিষয়ে কোন শব্দ নেই। নিউজটিতে উদ্বোধনের সোর্স হিসেবে আয়োজকদের কাউকে দেখাতে পারেনি।

সাকিব যে উদ্বোধক সেটি ভারতের সংবাদ মাধ্যম নিশ্চিত হতে পারেনি। বরং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রচারিত সংবাদ সম্পর্কে বলেছে, বাংলাদেশেও একাধিক প্রচারমাধ্যমে সাকিবের ভারত সফরে এই কালীপূজোর উদ্বোধন নিয়ে লেখা হয়েছে।

তাহলে সাকিব কেন উদ্বোধক হলো? সাকিব না ব্রাহ্মণ না হিন্দু, ভিন্ন ধর্মের কাউকে দিয়ে পূজো শুরু করার মত সেনসেটিভ ইস্যু নিশ্চয় কলকাতার সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সু-স্পষ্ট আঘাত। মঞ্চে উপস্থিত থাকা আর উদ্বোধক হওয়া এক জিনিস নয়। যেটা আমাদের সাংবাদিকরা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে।

একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান উদ্বোধন আদৌও হয় কি না, কিংবা হলেও বিধর্মীদের হাতে উদ্বোধনের রেওয়াজ আছে কী না, তা আমাদের জানা জরুরি। আমার মনে হয়, আমরা এই ধরনের সংবাদ ট্রিট করতে ব্যর্থ হয়েছি। ধর্মীয় ইস্যু যেখানে দগদগে, সোর্স বিহীন সংবাদকে পুঁজি করে ধর্মীয় পুঁজিবাদদের রসদ যোগানো অপ্রত্যাশিত। বাইট বেইজড সাংবাদিকতার কুফল আমরা দেখলাম, উস্কানিমূলক সংবাদ কখনো বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার মধ্যে পড়ে না, বরং এই ধরনের সংবাদে লাভবান হয় উগ্রবাদীরা।

নিশ্চয় উগ্রবাদে আমাদের গণমাধ্যম বিশ্বাসী নয়, সাম্প্রদায়িক-সম্প্রতি ধরে রাখার জন্য আমার-আপনার দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্ব সামান্য অবহেলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে বিদ্বেষ, হুমকির মুখে পড়তে পারে ব্যক্তি ও সম্প্রদায়। তাই, এই ধরনের সংবাদের ট্রিটমেন্টে আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা জরুরি। খারাপ এই সময়ে গুজবে উনুন না জ্বালিয়ে তা নেভার চেষ্টা করা উচিত।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত