০৮ ফেব্রুয়ারি , ২০২০ ১৪:৩৪
ছবি: মাসুদ সাঈদীর ফেসবুক
বিতর্কিত ধর্মীয় বক্তা মিজানুর রহমান আযহারীকে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর উত্তরসূরি বলে মন্তব্য করেছেন সাঈদীপুত্র মাসুদ সাঈদী। সাঈদী একাত্তরের মানবতাবিরোধি অপরাধের দায়ে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইন্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই যুদ্ধাপরাধী আপিলের রায়ে আমৃত্যু দণ্ডপ্রাপ্ত হন। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আযহারীর সঙ্গে তার সাক্ষাতের এক ছবি প্রকাশ করে এই মন্তব্য করেন মাসুদ।
মাসুদ সাঈদী মিজানুর রহমান আযহারীর মালয়েশিয়া চলে যাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, চলে যাওয়া মানে হেরে যাওয়া নয়। চলে যাওয়া মানে চিরস্থায়ী বিচ্ছেদ নয়। চলে যাওয়া মানে কোনো অধ্যায়ের পরিসমাপ্তিও নয়। চলে যাওয়া মানে সকল বন্ধন ছিন্ন করাও নয়। এ যাওয়া বড়ই সাময়িক।
মাসুদ সাঈদী ফেসবুকে লিখেন-
হক্বের পথে থাকলে, হক্ব কথা বললে বাধা আসবে সে তো জানা কথা। তবে বাধাটা এতো দ্রুত আসবে সেটা ভাবিনি। তবে এটাতো আপনার জন্য বড়ই সৌভাগ্যের বিষয়। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে মানুষের যে ভালবাসা আপনি পেয়েছেন সত্যিই তা বিরল। মন বলে, আল্লাহ তায়ালা আপনাকে কবুল করে নিয়েছেন।
আপনার চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে যদিও আপনাকে মিস করবে অসংখ্য অগণিত মানুষ তথাপি সকলের জন্যই সান্ত্বনার বিষয়ও আছে। হয়তো আপনি সাময়িক চোখের আড়ালে থাকবেন, কিন্তু আপনার কণ্ঠ এখন ছড়িয়ে গেছে সর্বত্র। আপনি পৌঁছে গেছেন বাংলার ঘরে ঘরে।
হক্ব কথা বলার কারণে ওরা আল্লামা সাঈদী মতো বিশ্বনন্দিত কোরআনের দাঈকেও আজ ১০টি বছর যাবত কারাগারে বন্দি করে রেখেছে। ওরা আল্লামা সাঈদীকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ ওরা তা পারেনি। বরং আল্লামা সাঈদীর প্রতি বিশ্বব্যাপী মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা শতকোটি গুণ বেড়ে গেছে৷ এটা আর কিছু নয়, কোরআনের পাখির প্রতি মানুষের এই ভালবাসা শুধুই আল্লাহর জন্য, কোরআনের জন্য।
আপনারা যারাই আজ কোরআনের হক্ব কথাগুলো মানুষকে বলছেন, মানুষকে দ্বীনের পথে দাওয়াত দিচ্ছেন তাদের মাঝে মানুষ আল্লামা সাঈদী হাফেজাহুল্লাহকে খুঁজে পায়। আপনাদের প্রতিটি কথা ও কাজ তারা আল্লামা সাঈদীর সাথে মিলিয়ে নেয়। আল্লামা সাঈদীর উত্তরসূরি হিসেবে দেশের মানুষ আপনাদেরকেই বেছে নিয়েছে।
মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা) থেকে শুরু করে যুগে যুগে সত্যপন্থীদের দমাতে ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীরা তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নামের ট্যাগ লাগিয়েছে। সেই মহাসত্যের ঝাণ্ডাবাহী হিসেবে আপনাদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নামের ট্যাগ লাগানো হচ্ছে।
তাতে কি! জনতার হৃদয়ের মণিকোঠায় আপনারা ছিলেন, আপনারা আছেন, আপনারা থাকবেন ইনশাআল্লাহ।
তাই, চলে যাওয়া মানে হেরে যাওয়া নয়। চলে যাওয়া মানে চিরস্থায়ী বিচ্ছেদ নয়। চলে যাওয়া মানে কোনো অধ্যায়ের পরিসমাপ্তিও নয়। চলে যাওয়া মানে সকল বন্ধন ছিন্ন করাও নয়। এ যাওয়া বড়ই সাময়িক।
উল্লেখ্য, ইসলামি বক্তা মিজানুর রহমান আযহারী সাম্প্রতিক সময়ে ইউটিউবে ব্যাপক আলোচিত এক বক্তা। ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পাওয়া এই বক্তা তার বিভিন্ন মাহফিলে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে বিভিন্ন কথা বলে আসছেন। এছাড়াও তিনি ইসলামের শ্রেষ্ঠ নবী ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে নানা আপত্তিকর মন্তব্য, মোহাম্মদ (সা.)-এর স্ত্রী বিবি খাদিজাকে নিয়ে কটূক্তি, এবং চার খলিফার অন্যতম হযরত ওসমান-আলী (রাহ...)-কে মদ্যপ-মাতাল বলে কটূক্তি করলে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও বিভিন্ন মাহফিলে তার দেওয়া ফতোয়া নিয়ে আলেম সমাজে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হয়। এমন অবস্থায় দেশের আলেম সমাজের একটা অংশের বিরোধিতার মুখে পড়েন মিজানুর রহমান আযহারী। বিভিন্ন জায়গায় তার মাহফিলে বাধা আসতে থাকে। সর্বশেষ গত মাসে সিলেটের একাধিক মাহফিলে তিনি অতিথি হয়ে আসতে পারেননি। সম্প্রতি ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ সমালোচনা করেন এই ইসলামি বক্তার। এরপর এক ফেবসুক পোস্টে আযহারী আগামী মার্চ পর্যন্ত তার সকল মাহফিল স্থগিত ঘোষণার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মালয়েশিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথা বলেন।
আপনার মন্তব্য