Advertise
আলমগীর শাহরিয়ার | ২৩ মার্চ, ২০১৮
ছোটবেলা হেমন্তের উন্মুক্ত হাওর থেকে দেখতাম আকাশের দিকে হাত বাড়িয়ে আছে ওই দূর মেঘালয় পাহাড়। মেঘালয় রাজ্যের ওই পাহাড়শ্রেণির কোলঘেঁষে খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক গ্রামে কাকন বিবির জন্ম। বিশাল পাহাড়ের মত এক দুর্জয় সাহসী হৃদয় নিয়ে তিনি জন্মেছিলেন। একাত্তরে পাক বাহিনীর বর্বরতার বিরুদ্ধে অসমসাহসী যুদ্ধে লড়াই করেছেন এই বীরনারী। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আদিবাসী এই নারীর বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা শুনেছিলাম অনেক আগেই। কিন্তু অনুসন্ধিৎসু চোখে জানার সুযোগ পাই আরও পরে, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি।
অনার্স ফাইনাল ইয়ারে আমাদের একটি মনোগ্রাফ করতে হয়েছিল। বিভাগের একজন অধ্যাপকের তত্ত্বাবধানে রীতিমতো খেটে গবেষণা করে এই মনোগ্রাফটি উপস্থাপন করতে হয়। মনোগ্রাফটির টাইটেল হিসেবে নিয়েছিলাম ‘The Role of Freedom Fighters in Liberation War 1971: Secto-5’। এই মনোগ্রাফের কাজ করতে যেয়ে আমার সেক্টর-৫ নিয়ে কিছু পড়াশোনার সুযোগ হয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কাজ করারও সৌভাগ্য হয় । তাদের কাছে গিয়েছি। খুঁজে খুঁজে অনেককে বের করেছি । কথা বলেছি । তাদের কাছে যুদ্ধদিনের সংগ্রাম, অপরিসীম ত্যাগ-তিতিক্ষা, গৌরবগাঁথা শুনেছি। সে সময়েই আমি কাকন বিবি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানার সুযোগ পাই। অসুস্থ থাকায় সে সময় তাঁর সাক্ষাৎকার নেয়া সম্ভব হয়নি কিন্তু সহযোদ্ধাদের কাছ থেকে তাঁর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। একজন মুসলিমকে বিয়ে করে কাকন বিবি ধর্মান্তরিত হয়ে নতুন নাম গ্রহণ করেছিলেন নূরজাহান বেগম। আদিবাসী বিশেষজ্ঞ ইতিহাসের অধ্যাপক মেজবাহ কামালের কাছে শুনেছিলাম কাকন বিবির আসল নাম ছিল কাকেৎ হেনইষ্ণিতা। তাঁর মা তাঁকে কাকেৎ বলে ডাকতেন। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে নানা উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে যাওয়া এ নারী মুক্তিযুদ্ধের সময় মাত্র ৩ মাসের কন্যা সন্তান সখিনাকে রেখে যুদ্ধে যোগ দেন। প্রথম দিকে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করতেন। একসময় পাকবাহিনীর হাতে ধরা পড়েন এবং অমানুষিক নির্যাতনের শিকার হন।