টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মারজিয়া প্রভা | ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
প্রিয়াংকা চোপড়ার একটা meme গত দুইদিন ধরে ফেসবুকে ঘুরাফিরা করছে। সেখানে প্রিয়াংকা চোপড়া বলছে, “শোন নারীরা বিড়ি খাওয়া, মদ খাওয়া, ছেলেদের মত রাতে ঘোরা তোমাদের আসল স্বাধীনতা না। আসল স্বাধীনতা হচ্ছে women empowerment, বড় বড় ডিগ্রি অর্জন, ছেলেদের চাইতেও বেশি টাকা রোজগার করা”।
এই meme সাধুবাদ পাচ্ছে, পাবে। কিন্তু আমার কাছে প্রায়ই এই meme গুলো হাস্যকর লাগে, যখন সেগুলো বলা শুরু করে, নারীরা কী করলে তার স্বাধীনতা অর্জিত হবে কিংবা হবে না! কিংবা কোনটা নারীর স্বাধীনতা, কোনটা না! এই meme গুলো কারা বানায়? কোন কনটেক্সটে প্রিয়াংকা চোপড়া এসব বলছে? (যদিও সে আদৌ বলছে না meme বানানোর সময় তার মুখে বসানো হইছে, আমি জানিনা!) প্রিয়াংকা নিজে কি স্বাধীন, যদি সে তথাকথিত empowered women হয়ে থাকে?
এমপাওয়ারমেন্টের অর্থ হচ্ছে যখন একজন মানুষ তার capabilities বা সক্ষমতার সর্বাধিক চর্চা করার যোগ্য হয়, বা ক্ষমতায়ন হয়। আমাদের দেশে দাঁড়িয়ে, যেসব নারী উচ্চশিক্ষিত, অধিক রোজগার করেন, তারা মাত্রই কি তাদের সক্ষমতার পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটাতে পারে, না চর্চা করতে পারে? উত্তর ‘না’! এই রাষ্ট্র নারীবান্ধব না, এই সমাজ নারীর জন্য নিরাপদ না! একজন ইউনিভার্সিটি শিক্ষক থেকে নারীশ্রমিক কেউই এই রাষ্ট্র কিংবা সমাজের কাছে নিরাপদ না। সে empowered হলেই প্রকাশ্যে তার জন্য এই সমাজ বা রাষ্ট্র প্রকাশ্যে ধূমপান বা রাতে নিরুপদ্রবহীন ঘোরার ব্যবস্থা রাখেনি! তাহলে কেমনে, একজন নারীর empowerment হওয়াই তার একমাত্র স্বাধীনতা হয়?
আমাদের সমাজে নারীর ক্ষমতায়ন বা উইমেন এমপাওয়ারমেন্টের মানে বুঝি সে নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা! অবশ্যই অর্থনীতির স্বাবলম্বিতা বড় বিষয়। কিন্তু সেটাই সব কথা নয়! নারী অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীন হলেই আসলে সে স্বাধীন হয় না! স্বাধীনতা কোন ব্যক্তিগত অর্জনের বিষয় না। কোন মনস্তাত্ত্বিক ভাবনাও না! বরং স্বাধীনতা ভীষণভাবে সামষ্টিক।
যে নারীর meme এর ভাষা অনুযায়ী অধিক রোজগার করে রাষ্ট্রের জিডিপিতে অংশ নেয়, রাষ্ট্র সেই নারীরে নিয়ে কতটুকু ভাবে? রাষ্ট্র বা সমাজ সেই নারীর নিরাপত্তা কি দেয়? রাষ্ট্রের পলিসিতে নারীর চাওয়া কতটা আসে? তাইলে কেবল ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষিত হওয়া বা ডিগ্রি অর্জন একজন নারীরে কিভাবে empowered করে দিতে পারে?
এইসব meme খুব সূক্ষ্মভাবে নারীরে স্বাধীনতার ছবক দেয়। পুরুষতান্ত্রিক একখান সমাজ, বিগত হাজার বছর ধরে জেন্ডার হায়ার্কি তৈরি করে আসছে সব জায়গায় জেন্ডার বৈষম্য তৈরি করে আসছে, সেই সমাজ নাকি আবার ছবক দেয় “নারীর স্বাধীনতা কী?”। বলে দেয়, “ওই যে ওইটুকু করো, ওইটুকু স্বাধীনতা আমি তোমারে দিতে পারি, ওইটুকু আরাম, ওইটুকুই স্বাধীনতা”। যেমন পাখিরে খাঁচায় বন্দি করে বলে, “নে! আকাশ দেখাই তোর আসল স্বাধীনতা, আকাশে উড়া না”।
তার মানে কি প্রকাশ্যে ধূমপানের অধিকার চাওয়া, ছেলেদের মত রাতে ঘোরা ইকুয়াল-টু বন্দি পাখির আকাশে উড়া?
না! আমি বলতে চাইছি- এই সমাজ আর রাষ্ট্র আগে নারীরে তার সম্পূর্ণ সক্ষমতা চর্চা করার মতো লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড দিক। তার নিরাপত্তা দিক, সমতা এবং ন্যায্যতার হিস্যা দিক, অন্তত তারে উড়ার আকাশটা দিক। সে উড়বে কি উড়বে না তা নারী নিজেই ঠিক করুক!
"উইড়ো না! উড়া তোমার আসল স্বাধীনতা না" এসব বলার মধ্যে দিয়ে রাষ্ট্র চাচ্ছে তার আকাশ আপনারে না দেবার, বরং আপনারে “স্বাধীনতার” আবজাব দিয়া উড়া বন্ধ করতে চাচ্ছে।
আগে আকাশটা নিজের করতে হবে, উড়ি না উড়ি সেটা আমার ভাবনা। এই ভাবনা আমার স্বাধীনতা।
মোদ্দা কথা, প্রাতিষ্ঠানিক জেন্ডার হায়ার্কি, বিশেষ লৈঙ্গিক প্রাধান্য পাওয়া, সুবিধাভোগী এই সিস্টেমটাকে আঘাত করেন, অচলায়তন ভাঙেন। তারপর আপনার স্বাধীনতা আপনি কেমনে উপভোগ করবেন, তা নিজেরটা নিজেই বাহির করেন এবং অন্য মানুষ যা স্বাধীনতা ভাবে সেটা নিয়াও ছবক দেওয়া বন্ধ করেন।
সবাইকে নিজেদের মত স্বাধীন থাকার সমতার সমাজ তৈরি করেন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য