প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ইমতিয়াজ মাহমুদ | ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২০
যুব মহিলালীগের এক নেত্রীকে তার বর আর দুইজন কথিত সহযোগীসহ ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে র্যাব গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর প্রেস কনফারেন্স করেছে ওরা। প্রেস কনফারেন্সের রিপোর্টগুলি যেভাবে এসেছে খবরের কাগজে সেখানে দেখা যাচ্ছে যে ঐ নেত্রীর বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই। ওর বরের বিরুদ্ধেও কোন মামলা আছে কিনা কেউ বলতে পারেনি। ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওরা অনেক টাকা পয়সার মালিক, এইগুলি টাকা পয়সা কীভাবে ওরা আয় করেছে সেটার কোন ব্যাখ্যা নাকি ওরা দিতে পারেনি। ওরা বড় ফাইভ স্টার হোটেলে দামি রুমে থাকতো, দামি মদ খেত ইত্যাদি। বলা হয়েছে যে পরবর্তীতে ওদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
এইগুলি নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আইনগত টেকনিক্যালিটির প্রশ্ন তুলতে পারেন, সেগুলি বাদ দিলাম। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ থাকাটা একটা অপরাধ, সেজন্যে দুর্নীতি দমন কমিশন আপনাকে ধরতে পারে, মামলা করতে পারে। যুবলীগ বা যুব মহিলালীগের নেতা নেত্রী একজন-দুইজন এইরকম চমকে দেওয়ার মতো সম্পদ নিয়ে র্যাব বা পুলিশের হাতে মাঝে মাঝে ধরা পড়বে সেটা আর এখন আমাদের কাছে বিস্ময়কর কিছু না। এইসব মনে হয় আরও কিছুদিন চলবে, চলুক। এগুলি নিয়ে এখন না হয় কিছু নাই বা বললাম।
কিন্তু এই যে মেয়েটার নামে 'অনৈতিক কর্মকাণ্ড' আর অন্য মেয়েদের দিয়ে ব্যবসা করানোর অভিযোগ তুলে জোরেশোরে প্রোপাগান্ডা করা হচ্ছে এইটা বোধ হয় ঠিক হচ্ছে না। কেননা, দেখেন এই যে মেয়েটাকে এখন একরকম একটা মক্ষীরানি ধরনের বেশ্যা তকমা লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এইটা কি ঠিক হচ্ছে? পরবর্তীতে যদি দেখা যায় যে এই মেয়েটা এইরকম কিছু করেনি, তাইলে কি ওর বিরুদ্ধে এই যে বাজে কালিমাটা আপনারা দিলেন, এটা ধুয়ে দিতে পারবেন? খবরের কাগজে মেয়েটার বয়স কোথাও লিখেছে ২৮ কোথাও লিখেছে ত্রিশ। ধরলাম ত্রিশ বা তার এক দুই বছর কম বা বেশি। ওর সামনে তো বিশাল ভবিষ্যৎ পড়ে আছে।
এই মেয়েটার যদি অস্ত্র মামলা বা দুর্নীতি মামলা এইসবে সাজাও হয়, তবুও তো ধরেন বছর দশেকের মধ্যে সে সাজা খেঁটে বেরিয়ে যাবে। বাকি জীবন তো মেয়েটাকে আপনাদের দেওয়া এই স্টিগমা নিয়েই বাঁচতে হবে। এটা কি ফেয়ার হচ্ছে? চট করে কাউকে এইরকম আজেবাজে স্টিগমা চাপিয়ে দেওয়া তো ন্যায় হচ্ছে না!
এই যে আপনার চট করে 'অনৈতিক কর্মকাণ্ড' বলে ফেলেন, এটাও তো কোন কাজের কথা না। একটি দম্পতি হোটেলে বসে মদ খেলে সেটা তো কারো না কারো কাছে অনৈতিক মনে হতে পারে। নারী পুরুষ একসাথে যদি গলাগলি বা লেপ্টালেপ্টি করে হোটেলে বা বারে নাচে সেটাও তো অনেকের কাছে অনৈতিক মনে হবে। কিন্তু এইগুলির জন্যে যদি পুলিশ বা র্যাব দিয়ে ধরে নিয়ে যান তাইলে তো অসুবিধা। নৈতিক অনৈতিক বিবেচনা সে তো আমার নিজের বিবেচনা। পুলিশ ঠিক করে দিবে কোনটা নৈতিক আর কোনটা অনৈতিক? তবে কি দেশে 'নীতি পুলিশ' চালু হয়ে গেল?
এইটুকুই আমার বক্তব্য। একজন নারীকে চট করে স্ক্যান্ডালাইজ করবেন না। এটা অন্যায়। তিনি যদি আসলেই পেশায় বেশ্যা হয়ে থাকেন, তবুও তাকে ঐ কারণে সামাজিকভাবে হেনস্থা করা ঠিক না। এটা অন্যায়।
দুর্নীতি বা চাঁদাবাজি বা অস্ত্রবাজি সেগুলি নিয়ে মামলা করেন, জেলে পুরেন, সাজা দেন সেগুলি করেন। কেন করবেন না? করেন। কিন্তু 'অনৈতিক' বা 'অসামাজিক' কর্মকাণ্ডের ইঙ্গিত দিয়ে স্ক্যান্ডালাইজ করবেন কেন? কি অনৈতিক কর্মকাণ্ড করেছেন এই নারীটা? পরপুরুষের সাথে শুয়েছে? টাকার জন্যে? বিশেষ সুবিধার জন্যে? সেটা যদি নিশ্চিত হয়ে থাকেন তাইলে আগে সেই বীরপুরুষটাকে বা বীরপুরুষগুলিকে চিহ্নিত করেন, আমাদের সামনে ওদেরকে নিয়ে আসেন, ওদের সম্পর্কে এইরকম প্রেস কনফারেন্স করেন। পরে না হয় মেয়েটাকে বদনাম করবেন।
জানেন তো, আমাদের আইনে এডাল্টারির জন্যে নারীদের কোন শাস্তি নাই, অপরাধ হয় পুরুষটার আর শাস্তিও হয় পুরুষটার। তাইলে 'অনৈতিক কর্মকাণ্ড' হলে আগে পুরুষটাকেই তো ধরবেন, নাকি?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য