প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রহিম আব্দুর রহিম | ০২ মে, ২০২৩
দীর্ঘদিন পর গত ২৪ এপ্রিল ভারত ভ্রমণে গিয়েছিলাম। দেশের খবরাখবর প্রতিনিয়ত অনলাইনে বাংলাদেশের পত্রপত্রিকা থেকে জেনে নিয়েছি।
২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার শিরোনাম ছিলো, "মারধরে সাত বছরের শিশুর মৃত্যু, সৎপিতা গ্রেফতার"; দেশে ফেয়ার পর, ৩০ এপ্রিল চোখে পড়ে সিলেট থেকে প্রকাশিত একটি অনলাইন পোর্টালের "পিতার হাতে ঘুমন্ত শিশুপুত্র খুন" শিরোনাম সংবাদটি।
প্রথম শিরোনামের সংবাদটির সারসংক্ষেপ, 'নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জের আজিবপুর বাগানবাড়ি এলাকার জাহাঙ্গীর নামক এক ব্যক্তির বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আরিফ এবং তার স্ত্রী স্বপ্না আকতার মুন্নী। মুন্নীর আগের ঘরের সাত বছর আব্দুল্লাহ নামের এক ছেলে ওর মার সাথেই বসবাস করছিল। ২৪ এপ্রিল আব্দুল্লাহর সৎ পিতা অকারণে দুপুর থেকে সন্ধ্যা অবধি আব্দুল্লাহকে পৈশাচিক কায়দায় মারধর করে। কয়েক দফায় মারপিটের এক পর্যায় শিশু আব্দুল্লাহকে ওই বাড়িতে টানানো একটি মইয়ের সাথে উল্টো করে ঝুলিয়ে রাখে। পরে শিশুটির দুই পা ধরে শূন্যে ভাসিয়ে দেয়ালের সাথে অনবরত সজোরে মাথায় আঘাত করতে থাকে। এতে করে শিশু আব্দুল্লাহ অসুস্থ হয়ে পড়ে। সন্তানের চিকিৎসার জন্য মা স্বপ্না আকতার মুন্নী তাকে হাসপাতালে নিতে চাইলে আরিফ তাকে বাধা দেয়। রাতে শিশুটি গুরুতর অসুস্থ হলে ২৫ এপ্রিল ভোরে শিশুর মা আরিফের বাধা উপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জের মাতুয়ালের মাতৃসদনে নিয়ে যায়। ওই সদনের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়ার পরামর্শ দেন। মা স্বপ্না, অসুস্থ শিশুকে ঢাকা মেডিকেলে আনলে হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার শিশুটির মৃত ঘোষণা করে। পরে মৃত সন্তানকে আব্দুল্লাহর বাবার বাড়ি, যাত্রাবাড়ির কাজলায় এনে দাফন করে। এই ঘটনায় শিশুর মা বাদী হয়ে আরিফকে আসামি করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় খুনের মামলা করে। পুলিশ অভিযুক্তকে আরিফকে গ্রেপ্তার করে।'
কী অদ্ভুত! একটি শিশুপ্রাণকে হিংস্র জানোয়ারে মতো কুলাঙ্গার আরিফ হত্যা করেছে। দ্বিতীয় শিরোনামে "পিতার হাতে 'ঘুমন্ত' শিশু পুত্র খুন।" সংবাদটির সারসংক্ষেপ," হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা, ইউনিয়ন নোয়াপাড়া, ওই ইউনিয়নের ইটাখোলা গ্রামের দরিদ্র কৃষক জাহান মিয়া হঠাৎ ঘরে ঢুকে তার ঘুমন্ত ছেলে রায়হানকে (১২) মাথায় আঘাত করে। মারাত্মক আহত শিশুটিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মারা যায়। পুলিশের ধারনা বাবা জাহান মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন। পুলিশের ধারনা সত্য বলেই মনে হচ্ছে।
প্রথম শিরোনামের ঘটনাটি সীমারের হত্যাকাণ্ডকেও হার মানিয়েছে। শিশু ধর্ষণ, শিশু খুন হরহামেশাই হচ্ছে। তাহলে শিশুরা নিরাপদ কই? শিশুদের নিরাপত্তাহীনতার কারণগুলো নির্ণয় করা দরকার। তবে অবস্থাদৃষ্টে স্পষ্ট বলা যায়, এখনও সমাজ রাষ্ট্রে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি বলেই আব্দুল্লাহর মতো শিশুরা মরছে। যদি স্বপ্নাকে আমরা সার্বিক দিক থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারতাম, তবে তাকে শিশুসন্তান নিয়ে স্বামীর ঘর ছাড়তে হতো না, দ্বিতীয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হতো না। আরিফের মত পাষণ্ড স্বামীও গ্রহণ করার দরকার ছিল না। নারীর সার্বিক নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কার ঘাড়ে বর্তায়, মা-বাবা-স্বামী নাকি সন্তানের উপর। এই হিসাব কষলে দায় এসে পড়ে সবার উপর। অথচ কী ঘটছে! আমরা শুধু সরকারের উপর সবকিছুর ভরসা রাখছি।
আরিফের হাতে শিশু আব্দুল্লাহ খুনের ঘটনাটি স্বাভাবিক নয়। পৈশাচিক, কারণ শিশু আব্দুল্লাহকে কষ্ট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই খুনির দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হলে সভ্যদেশে আব্দুল্লাহরা অবাধে খুন হবে। এই সভ্য জগতে একজন মানুষ কী করে এতবড় পৈশাচিক কর্মকাণ্ডে জড়ালো তা যতটা ভাবনার, তার চেয়ে বেশি ভাবনার এই ঘটনাটি যখন ঘটল, তখন ওই এলাকার কেউ না কেউ, পুলিশকে কেন জানাল না।
ধরে নিলাম, ব্যস্ত শহরে কেউ কারো খবর রাখছে না। কেউ যদি কারো খবরই না রাখল; তাহলে মানব সমাজের মানবতা, সভ্যতার উৎকর্ষতা কই? আমরা তো আইয়্যামে জাহেলি যুগের বাসিন্দা নই। শিক্ষা-দীক্ষা, আইন আদালতের আমরা বাসিন্দা। কর্মে ধর্মে আমরা অসাম্প্রদায়িক। সভ্যতায় আমরা স্বাধীন। এই ধর্ম-কর্ম, স্বাধীন-সভ্যতা পাষণ্ড আরিফদের হাতে কলঙ্কিত হতে পারে না।
শিশুরা ফুলের মত, ওরা নিষ্পাপ। এই শিশুদের নিরাপত্তা দেওয়ার সামষ্টিক দায়িত্বভার মা-বাবার, পরিবার, সমাজ এবং পরিশেষে রাষ্ট্রের। উন্নত বিশ্বের ভাবী প্রজন্ম শিশুদের দায়িত্ব সামষ্টিকভাবে রাষ্ট্র গ্রহণ করে থাকে। আজ যদি আমাদের এই স্বাধীন দেশে ভাবী নাগরিকদের দায়িত্ব রাষ্ট্রের হাতে থাকত, তবে আব্দুল্লাহর মত নিষ্পাপ শিশুরা মানুষ নামক পশুর কবলে পড়ে নির্মমভাবে মারা যেত না। একইভাবে সীমারের চেয়ে পাষণ্ড আরিফরা জন্ম গ্রহণ করত না।
আমরা আশাবাদী এই দেশটি কোন এককালে, সময়ে মানবসভ্যতার অন্যতম রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠবে। যেখানে নারীর সার্বিক নিরাপত্তা এবং শিশুর উন্মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য