আজ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Advertise

ওরাও সাহসিকা!

মারজিয়া প্রভা  

আমার একটি ছোট্ট স্বপ্নের প্রজেক্ট আছে Donate A Pad For Hygiene Bangladesh। মিশন হচ্ছে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের কাছে সুলভ মূল্য স্যানিটারি প্যাড পৌঁছে দেওয়া। ২০১৫ সালের ১৬ই ডিসেম্বর থেকে এই মিশন নিয়ে যাত্রা শুরু করি। তারই ধারাবাহিকতায়, উপস্থিত হই নোয়াখালীর প্রত্যন্ত গ্রামের একটি স্কুল জমিদারহাট বিএন উচ্চবিদ্যালয় গত ৩০শে এপ্রিলে।
 

নোয়াখালী যাবার আগের থেকেই শুনেছিলাম, খুব সম্ভ্রান্ত এলাকা। সকাল বেলাতেই মাথা থেকে আমার বড় টিপ খুলে ফেলতে বলা হয়। খুলে ফেলার ইচ্ছে ছিল না! কিন্তু যে পরিবারে ছিলাম তাদের সম্মান রক্ষার্থে টিপ নিজেই আঠা হারিয়ে খুলে পড়ল। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে দেখি, আমার চাইতেও ছোট বয়সের মেয়েরা নিজেদের বাচ্চা কোলে। আমাকে দেখে চার পাঁচ বাচ্চার মা ভেবেই বসে আছে ওরা। যখন জানালাম, বিয়ে করি নাই এখনও! ওরা নিজেরাই বেকুব হয়ে গেছে!

এমন একটা গ্রামের স্কুলের মেয়েদের কাছে মাসিক নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করাটা কতটা অস্বস্তিকর বুঝুন! আর তারা এই সেমিনারে যে আসবে না সেটা আমি নিশ্চিত ছিলাম।  তবুও কাজ করতে এসেছি, এই ঝুঁকিগুলো তো মাথাতে থাকেই।

ঢাকার বড় বড় এসি ফিট করা, চৌকস স্কুলে আমি মেয়েদের জরুরি সময়ে ‘প্যাড সার্ভিস’ এর ব্যবস্থা দেখি নি। একটা অফিসে পাঁচশতের উপরে নারী থাকা, অথচ তাদের প্যাড সার্ভিসের ব্যবস্থা নেই, এমন আমার ঢের দেখা। যদি বাসা থেকে আসার আগে প্যাড ব্যাগে নিতে ভুলে যায়, তাহলে তো শেষ। ফার্মেসি খোঁজ রে, কাউকে তেল মেরে ফার্মেসি তে পাঠাও রে! অথচ অফিসে ব্যবস্থা থাকলেই কি দারুণ হয় ব্যাপারটা!

কিন্তু এইসব কাজে তো মেয়েদের এগিয়ে আসতে হবে! মেয়েদের মধ্যেই দল করে কাউকে বলতে হবে অফিসে বসের কাছে, স্কুলের প্রিন্সিপালের কাছে! সবার প্রথম কথা, মেয়েদেরকে মুখ খুলতে হবে! যেটা অধিকাংশ বড় স্কুলের মেয়েদেরকেও আমি দেখিনি।

কিন্তু আমার একজীবনে দেখার অনেক বাকি আছে! সেটাই প্রমাণ করল জমিদারহাট বিএন উচ্চবিদ্যালয়ের মেয়েরা। ওরকম টিনশেডের স্কুল, লাইট ফ্যানের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকা স্কুলের মেয়েরা নির্ভীক চিত্তে মাইক হাতে নিজের ঋতুস্রাবের কথা বলল!

ঋতুস্রাব নিয়ে কুসংস্কারের কথা বলল। একটা সার্ভে ফর্ম দিয়েছিলাম, অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখতে। দারুণ দারুণ অভিজ্ঞতা লিখল।  পাখি নামে একটা কমিক্স দিয়েছিলাম ওদেরকে। সেটা সবাই পড়ল। একটা কমিক্সের পেইজ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখিনি।

সবচেয়ে মজার কথা তারা এই অভিজ্ঞতা শেয়ারে, কেউ কারও গায়ে ঢলে পড়েনি। গা টিপে হাসে নি। ঢাকার স্কুলে মেয়েদের মধ্যে যে অস্বস্তি আর লজ্জা দেখেছি, গ্রামের মেয়েদের মধ্যে তার একবিন্দু কিছু দেখিনি। অথচ তাদের সেখানে ভুরিভুরি ইন্টারনেট access নেই। আমি বুঝলাম আধুনিকায়ন স্বতঃস্ফূর্তভাবেই হয়। ধাক্কাধাক্কি করে সেটা করা যায় না।


আরও বিস্মিত করেছে স্কুলের জনপ্রিয় টিচার অসীম স্যার। স্যারকে ডাকা হয়েছিল কিছু বলতে! তিনি উঠে বলেন, ‘তোমরা কেন লজ্জা পাবে এসব বলতে? একদিন না তোমরা চিকিৎসক হবে?’ আমার জীবনে আমিই কখনও এরকম স্যার পাইনি। যিনি মেয়েদের এরকম লজ্জার বিষয়ে লজ্জা ভাঙতে উদ্বুদ্ধ করে।  

ঢাকায় এসে ভাবছিলাম, কত শহরের মেয়েরা এত খোলামেলার মধ্যে থেকেও মন উদার করতে পারেনি। আমার এক বান্ধবী লিখেছিল, “হ্যাপি টু ব্লিড”। তাকে আরেক মেয়েই ইনবক্স করে, “ মাসিকের কথা পাবলিকলি বলে, তুমি রেপড হতে চাও”?

গড়বো বাংলাদেশ আয়োজিত এই Donate a Pad for Hygiene Bangladesh  সেমিনারে ডঃ নাজিয়া বিনতে আলমগির উপস্থিত ছিলেন। অনলাইনে তিনি অনিন্দ্য অদিতি বলেই পরিচিত। সেই আপু বলেছিল, পুরুষ ডাক্তারের কাছে এসে রোগী তার মাসিকের কথা বলতে পারেনা। অথচ সেই পুরুষ ডাক্তার একই পড়াশুনা করে ডাক্তার হয়েছে। সেও নারীর শরীর চিনে। ছোটবেলা থেকেই আমরা আমাদের প্রয়োজনীয়তার কথা ঘরের বাপ, ভাইকে যদি বলতে না পারি, কি করে বড় হয়ে ডাক্তার হয়ে আরেকজনের প্রয়োজনীয়তাকে জানব।

গ্রামের ঐ মেয়েগুলোর মুখ দেখে আমার মনে হয়েছে, ওরাও সাহসিকা! স্রোতের বিপরীতে ওরাও চলতে প্রস্তুত। দিনবদলের স্বপ্ন দেখতে ওরাও পারে! শুধু সেই স্বপ্ন দেখানোর জায়গাটা আমাদের করে দিতে হবে।

Donate a Pad for Hygiene Bangladesh নিয়ে বিস্তারিত: https://www.facebook.com/Donate-a-Pad-for-hygiene-Bangladesh-471567343050024/?fref=ts


মারজিয়া প্রভা, ফাউন্ডার, ফেমিনিজমবাংলা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৫ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১১০ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪৪ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৩ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ২৫ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ শাখাওয়াত লিটন শাবলু শাহাবউদ্দিন