প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ডা. সাঈদ এনাম | ০৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
'স্যার এ আমার ভাইপো হয়। তার সমস্যা তার সামনে বলা যাবেনা। ও ভীষণ মেজাজি। আমি তার সম্পর্কে পরে বলি, আপনি একটু দেখে ফেলুন তাকে....', চেম্বারে ঢুকে চেয়ারে বসে কথাটি বললেন কিশোরের সাথে আসা ভদ্রমহিলা।
আমি তাই তেমন কিছু না বলে দু'একটা প্রশ্ন করে তাকে বাহিরে অপেক্ষা করতে বললাম। প্রশ্ন কোনটির উত্তর দিলো আবার কোনটির উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে মাদকাসক্তের চুপ ছিল।
আচ্ছা এবার বলুন, আপনার ভাইপো'কে কেন এনেছেন?
'স্যার, খুব মেজাজ করে। ভাঙচুর করে। আবার মাঝেমধ্যে চুপচাপ থাকে। কারো সাথে মেশেনা, খেলাধুলায়ও যায়না। বন্ধুবান্ধব ফ্রেন্ড সার্কেল একেবারেই নেই...' বললেন রাতুলের খালা।
একা-একা কথা বলে, হাসে কাঁদে?
- না স্যার ওরকম কিছু না।
- কোন বদ অভ্যাস?
- না স্যার।
- পড়াশোনা?
-খুব একটা ভালোনা। তিনবার দিয়ে জি এস সি টা পাশটা করলো। পড়ে কিন্তু পরীক্ষা আসলেই ভয় পায়। পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। উধাও হয়ে যায়।
- ছোটবেলা কেমন ছিল?
- 'স্যার একটু খুলেই বলি। ও যখন তিন মাসের গর্ভে তখন তার মায়ের প্রচণ্ড মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। আমরা ঢাকায় সাইকিয়াট্রিস্ট দেখাই। কোনমতে তার জন্ম হয়। ওর যখন জন্মের পর ১২ দিন বয়সে তার মায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়। আমরা সেই বারো দিন বয়সেই তাকে নিয়ে আসি। সেই থেকে সে আমাদের কাছে। মা বাবা বলতে সে আমাদেরকেই চিনে। প্রথম যেদিন স্কুলে ভর্তি করি তখন সে তার মা বাবাকে ভালোভাবে দেখে। তার মায়ের আওলা-ঝাওলা মানসিক সমস্যা দেখে সে কিছু বুঝতে পারেনা। তার মা' যে একজন মানসিক রোগী এটা সে বুঝতে পারেনা। বলে- এ কে? এ মহিলাতো পাগল। এ আমার মা কীভাবে হবে? তারপর থেকে যখনই মা'কে দেখে সে কেমন যেন হয়ে যায়..'।
'ওর মা' ক কখনও পুরোপুরি সুস্থ হননা। মানে, মা ছেলেতে কখনো সুস্থ স্বাভাবিক কথাবার্তা বা ভাব বিনিময় হয়নি...?', জিগ্যেস করলাম।
- "খুব কম স্যার। ওর মা প্রায় সারাবছর পাগল থাকেন। যখন পাগলামি খুব বেড়ে যায় তখন কেবল আমার কইলজার টুকরা আমার কইলজার টুকরা বলে রাত দিন হাউমাউ করে কাঁদে। তখন আমরা মা ছেলেতে এক সাথে করি। কিন্তু মায়ের পাগলামি দেখে সে ভয়ে কেমন কেমন হয়ে যায়। তাই আমরা মা-ছেলেকে আলাদা রাখছি প্রায় ১৬ বছর..., স্যার এখনতো এর সমস্যা কিছুটা তার মায়ের মতো হয়ে যাচ্ছে। কী করবো। বুঝতে পারছিনা। চুপচাপ বসে থাকে আর মাঝেমধ্যে মা মা বলে কাঁদে। কখনও খুব রেগে যায়। আজ সকালে আমাদের মা'কে অর্থাৎ তার দাদীকে দা' নিয়ে কুপাতে যায়, বলে তুই আমার মাকে মেরেছিস। আমরা না থাকলে ঘটনা অন্যরকম হতো। খুনখারাবি হয়ে যেতো...। স্যার আমার ভাইপো কি ওর মায়ের মতোই হয়ে গেল?, কত আদর করে আমরা ওকে তিলে তিলে বড় করেছি। ওর কষ্ট হবে বলে আমি বিয়েই পর্যন্ত করিনি...., স্যার বলুন না আমার ভাইপো কি ওর মায়ের মতোই পাগল হয়ে গেল? না পারি মা'কে ছেলের কাছ হতে দূরে রাখতে আবার না পারি ছেলেকে মায়ের কাছে আনতে.....?" কথাটি বলেই ভদ্রমহিলা আমার সামনে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলেন। তাকে কাছে টেনে সান্ত্বনা দিলেন তার দাদী। রাতুলের দাদীর চোখেও জলের বান।
- "আমার নাতি কি তার মায়ের মতো.."?, নিজেকে সামলে জিগ্যেস করলেন রাতুলের দাদী।
"রাতুলের জীবন জন্ম থেকেই ট্রাজেডিতে পরিপূর্ণ। এ মর্মান্তিক স্ট্রেস সে কোনভাবেই নিতে পারেনা। প্রিসিপিটেটিং ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে নীরবে নিভৃতে..."
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য