আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

মুক্তচিন্তা ও আমরা

এনামুল হক এনাম  

ক্রিটিক্যাল থিংকিং বেশ কঠিন আমাদের সমাজে। এই সমাজ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, সমালোচনা, মুক্তচিন্তা সহজভাবে গ্রহণ করে না। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত অন্ধত্বকে তারা সেরা এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মনে করে, প্রচলিত চিন্তা-চেতনার বাইরে গিয়ে যুক্তি, তথ্য, প্রমাণ দিয়ে কিছু বিশ্লেষণ তারা করে না, আর যারা করে তাদের কখনোই ভাল চোখে দেখে না। নিন্দা, উপহাস এমনকি মৃত্যুর হুমকি নিয়মিত দেয় ভিন্ন মতাবলম্বীদের। সেক্ষেত্রে গালাগালি হলো হালকার উপর ঝাপসা পান-পরাগ।

মুক্তচিন্তার ক্ষেত্রে চমৎকার প্ল্যাটফর্ম হলো স্যাটায়ার, নিজেকে সেফ জোনে রেখে সমালোচনা করার জন্য একটি আদর্শ পন্থা। কিন্তু এখানেও বিপদ, সবাই স্যাটায়ার বুঝে না। না বুঝে হাসে, না বুঝে গালি দেয়, না বুঝে সম্মতি দেয়।

যাচাই করে দেখুন, ধর্মীয় অনুভূতির নামে উন্মাদনা, অন্ধত্ব, কুসংস্কার তৃতীয় বিশ্বেই বেশি। এর অন্যতম কারণ পৃথিবীর এই অংশে অশিক্ষা, কুশিক্ষার কারণে অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটেনি। এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে আপনি সহজেই ইতিহাসকে টানতে পারেন। ইউরোপে অর্থনৈতিক মুক্তির আগে ধর্মান্ধতা ছিল শোষণ, বঞ্চনার একমাত্র হাতিয়ার। কত জ্ঞানী গুণী বিদ্বানকে যে তারা ডাইনি বলে হত্যা করেছে আর পুড়িয়ে মেরেছে তার হিসেব নেই।

ধরে নিতে পারেন ইউরোপ ৪০০-৬০০ বছর আগে যে কঠিন সময় পার করেছে তাই আমরা এখন পার করছি। ৪০০ বছর আগে ব্রুনোকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে শুধুমাত্র ক্রিটিক্যাল থিংকিং এর জন্য (পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরে এই দাবি নিয়ে সোলার মডেল বানানোর জন্য, যা তৎকালীন খ্রিস্টীয় ধর্মীয় বিশ্বাসের বিপরীত ছিল)। বাংলাদেশে এইধরনের হত্যাকাণ্ড সচরাচরই হচ্ছে বা হয়। এক্ষেত্রে বুদ্ধিবৃত্তির দিক দিয়ে আমরা ৪০০ বছর অন্তত পিছিয়েই আছি বলতে পারেন।

আমাদের ক্রিটিক্যাল থিংকিংয়ের জায়গা কোথায়? প্রচলিত বিশ্বাস, যা আমরা প্রাপ্ত হয়েছি পরিবার থেকে, সমাজ থেকে, সম্প্রদায় থেকে..., যা ভেদাভেদ সৃষ্টি করেছে আমাদের মাঝে, যা আমাদের শোষণ করছে, ঐতিহ্যের নামে হাস্যকর রূপকথায় বিশ্বাস করতে বাধ্য করছে। বার বার প্রশ্নবিদ্ধ করতে হবে নিজের বিশ্বাস, সংস্কৃতি আর সংস্কৃতির নামে পালন করা প্রথাকে। যদি যুক্তি, তথ্য প্রমাণে তা গ্রহণযোগ্য হয় তবে তা গ্রহণ করবো, আর না হলে তাকে জাদুঘরে পাঠাবো। খেয়াল করুন, ছুড়ে ফেলতে বলছি না, জাদুঘরে পাঠাতে বলছি, যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ সেই জাদুঘরে গিয়ে দেখতে পারে কি অসভ্য সময়ে বাস ছিল আমাদের।

যে মুক্তচিন্তার দর্শন আজ থেকে দুই হাজারেরও বেশি বছর আগে গ্রিক সভ্যতার দার্শনিকরা করে গেছেন, পৃথিবীর সকল জ্ঞানীগুণীজন আজও তা নিয়ে গবেষণা করেন, আমাদের অবস্থান বলে আর নিজেদের আর নিচে নামাতে চাই না। এমনিতেই আমরা প্রচণ্ড রকমের বই-বিমুখ ভণ্ড জাতি, দর্শনের বইয়ের ভূমিকা পড়েও নিজেকে দার্শনিক দাবি করি। জ্ঞান চর্চা তো আমাদের মাঝে নেইই, বরং কেউ যুক্তি, তথ্য, প্রমাণে কথা বললে আমাদের অনুভূতিতে আঘাত লাগে।

আমি আগেও বলেছি, আবারও বলি... ব্যবহারিক জীবনে মুক্তচিন্তার "চর্চা" অত সহজ নয়। বুদ্ধি ও বিজ্ঞান, বাস্তব সত্য এবং যুক্তির আলোকে আপনি... 'হেত্বাভাস, পক্ষপাতদুষ্ট লোকজ্ঞান, জনপ্রিয় স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতি আনুগত্য, কুসংস্কার, সাম্প্রদায়িকতা, প্রথা, গুজব এবং অন্য সব গোঁড়া বা অলৌকিক অদৃশ্য শক্তির প্রতি দাসত্ব' ইত্যাদি থেকে নিজেকে দূরে রেখে সত্যের অনুসন্ধান করবেন, জ্ঞানের চর্চা করবেন... ব্যাপারটা অত সহজ নয়।

চেষ্টা করতে পারেন, সফল হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। জন্মসূত্রে প্রাপ্ত পারিবারিক 'শিক্ষা', তথাকথিত শ্রেষ্ঠত্বের দাবি এক পাশে রেখে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। আর যেই মুহূর্তে আপনি মনোবৃত্তিক মেটামরফোসিসের মধ্য দিয়ে যাবেন, সেই মুহূর্তে আবিষ্কার করবেন আপনাকে ঘিরে আছে একদল আহাম্মক। এবং অবশ্যই মনে রাখবেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ আহাম্মকরা হিংস্র আর বর্বর।

পরিশেষে ধার করা প্রিয় কথা বলি, আমি আপনার সমালোচনা কিংবা বিরোধিতা করতে পারি, এর মানে এই নয় যে আমি আপনার শত্রু...! প্রতিজ্ঞা করে বলছি, অধিকারের প্রশ্নে আপনার মিছিলের অগ্রভাগে আমাকেই পাবেন।

এনামুল হক এনাম, কলামিস্ট, সাহিত্যিক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ