আজ মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Advertise

মহামারি মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বার্তা: কেমন হবে, কীভাবে পৌঁছাবেন?

এনামুল হক এনাম  

মহামারি মোকাবেলায় কিছু বিষয় মাথায় রেখে কাজ করতে হয়। মহামারিতে সবচেয়ে জরুরি স্বাস্থ্য বার্তা বা হেলথ এডুকেশন। শুধুমাত্র হেলথ এডুকেশন দিয়েই একটি কঠিন মহামারিও সহজেই রুখে দেয়া সম্ভব। কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে বিশাল বড় একটি অংশ এদেশে অশিক্ষিত এবং অর্ধ-শিক্ষিত। আর তার চেয়েও বড় কথা এরা অজ্ঞ। এরা জানে না যে তারা কিছুই জানে না, আবার জানে না এই সত্যটি মানতেও নারাজ, এবং জানতেও চাইবে না। খড়ের গাদায় মাথা গুজে আজীবন পার করে দেবে, কিন্তু অজ্ঞতা ঝেড়ে ফেলে আলোর পথে আসব না। নিজেও ভুগবে, অন্যদেরও ভোগাবে।

স্বাস্থ্য বার্তাকে কার্যকর ভাবে জনসাধারণের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য বার্তা পৌঁছানোর পুরো প্রসেসটা গুরুত্বের সাথে সম্পাদন করতে হয়। প্রসেসের এলিমেন্টগুলোর উপর নজর দিতে হবে। যেমন:

বার্তা প্রেরক
কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, হাত-ধোয়া বা এইধরনের স্বাস্থ্য বার্তা কে দিচ্ছেন এটা অতীব জরুরি। হতে পারেন আপনি জ্ঞানী গুণী উচ্চ ডিগ্রিধারী শিক্ষিত, কিন্তু আপনার দেয়া বার্তা সাধারণ জনগণ গ্রহণ করবে না, উলটো হেসে উড়িয়ে দেবে। এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য নিতে হবে কমিউনিটি লিডারদের বা সামাজিক নেতাদের। এই দেশে কমিউনিটি লিডার কে? মূল জনসংখ্যার জন্য এখানে কমিউনিটি লিডার মসজিদের ইমাম, মাদ্রাসার শিক্ষক, বড় বড় আলেম, স্কুল শিক্ষক, স্থানীয় জনপ্রিয় নেতা, মন্দিরের পূজারি। এইসব কমিউনিটি লিডারদের কথা ম্যাজিকের মত কাজ করে। এই মহামারিতে এলাকাভিত্তিক কমিউনিটি লিডারদের কাজে লাগান, তাদের নিয়ে কমিটি গঠন করে দিয়ে দিন, আপনি মেসেজ দিবেন, তারা তাদের মত করে খবরটি জনসাধারণের কাছে পৌঁছাবে। কার্যকর একটি প্রক্রিয়া। যেমন, দুর্যোগের সময় মসজিদে নামাজ পড়ার বিষয়ে সতর্কতা স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবকে দিয়ে কোরআন হাদিসের আলোকে বুঝাতে হবে।

বার্তা গ্রহণকারী
আপনার স্বাস্থ্য বার্তা কার কাছে পৌঁছাবে সেটা জানা জরুরি। যেহেতু আপনার টার্গেট পপুলেশন একটি বিরাট অজ্ঞ জনগোষ্ঠী, সেহেতু আপনার প্রস্তুতিও সেভাবে হতে হবে। যেমন চা বাগানে স্বাস্থ্য বার্তা পৌঁছানো আর গ্রামে স্বাস্থ্য বার্তা পৌঁছানো এক বিষয় নয়। জনগোষ্ঠী ভিন্ন, ভিন্ন তাদের সংস্কৃতি, রীতিনীতি। কাউকে বাদ দিয়েও আপনি মহামারি রুখতে পারবেন না। অসম্ভব।

স্বাস্থ্য বার্তা
স্বাস্থ্য বার্তাটি এমন ভাবে তৈরি করতে হবে যেন শিক্ষিত, অশিক্ষিত, অজ্ঞ, বিজ্ঞ, হিন্দু, মুসলিম সবাই বুঝতে পারে এবং সহজে গ্রহণ করতে পারে। সহজ ভাষায় ছবিসহ পোষ্টার, রেডিওতে আঞ্চলিক ভাষায় আলোচনা, শ্লোক, গান, টিভিতে কীভাবে কী করতে হবে পুরো প্রক্রিয়া দেখিয়ে বিজ্ঞাপন। দেখাতে হবে বার বার।

মাধ্যম
কিভাবে স্বাস্থ্য বার্তা পৌছবেন? স্থানীয় কমিউনিটি লিডারদের নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সহজে বার্তা পৌঁছানো যায়। যেমন মসজিদে নামাজে আসা মুসল্লিদের ইমাম সাহেব বলবেন, বাজারের সভাপতি বাজারে সভা করে বলবেন। রেডিও, টিভি, লিফলেট, পোস্টার একদম তৃণমূল স্তরে পৌঁছে দিতে হবে মহামারি মোকাবেলায় কী করতে হয়।

ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া
স্বাস্থ্য বার্তা দেয়ার পর জনসাধারণের কী ধরণের প্রতিক্রিয়া হলো তা একজন সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বুঝতে হবে। প্রায়শই দেখা যায় আপনি যে বার্তাটি দিচ্ছেন তা জনগণ আংশিক বা ভুল ভাবে গ্রহণ করেছে। এতে বুঝতে হবে কোথাও বিরাট গলদ হয়ে গেছে। তখন আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। যেমন গতদিন জনগণকে যার যার বাসা বাড়িতে থাকার জন্য সাধারণ ছুটির যে বার্তাটি দেয়া হল তা ঈদের ছুটি মনে করে জনগণ যার যার গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটছে। এবং শহর থেকে সংক্রমণ গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছে। এখানে পরিষ্কার ভাবে বলে দেয়া উচিত ছিল ছুটি দেয়া হচ্ছে আপনারা যার যার বর্তমান অবস্থানে, বাসা বাড়িতে থাকার জন্য। গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য নয়। হঠাৎ করে বার্তাটি না দিয়ে দু-একদিন পূর্বে থেকে প্রস্তুতি নেয়া উচিত ছিল। যানবাহন, রেলকে মেসেজ দেয়া উচিত ছিল, ছুটি আসছে, লোকজনকে বুঝিয়ে নিজ নিজ বাড়িতে রাখতে হবে। প্রয়োজনে সকল পরিবহন বন্ধ করে দেয়া উচিত ছিল। দেখুন, বার্তা দিয়ে যা করতে চাইলেন তার ঠিক উল্টোটি ঘটলো।

হাত ধোয়ার যে বার্তাটি আপনি প্রচার করছেন, যাদের জন্য বেশি প্রয়োজন এই বার্তাটি, দেখবেন তারা শুধু সাবানে হাত লাগিয়ে ফেনা তুলেই হাত ধুয়ে ফেলছে। ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ড তারা বুঝবে না, তাদের গুনতে বলুন ১ থেকে ৩০ পর্যন্ত।

স্বাস্থ্য বার্তা পৌঁছানোর মুল প্রতিবন্ধকতাগুলোকে খুঁজে বের করুন। ফেসবুকে উলটা পালটা বার্তা দিয়ে একটি গোষ্ঠী জনগণকে বিভ্রান্ত করছে। তাদের দু একজনকে ধরে শাস্তি দিন। অনেক জায়গায় ওয়াজে কিছু বক্তা সম্পূর্ণ মনগড়া বক্তব্য উপস্থাপন করে একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে হুমকির মধ্যে ফেলে দিচ্ছেন। তাদের নজরদারিতে আনুন, প্রয়োজনে তাদের দিয়ে ফেসবুক বা ইউটিউবে আবার সংশোধিত বক্তব্য প্রচার করুন। বিষয়টি জরুরি। একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ইতিমধ্যে বিভ্রান্ত।

স্বাস্থ্য বার্তা পৌঁছানোর মূল লক্ষ্য সচেতনতা তৈরি। তা আকর্ষণীয় ভাবে জনগণের কাছে পৌছাতে পারলে জনগণ আগ্রহী হবে। এবং তা গ্রহণ করে নিজে বদলাবে, দেশকেও বাঁচাবে।

সুস্থ থাকুক সবাই, আসুন মহামারি মোকাবেলা করি সম্মিলিত প্রচেষ্টায়।

এনামুল হক এনাম, কলামিস্ট, সাহিত্যিক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৫ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১১০ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪৪ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৩ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ২৫ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ শাখাওয়াত লিটন শাবলু শাহাবউদ্দিন