আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

মানবিক বিপর্যয়ে এমন ব্যবসা বন্ধ হোক!

এস এম নাদিম মাহমুদ  

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় গত ৭ এপ্রিল জাপান সরকার সরকার দেশটির মোট জিডিপির ২০ শতাংশ (১ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার) আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা দেয়। এই বরাদ্দকৃত অর্থের অন্যতম একটি অংশ ব্যয় হবে ইনফ্লুয়েঞ্জার জন্য কার্যকরী অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ ‘অ্যাভিগান’ তৈরিতে। প্রায় ২০ লাখ অ্যাভিগান ট্যাবলেটে উৎপাদনের ঘোষণা সেদিনই দেয়া।

ওইদিন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেসব দেশ কভিড-১৯ আক্রান্ত সেই দেশে অ্যাভিগান বিনামূল্যে সরকার দেবে।

এরই ধারাবাহিকতায় সরকার সিদ্ধান্ত নেন যে অন্তত ২০টি দেশে প্রাথমিকভাবে ফেইজ-৩ ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অংশ হিসেবে অ্যাভিগান সরবরাহের কথা জানান। এর সাথে ১০ লাখ মার্কিন ডলার ওই দেশগুলোতে দেয়া হবে।

বিষয়টি অদ্ভুত শোনালেও সত্য যে, জাপান সরকার তাদের মানবিক সাহায্যে তহবিলের অংশ হিসেবে, মানবিক বিপর্যয়ে অ্যাভিগান সারা বিশ্বে ‘আপাতত’ বিনামূল্যে সরবরাহ করবে বলে ঘোষণা দেয়। অ্যাভিগানের কোন বাজার মূল্য নির্ধারণ হয়নি। জাপান সরকার সিদ্ধান্ত নেন যে, তাদের অনুমতি ব্যতিত অ্যাভিগান তথা বিশ্বের কোন দেশেই বিক্রি কিংবা সরবরাহ করা হবে না বলে ২৭ মার্চ অ্যাভিগানের প্রস্ততকারক কোম্পানি ফুজিফিল্ম একটি বিবৃতি দেয়।

এরই অংশ হিসেবে ফুজিফিল্মের তয়োমা ফার্মাসিউটিক্যালস ইতিমধ্যে অ্যাভিগানের উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল পজিটিভ হওয়ার সাথে সাথে জাপান সরকার ঔষধটি বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করবে।

মানুষের জীবন বাঁচাতে জাপান সরকার যখন উদারতা দেখাচ্ছে, বিনামূল্যে ঔষধটি প্রদানের অঙ্গিকার করছে, ঠিক তখনই আমাদের দেশে একদল মানুষ এই ঔষধটি বাজারে বিক্রির জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। ইনবক্সে পাওয়া একটি ছবিতে দেখলাম ‘ফেভিপিরা ২০০’ নামের একটি ঔষধের প্যাকেটে মূল্য ৮০০০ টাকা। মানুষের পকেট কাটার এমন প্রচারণা ধিক্কারযোগ্য।

যে ঔষধের প্যারেন্ট কোম্পানি বিক্রি করার অনুমতি পায়নি, যে ঔষধটি এখনো ক্লিনিক্যাল পর্যায়ে উত্তীর্ণ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে, সেই ঔষধ নিয়ে ব্যবসা করার পায়তারা নোংরামি ছাড়া কিছুই নয়। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করার অধিকার তারা কোথায় থেকে পেল, তা বোধগম্য নয়।

২০১৪ সালের মার্চে যখন দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, কেবল জরুরি ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণে ঔষধটি ব্যবহার করা যাবে বলে অনুমোদন দিলেও সেই সময় তারা অ্যাভিগানের তিনটি ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেন, এগুলোর মধ্যে একটি গর্ভবতী মায়েদের ঝুঁকি আর দ্বিতীয়ত পুরুষের সিমেনের মান খারাপ হয়ে যাওয়া।

এইসব ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে, অ্যাভিগান কভিড-১৯ মাইল্ড উপসর্গধারীদের সেবনের পরামর্শ আসছে।

ফ্যাভিপিরাভিরের এই ঔষধটি যদি সত্যি সত্যি বাংলাদেশে বাজারে বিক্রি হতে শুরু করে, তাহলে সেটি হবে মারাত্মক ঝুঁকি। প্রথমত, ঔষধটি বিক্রির অনুমতি জাপান কাউকে দেয়নি, দ্বিতীয়ত স্থানীয় ভাবে উৎপাদিত ঔষধটির এখনো কোন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফল নেই, কিংবা এর গুণগত মানের সাথে অ্যাভিগানের সম্পর্ক কেমন তাও জানা নেই।

তাই বাংলাদেশ সরকারের কাছে অনুরোধ করবো, মানবিক এই সংকটকে পুঁজি করে যারা ব্যবসায় নামছে তাদের বিষয়ে সতর্ক হোন। কোটি কোটি টাকার প্রণোদনা দিয়ে ঔষধ কেনে জনগণকে দেয়ার আগে এই ঔষধটির কার্যকারিতা নিয়ে ভাল করে পরীক্ষা করুন। আমি আগেও বলেছি, আবারও বলেছি, কূটনৈতিক তৎপরতায় আপনারা অনায়াসে অ্যাভিগান বাংলাদেশে পেয়ে যেতে পারেন। মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তিকে খুশি করার জন্য, মানুষের এই বিপদের মুহূর্তে কাউকে জীবন নিয়ে খেলা করতে দেবেন না।

এস এম নাদিম মাহমুদ, গবেষক, ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ