আজ বৃহস্পতিবার, ০২ মে, ২০২৪

Advertise

কোনদিকে যাচ্ছে করোনা পরিস্থিতি

ড. শামীম আহমেদ  

করোনাভাইরাসে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা ১০ লক্ষ ছাড়িয়েছে। আমার মনে আছে আমি শুরুর দিকে বৈশ্বিক মহামারির গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলেছিলাম মৃত্যুর সংখ্যা হতে পারে ৫-৭ লক্ষ। এখন দেখা যাচ্ছে করোনাভাইরাস প্রাথমিক ধারণার চাইতেও ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। আমার শুরুর দিকের লেখাগুলোয় আমি যখন উল্লেখ করেছিলাম, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হার ৪ শতাংশের মতো, তখন এপিডিমিওলোজির মহামারির সংজ্ঞা দেখিয়ে কেউ কেউ বলছিলেন যে মৃত্যুর হার ২০ শতাংশের উপর। তারা দাবি করছিলেন, সর্বমোট আক্রান্তের হিসেব না করে শুধু মাত্র আক্রান্তের পর সুস্থ অথবা মৃতের তথ্য নিয়ে মৃত্যু হার নির্ণয় করতে হবে (কেইস ফ্যাটালিটি রেইট)। অন্যদিকে এই মহামারি যেহেতু দীর্ঘমেয়াদী হবে, আমি বলেছিলাম যে আদতে দুই সপ্তাহের অপেক্ষার যে সময়কাল, সেটি এই ক্ষেত্রে শুরুর কয়েক মাস এবং শেষের কয়েক মাস ছাড়া প্রযোজ্য হবে না (একচুয়াল ডেথ রেইট)।  এখন দেখা যাচ্ছে এই ধারণাটিই সঠিক ছিল। সারা বিশ্বব্যাপী ফয়সালা হয়ে যাওয়া সংখ্যা (কমপক্ষে আড়াই কোটি) বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে মৃত্যুর হার ৪ শতাংশের মতো। এটি সামনে আরও কমতে পারে বলে আমি অনুমান করি, সম্ভবত বাড়বে না।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের হার অক্টোবর ২০২০ এর পর কোন দিকে যেতে পারে?
করোনাভাইরাসে মানুষ কি সামনের দিনগুলিতে বেশি আক্রান্ত হবে না কম আক্রান্ত হবে? মৃতের সংখ্যা কি বাড়তে থাকবে না কমতে থাকবে? এই বিষয়গুলো বোঝার জন্য আমি “পাবলিকলি এভেইলেবল” দুটো গ্রাফ ব্যবহার করে আমাদের সাধারণ মানুষের ভাষায় লিখব। এমনিতে রোগের গতি-প্রকৃতি বোঝার জন্য আমরা যেসব গ্রাফ দেখি সেখানে “লিনিয়ার প্রগ্রেসন” দেখানো হয়। অর্থাৎ সর্বমোট আক্রান্ত বা মৃতের সংখ্যার নির্ধারিত সময়কালের একটি পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্টের মাঝে সমান ব্যবধান ধরা হয়। যেমন ১০ মিলিয়নের পর ২০ মিলিয়ন। ২০ মিলিয়নের পর ৩০ মিলিয়ন। কিন্তু মহামারিতে যেহেতু মানুষ অতি দ্রুত আক্রান্ত হতে থাকে এবং অনেক ক্ষেত্রেই একবার আক্রান্ত হলে পরবর্তীতে আক্রান্ত নাও হতে পারে, সেহেতু এখানে “লিনিয়ার প্রগ্রেসান” কিংবা দুটো সময়ের মাঝে একটি পয়েন্ট থেকে আরেকটি পয়েন্টের ব্যবধান সমান ধরলে সঠিক “ফোরকাস্ট” বা ধারণা পাওয়া নাও যেতে পারে। নিচের গ্রাফটিতে “লিনিয়ার প্রগ্রেসান” ব্যবহার করা হয়েছে। আপনারা যদি এই গ্রাফটি ব্যবহার করেন, তাহলে মনে হবে করোনায় আক্রান্ত এবং মৃতের হার দুটোই হু হু করে বাড়ছে।
 
আসুন এবার দেখা যাক “লগারিদম প্রগ্রেসান” ব্যবহার করলে কী দেখা যায়। লগারিদম প্রগ্রেসানে সময়ের ক্ষেত্রে দুটো পয়েন্টের মাঝে সমান ব্যবধান রাখা হয় না। এখানে মহামারির অবস্থা বিবেচনা করে দ্রুত বৃদ্ধির প্রতিফলন তুলে ধরা হয়। যেমন নিচের গ্রাফে দেখবেন, আক্রান্তের ক্ষেত্রে ১ মিলিয়নের পর ২ মিলিয়ন নয়, বরং ১০ মিলিয়ন; এবং তারপর ১০ মিলিয়ন থেকে ১০০ মিলিয়ন হিসেবে এনে গ্রাফ আঁকা হয়েছে যাতে বাস্তব চিত্র বোঝা যায়। একই কাজ করা হয়েছে মৃত্যুর সংখ্যা দেখানোর গ্রাফের ক্ষেত্রেও।
 
আমরা যদি “লিনিয়ার প্রগ্রেসান” ব্যবহার করা প্রথম গ্রাফটি দেখি, তাহলে যেখানে আমাদের মনে হচ্ছিল আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, সেখানে “লগারিদম প্রগ্রেসান” ব্যবহার করা দ্বিতীয় গ্রাফের দিকে তাকালে দেখব আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু তা আগের চাইতে অনেক কম হারে বাড়ছে। অর্থাৎ বাড়ার সংখ্যা না কমলেও বাড়ার হার কমছে।

আমি যদি এই দুটো গ্রাফ বিশ্লেষণ করে সোজা ভাষায় কোন জনস্বাস্থ্যের ধারণা জানাতে চাই, তাহলে আমার অনুমান আগামী ৬ মাসের মধ্যে আক্রান্তের হার এবং মৃতের হার দুটোই প্রথমবারের মতো সত্যিকারে কমতে থাকবে। মনে রাখবেন, আমার এই হিসেব-নিকেশের মধ্যে ওষুধ বা ভ্যাক্সিন ধরা নেই। আমি ধরে নিচ্ছি আগামী ৬ মাসের মধ্যে করোনাভাইরাস প্রতিরোধক কোন ওষুধ বা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হয়ে মানুষের কাছে পৌঁছুবে না।

সংখ্যা নিয়ে দু-চার আলাপ
অতীতের মহামারিগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, কোন মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃতের গ্রাফ যখন নিচের দিকে নামা শুরু করে (উপরে ব্যবহার করা ছবিগুলো দেখতে পারেন চাইলে) তখন থেকে মহামারি শেষ হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা অন্তত তার আগের সংখ্যার সমান হয়। ব্যাপারটা আরেকটু সহজ করে করোনার প্রেক্ষিতে বলা যাক। আমরা যদি অতীতের মহামারিগুলোর গতি-প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করি, তাহলে সেই উদাহরণ বিবেচনায় আমাদের হিসেব কষে দেখতে হবে যে করোনা ভাইরাসের গ্রাফ নিম্নমুখী শুরু হবার আগ পর্যন্ত কত মানুষ আক্রান্ত ও মারা গেছেন। করোনা ভাইরাসে যেহেতু আজ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০ লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছেন, তাই আজ থেকে গ্রাফ নিম্নমুখী হলেও স্বাভাবিক পরিসংখ্যানের হিসেবে করোনা ভাইরাসে কমপক্ষে আরও ১০ লক্ষ মানুষ মারা যেতে পারেন। গ্রাফটি নিম্নমুখী হতে যদি আরও ৩ মাস সময় লাগে, তাহলে ওই ৩ মাসে যদি আরও আড়াই লক্ষ মানুষ মারা যান; তাহলে করোনা ভাইরাসে সর্বমোট মৃতের সংখ্যা ছুঁতে পারে ২৫ লক্ষ। মনে রাখবেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা ইতিমধ্যে বলেছে তারা আশংকা করছে করোনা ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ২০ লক্ষ হতে পারে। আমাদের এইসব ধারণাই পূর্বে প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের বিশ্লেষণের উপর নির্ভর করে, যাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলে “ট্রেন্ড এনালাইসিস”, এবং এর হেরফের হওয়া একদমই অসম্ভব নয়।

অন্যদিকে করোনাভাইরাসে শেষ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা কত হবে যদি আমাকে অনুমান করতে বলেন, তাহলে আমি উপরের হিসাবঅনুযায়ী বলব, আগামী ৩ মাসের মধ্যে যদি আক্রান্তের গ্রাফ নিম্নমুখীও হওয়া শুরু করে তাহলেও সেটি ১০ কোটির কাছাকাছি পৌঁছে যাবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে। আর যদি ভ্যাক্সিন বা ওষুধ আবিষ্কৃত না হয়, তাহলে করোনা ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হতেই থাকবে এবং এক সময় সেটি বিশ্বের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে আক্রান্ত করবে, অর্থাৎ আগামী এক দশকে ৫০০ কোটি মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে যদি তাদেরকে ভ্যাক্সিন না দেয়া যায়। এখন টেস্ট না করলে সংখ্যাটি জানা যাবে না, কিন্তু হিসাবটা এমনি হতে পারে।  

ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হলে কী হবে?
ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হওয়া খুব জরুরি। অনেকগুলো ভ্যাক্সিন ট্রায়াল ইতিমধ্যে অনেকদূর এগিয়ে গিয়েছে, এবং অনেকেই আশা করছেন আগামী ডিসেম্বর ২০২০ এর মধ্যে হয়ত ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হবে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য যে ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হওয়া মানেই করোনা থেকে মুক্তি নয়।

একটি ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হওয়ার পর সেটি উৎপাদন করে বাজারজাতকরণ এবং পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের সবার কাছে পৌঁছে দেয়া ন্যূনতম ২ বছরের ধাক্কা। এই ভ্যাক্সিনের দাম কী হবে, কারা আগে পাবে, কীভাবে পাবে এখানে অনেক রাজনৈতিক এবং কূটনৈতিক বিষয় আছে। তাছাড়া এই ভ্যাক্সিনটির মেয়াদ কতদিনের হবে? শোনা যাচ্ছে, ভ্যাক্সিনটির মেয়াদ হবে দুই বছরের। সেই ক্ষেত্রে দুইবছর পর যদি সেটি আবারও ৭০০ কোটি মানুষের সবাইকে নিতে হয়, তাহলে করোনা ভাইরাস একেবারে নির্মূল করা দুঃসাধ্য হতে পারে। মনে রাখা দরকার “স্মপ্ল পক্স” ছাড়া আর কোন মহামারিই সাম্প্রতিক অতীতে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি।

ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত হিসেবটি আরও জটিল হয়ে যাবে যদি একবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হয়েছে এমন ঘটা শুরু করে। কারণ সেই ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিনের কার্যকারিতাও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে।

কারা আক্রান্ত হচ্ছেন এখন? কেন আক্রান্ত হচ্ছেন?
করোনাভাইরাসের শুরুর কালে যেমন ষাটোর্ধ মানুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছিলেন, এখন আর তা হচ্ছে না। আমেরিকার সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনসান বলছে, গত কয়েকমাসে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ২০-৪০ বছর বয়সী মানুষেরা। অনেকক্ষেত্রেই “এসিম্পটোমেটিক” এবং “প্রিসিম্পটোমেটিক” সংক্রমণ বাড়ছে এই জনগোষ্ঠীর মধ্যে। অর্থাৎ অনেক ক্ষেত্রেই তারা লক্ষণ প্রদর্শন না করে বা সামান্য লক্ষণ প্রদর্শন করেই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছেন।

করোনার শুরুর দিকে যেহেতু বয়স্ক মানুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছিলেন, তারা ইতিমধ্যে সতর্ক হয়েছেন, এবং অনেকেই সম্পূর্ণভাবে ঘরে অবস্থান করছেন, যেখানে যতদূর সম্ভব। অন্যদিকে যেহেতু তরুণদের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা খুবই কম ছিল, এবং মৃতের সংখ্যা ছিল নগণ্য, তাই পশ্চিমা বিশ্বের গরমকালে তারা বাইরে ঘুরে বেড়িয়েছেন, মানুষের সাথে মিশেছেন এবং এই সংক্রমণ বাড়তে সহায়তা করেছেন। সামনের দিনগুলিতে খেয়াল রাখতে হবে যে তরুণরা যাতে সংক্রমণ বয়ে এনে বয়স্ক মানুষ বা অন্যান্য গুরুতর রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিতে সংক্রমিত না করেন যাদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাস
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লক্ষ ৬০ হাজার ছাড়িয়েছে, মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫ হাজার ২০০’র বেশি।  সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যায় বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১৫টি দেশের মধ্যে থাকলেও মৃতের সংখ্যায় আমরা তালিকায় এর চাইতে অনেকটা নিচে, যেটি আশার কথা। বাংলাদেশের বস্তিগুলোতে করোনায় আক্রান্তের হার কম বলে গবেষণায় পাওয়া যাচ্ছে, কিন্তু তার কারণ কী, সেই বিষয়ে আরও গবেষণা করা দরকার বলে মনে করি। অতি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়ায় আক্রান্তের হার যেমন আমাদের বেশি, তেমন এই রোগের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রতিরোধ ব্যবস্থাও গড়ে উঠবার কথা স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু করোনাভাইরাসের সময়কালে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভয়াবহ অন্তঃসারশূন্য চিত্র আরেকবার দেখা গেছে। এই বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বে বিশ্বের সম্ভাব্য নানা ভ্যাক্সিন উৎপাদনকারী দেশের সাথে আলোচনা চলছে যাতে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারভিত্তিতে এই ভ্যাক্সিন পেতে পারে। এই চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে সামনের দিনগুলিতেও।

করোনা প্রতিরোধে করণীয়
করোনা প্রতিরোধে করণীয়তে তেমন পরিবর্তন আসেনি, বরং ব্যাপারগুলো আরও সহজ হয়েছে, এবং মানুষ জেনেছে। এখন শুরু খেয়াল করে এগুলো মেনে চলা; যেমন:

নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করা
বাংলাদেশের মতো ঘনবসতিপূর্ণ দেশে ঘরের বাইরে গেলেই মাস্ক ব্যবহার করা উচিৎ। দুজন মানুষের মধ্যে ৬ ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করা গেলে মাস্কের প্রয়োজন না থাকলেও, খুব কম ক্ষেত্রেই ঘরের বাইরে সার্বক্ষণিক এই দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হয়। মাস্ক ব্যবহার করলে হাঁচি কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস অন্য মানুষকে আক্রান্ত করবার সম্ভাবনা বহুলাংশে কমে যায়। আরামদায়ক মাস্ক খুঁজে, কিনে বা বানিয়ে পরা উচিৎ, কেননা, ভ্যাক্সিন আসার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরতে হবে, এবং যে মাস্ক আরামদায়ক না, মানুষ সেটি ব্যবহারে অনুৎসাহিত হবে।  

হাতের তালু বা আঙুল দিয়ে কম জিনিস স্পর্শ করা
এর কারণ হচ্ছে মানুষ হাতের তালু বা আঙুল দিয়ে প্রায় নিজের মুখ বা নাক স্পর্শ করে এবং এভাবে করোনাভাইরাস অন্য বস্তু থেকে হাতের মাধ্যমে নাক বা মুখ দিয়ে আমাদের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। তাই বলা হয় পারলে লিফটের বাটন কনুই দিয়ে স্পর্শ করা উচিৎ। গ্লাভস ব্যবহার করা জরুরি নয়। কোন বস্তু হাত দিয়ে স্পর্শ করলে হাত স্যানিটাইজ অথবা ধুয়ে নিতে হবে।

পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ
যেহেতু করোনাভাইরাস সহসা নির্মূল হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না, তাই পুষ্টিকর খাবার মাধ্যমে নিজের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো দরকার। দুইবেলা মাছ-ভাত-মাংসই কিন্তু পুষ্টিকর খাদ্য নয়। একেকজনের শরীরে একেকরকম পুষ্টি চাহিদা আছে, এটি ডাক্তার বা পুষ্টিবিশেষজ্ঞের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। ভবিষ্যতের অন্য রোগ থেকেও তা আমাদের রক্ষা করতে পারে। প্রতিদিন নিয়ম করে ন্যূনতম ১০ হাজার পা হাঁটা উচিৎ। সাথে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম ও ৪ লিটার পানি।

শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা
এড়িয়ে যাওয়া যায় এমন মেলামেশা কমিয়ে দেয়া। পিকনিক, বনভোজন, রাস্তার মোড়ে আড্ডা ইত্যাদি কিছুদিনের জন্য না করলে মন্দ হয় না। অফিস-আদালতে সবার একসাথে উপস্থিতি জরুরি নয়। সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে। ফোনে, ভিডিও চ্যাটে প্রিয়জন, অফিস কলিগদের সাথে যোগাযোগ রাখুন। কিন্তু বিয়ে, বৌভাত, জন্মদিনের পার্টি ইত্যাদিতে শারীরিক উপস্থিতি আপাতত নয়। শারীরিক উপস্থিতি এড়ানো না গেলে সামাজিক আয়োজনে নিজেদের মধ্যে দূরত্ব ৬ ফুট রাখা এবং মাস্ক পরার চেষ্টা করা বাঞ্ছনীয়।

দয়ালু হওয়া
এটি একটি অস্বাভাবিক সময়। এমন সময় গত ১০০ বছরেও মানুষের জীবনে আসেনি। তাই নিজেদের প্রতি, পরিবারের প্রতি, প্রতিবেশীর প্রতি দয়ালু হোন। সবার বিপদ-আপদের খবর নিয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করুন। একসময় মহামারি কেটে যাবে, কিন্তু স্মৃতি তা সুখকর অথবা বিষাদময় যাই হোক না কেন, থেকে যাবে।

এছাড়াও আপনার আশেপাশে হাসপাতালের, ডাক্তারের, এম্বুলেন্সের ফোন নাম্বার যোগাড় করে রাখুন। করোনা সংক্রান্ত বিশ্বস্ত এবং গ্রহণযোগ্য তথ্যাদি হাতের কাছে রাখুন যাতে প্রয়োজনের সময় খুঁজে পান।

শেষের কথা
আশার কথা,  মানুষ সচেতন হচ্ছে, মৃত্যুর হার কমছে। ভ্যাক্সিন আসছে এই কারণে যদি আমরা বাকি সব চেষ্টা থামিয়ে দিই, তাহলে করোনা আমাদের আরও বহুবছর ভোগাবে। তাই মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করে, রোগ প্রতিরোধে সতর্ক থাকতে হবে। শুভ কামনা সবার জন্য।

ড. শামীম আহমেদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সামাজিক-বিজ্ঞান গবেষক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৩ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ