প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এনামুল হক এনাম | ২৬ জানুয়ারী, ২০২১
ভ্যাকসিন বা টিকা কী?
ভ্যাকসিন বা টিকা হল কৃত্রিম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা মানুষের শরীরে প্রবেশ করিয়ে “নির্দিষ্ট” রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করা হয়। তখন ঐ রোগের রোগ জীবাণুর সংস্পর্শে এলেও মানুষ আর আক্রান্ত হয় না। যেমন মুখে খাওয়ার পোলিও ভ্যাকসিন ও আইপিভি পোলিও রোগ প্রতিরোধ ও নির্মূলে ব্যবহার করা হয় বা যক্ষ্মা প্রতিরোধে জন্মের পর পর বা ৪২ দিনের ভেতর বিসিজি ভ্যাকসিন দেয়া হয়।
ভ্যাকসিন কীভাবে কাজ করে?
রোগজীবাণু থেকেই ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হয়। রোগ জীবাণুর দুটি বৈশিষ্ট্য থাকে- রোগ সৃষ্টি করা (Pathogenecity) এবং দেহের অভ্যন্তরে একই রোগের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য ক্ষমতা (Antibody) তৈরি করা। ভ্যাকসিন তৈরির সময় জীবাণুর রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেওয়া হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বলিষ্ঠ করা হয়। কিন্তু সহজ করে বলতে গেলে, রোগ সৃষ্টির ক্ষমতাহীন জীবাণুকেই ভ্যাকসিন হিসেবে প্রস্তুত করে মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয়, যার শুধুমাত্র রোগপ্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে। আরেকটি সুবিধা হল এই জীবাণুগুলো মেমরি সেল গঠন করে ফলে পরবর্তীতে একই জীবাণু পুনরায় প্রবেশ করলে সহজে সনাক্ত করতে পারে। এভাবে ভ্যাকসিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে দেয়।
এখন পর্যন্ত কতগুলো স্বীকৃত ভ্যাকসিন আছে?
বিশ্ব স্বাস্থ্য-সংস্থা এখন পর্যন্ত ২৫টি রোগের তালিকা করেছে যেগুলোকে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা হয়।
ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ভ্যাকসিন পুরোপুরি নিরাপদ নিশ্চিত হওয়ার পরই তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পায়। তাই সকল ভ্যাকসিনই নিরাপদ এবং বড় ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যা দ্রুত সেরেও যায়। যে কোন ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেই সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলো হল: ব্যথা এবং ভ্যাকসিন প্রদানের স্থান ফুলে যাওয়া বা লাল হয়ে যাওয়া, মৃদু জ্বর, শীত শীত ভাব, ক্লান্তি, মৃদু মাথা ব্যথা, শরীরে ব্যথা। প্রত্যেকটি মানুষই স্বতন্ত্র শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার অধিকারী, তাই ব্যক্তির ভিন্নতায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হয়। তবে তা কখনোই বিপদসংকুল কিছু নয় এবং এই ধরণের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই ভাল হয়ে যায়।
ভ্যাকসিনের গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
না, ভ্যাকসিনের কোন গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তবে প্রতি ১০লক্ষ ভ্যাকসিন গ্রহণকারীর মধ্যে ২/১জনের আলার্জিক রি-একশন জনিত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
কাদের ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত?
শারীরিক ভাবে সুস্থ প্রত্যেকটি মানুষ ভ্যাকসিন নিতে পারে।
কাদের ভ্যাকসিন নেয়ার পূর্বে সতর্ক অবলম্বন করা উচিত?
ভ্যাকসিন নেয়ার দিনে সর্দি, জ্বর, পাতলা পায়খানাসহ শারীরিক দুর্বলতা বা অসুস্থতা থাকলে ভ্যাকসিন গ্রহণে সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার পূর্বে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিতে হবে। নিজের কোন শারীরিক অসুস্থতা গোপন করে কখনোই ভ্যাকসিন নেয়া উচিত নয়।
করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন কি নিরাপদ?
দেশভেদে এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া নিরাপদ ভ্যাকসিনগুলোর তালিকায় অন্যতম হল, অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনখ্যাত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা (Oxford-AstraZeneca), মর্ডানা (Moderna), ফাইজার বায়োএনটেক (Pfizer-BioNTech) ভ্যাকসিন।
করোনা প্রতিরোধে বাংলাদেশে কোন ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে?
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হবে। একই ভ্যাকসিন যুক্তরাজ্যেও প্রয়োগ করা হচ্ছে।
বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিন কি ভারতীয়?
না, এটা যুক্তরাজ্যের ভ্যাকসিন। কোভিশিল্ড নামের এই ভ্যাকসিন তৈরি করেছে ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট। ভ্যাকসিন প্রস্তুতে ভারতের দীর্ঘদিনের দক্ষতা ও সুনাম রয়েছে বিধায় এই দায়িত্ব যুক্তরাজ্য থেকে ভারতকে দেয়া হয়েছে। বিশ্বে প্রস্তুত ভ্যাকসিনের ৬০ভাগ ভারত একাই উৎপাদন করে।
করোনা ভ্যাক্সিনে কি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে?
অন্যান্য ভ্যাকসিনের মতই করোনা ভ্যাক্সিনেও মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হত পারে। যেমন, মৃদু জ্বর, শীত শীত ভাব, ক্লান্তি, মৃদু মাথা ব্যথা, শরীরে ব্যথা।
এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কি গুরুতর কিছু?
এখন পর্যন্ত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের গুরুতর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন কি নিরাপদ?
যুক্তরাজ্যের মত দেশ নিজের জনগণের জন্য যে ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলা অবান্তর। এই ভ্যাকসিন এখন পর্যন্ত শতভাগ নিরাপদ।
পত্রপত্রিকায় যে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং মারা যাওয়ার খবর দেওয়া হয় তা কি সত্য নয়?
কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া গুরুতর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। ভারতে তিন লক্ষ ভ্যাকসিন নেয়া জনগণের মধ্যে যে একজন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, ময়না তদন্তে দেখা গেছে তিনি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মারা গেছেন। কোন এলাকায় যদি একই দিন তিন লক্ষ লোককে এক গ্লাস করে বিশুদ্ধ পানিও খাওয়ানো হয় তবে এর মধ্যে বেশ কিছু লোক স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায়ই অসুস্থ হবে,এবং দু একজন দুর্ঘটনা বা অসুস্থতার জন্য মারাও যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, একটি ভ্যাকসিন পুরোপুরি নিরাপদ নিশ্চিত না হয়ে কখনোই তার অনুমোদন দেয়া হয় না।
বাংলাদেশের সবাইকেই কি করোনা ভ্যাকসিন নিতে হবে?
আপাতত ৬০/৭০ ভাগ জনগণকে ভ্যাকসিন নিলেই চলবে। পরবর্তীতে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। বাংলাদেশে শতকরা ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটি হবে সাড়ে ১৩ কোটি'রও বেশি।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের মোট কয়টি ডোজ?
মোট দুইটি ডোজ।
যদি কেউ ভ্যাকসিন না নিতে চায়!
এক্ষেত্রে সরকারের পলিসি নমনীয়, যারা ভ্যাকসিন নিতে চাইবে না তাদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে না।
কারা ভ্যাকসিন আগে পাবে?
ইতিমধ্যে সরকার অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ফ্রন্ট-লাইন ফাইটার এবং বয়স্ক জনসাধারণকে আগে ভ্যাকসিন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারী অ্যাপ এবং ওয়েবসাইটে রেজিট্রেশনের মাধ্যমে ভ্যাকসিনের জন্য নিবন্ধন করতে হবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য