আজ বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Advertise

কেন করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নেবেন?

ড. শামীম আহমেদ  

সর্বসাধারণের ব্যবহারযোগ্য করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বের হয়েছে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে। পৃথিবীর বেশ কিছু দেশে ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ তার মধ্যে প্রথম সারিতেই আছে। অনেকের মধ্যেই ভ্যাকসিন নেয়া বা দেয়া নিয়ে দ্বিধা আছে। একজন জনস্বাস্থ্যকর্মী হিসেবে আমি মনে করি সুযোগ থাকলে আপনার করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নেয়া উচিৎ। তবে আপনার যদি কোন গুরুতর শারীরিক অসুস্থতা থাকে, তবে আপনার নিয়মিত চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে তবেই ভ্যাকসিন নেবেন। চলুক দেখা যাক কেন আপনার/আমার ভ্যাকসিন নেয়া উচিৎ?

১) এই ভ্যাকসিন নিরাপদ: বর্তমানে যে ৩টি ভ্যাকসিন সকল স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেয়া হচ্ছে সেগুলো হচ্ছে ক) ফাইজার ও বায়োনটেক ভ্যাকসিন খ) মর্ডানার ভ্যাকসিন এবং গ) অক্সফোর্ড এঅ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন। এছাড়াও রাশিয়া-চীনসহ নানা দেশ নিজেদের ভ্যাকসিন বের করার চেষ্টা করছে কিন্তু সেগুলো এখনও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃত হয়নি। যে ৩টি ভ্যাকসিন সর্বজন স্বীকৃত সেগুলো প্রয়োজনীয় গবেষণার মানদণ্ড মেনে, নানা ধাপ পেরিয়ে তবেই স্বীকৃতি পেয়েছে। সুতরাং আপনি যদি এই ৩টি ভ্যাকসিনের যে কোন একটি নেবার সুযোগ পান, তবে অবশ্যই এই ভ্যাকসিন নেবেন। এছাড়াও সামনে জনসন ও জনসনের একটি ভ্যাকসিন আসছে যেটি ইতিমধ্যে অন্যগুলো থেকেও সার্বিকভাবে বেশী গ্রহণযোগ্য হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

২) অক্সফোর্ড এস্ট্রাযেনেকা ভ্যাকসিন ভারতের নয়, ভারতে প্রস্তুত হচ্ছে বলে অক্সফোর্ড-এস্ট্রাযেনেকা ভ্যাকসিন নিয়ে অনেকের মনে দ্বিধা আছে। প্রতিবেশী হিসেবে ভারতের আচরণ নিয়ে সন্দেহ থাকা অমূলক নয়। কিন্তু করোনা প্রতিরোধে ভ্যাকসিন উৎপাদনে ভারতের যে ভূমিকা তা নিয়ে বিতর্কের তেমন কোন সুযোগ নেই। করোনা ভাইরাস নির্মূল করতে হলে পৃথিবীর সকল মানুষকেই ভ্যাকসিন দেয়া জরুরী। এখন ৭০০ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য যে পরিমাণ ভ্যাকসিন বানানো দরকার সেটা প্রস্তুত করার সক্ষমতা পৃথিবীর খুব বেশী দেশের নেই। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। তারা করোনার আগেও পৃথিবীর নিত্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিনের প্রায় ৮০ ভাগ উৎপাদন করে বিভিন্ন দেশে পাঠিয়ে আসছিল। অক্সফোর্ড-এস্ট্রাযেনেকা ভ্যাকসিনের কারিগরি দিক-নির্দেশনা, ফর্মুলা সবই অক্সফোর্ডের, ভারত শুধু উৎপাদনকারী দেশ, এর বেশী কিছু না। সুতরাং ভারতকে বিশ্বাস না করলেও এই ভ্যাকসিনকে বিশ্বাস করতে কোন সমস্যা নেই। যে ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসছে সেটি ভারতের আভ্যন্তরীণ গবেষণাধীন কোন ভ্যাকসিন নয়, যুক্তরাজ্যের নামকরা অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাকসিন।  

৩) ভ্যাকসিন ছাড়া করোনাভাইরাসে মৃত্যু ঠেকানোর বিকল্প নেই বললেই চলে এটি পরিষ্কার করে উল্লেখ করা দরকার যে করোনাভাইরাস এমন একটি মহামারীর জন্ম দিয়েছে যা পৃথিবীর সকল দেশের, সকল অঞ্চলের, সকল ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষকেই আক্রান্ত করেছে। কোথাও বেশী কোথাও কম। ভ্যাকসিনই এখন পর্যন্ত একমাত্র কার্যকরী উপায় যার মাধ্যমে করোনাভাইরাসে মৃত্যু থেকে বাঁচা সম্ভব। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে ভ্যাকসিন নিলেও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে, কিন্তু ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, ভ্যাকসিন নিলে কেউ যদি আক্রান্তও হয়, তবে এই ভ্যাকসিন সেই ভাইরাসকে দুর্বল করে ফেলবে, যা আক্রান্ত ব্যক্তিকে মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থ হওয়া থেকে বাঁচাবে।  

৪) করোনাভাইরাস মহামারীতে হার্ড ইমিউনিটি হবে না জনস্বাস্থ্যের একজন মামুলি ছাত্র হিসেবে সাহস করে একটা বড় কথা বলে ফেলি । সেটা হচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরু থেকেই আমরা হার্ড-ইমিউনিটির কথা বলছিলাম। এটি একটি জটিল ধারণা সাধারণ মানুষের জন্য। কিন্তু মূল বিষয়টি হচ্ছে যদি একটি নির্দিষ্ট এলাকার ৮০ ভাগ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যায়, তবে বাকি ২০ ভাগের আর এই রোগ হবে না। কারণ:

ক) যারা আক্রান্ত হয়ে যাবে তাদের আর সংক্রমণের ভয় নেই। 

খ) ৮০ ভাগ মানুষ যদি আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে যায় তাহলে বাকি ২০ ভাগ মানুষকে আক্রান্ত করার জন্য আর কেউ ওই এলাকায় বাকি থাকবে না।
 
কিন্তু এটা করোনা ভাইরাসের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর কারণ হল

ক) করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কোন নির্দিষ্ট এলাকায় হয়নি। সারা বিশ্বে হয়েছে। সুতরাং আপনি কোন একটা নির্দিষ্ট এলাকাকে আলাদা করে তাদের সংরক্ষিত রাখতে পারবেন না। বর্তমান বৈশ্বিক যোগাযোগের যুগে এক এলাকার মানুষ অন্য এলাকায় যাবেই। সুতরাং কোন নির্দিষ্ট এলাকা বা জনগোষ্ঠী আলাদা করে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করবে না।

খ) করোনা ভাইরাসে আপনি একবার আক্রান্ত হলেই যে সেটি আর হবে না এমনটি কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না। এখন পর্যন্ত তথ্য-উপাত্ত দেখে মনে হচ্ছে যে যারা একবার আক্রান্ত হয়, তাদের দ্বিতীয়বার এই সংক্রমণ হয় না, কিন্তু এটি নিশ্চিত করে বলার জন্য যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত আমাদের হাতে নেই।

সুতরাং হার্ড-ইমিউনিটি হয়ে যাবে, ভ্যাকসিনের দরকার নেই – এটি ভ্রান্ত ধারণা।

৫) মাস্ক পরা, হাত-ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে ভালো, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী যথেষ্ট নয়ঃ মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা অনেক ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকার জন্যই ভালো এবং ক্ষণস্থায়ী ব্যবস্থা। কিন্তু এই তিনটির নিয়মিত বাস্তবায়ন বছরের পর বছর ধরে বজায় রাখা সম্ভব নয়। এছাড়াও মাস্কের ধরণ ও তার বর্তমান যে ব্যবহার দেখা যাচ্ছে, তা করোনার মতো ভাইরাস প্রতিরোধে কতটা কার্যকরী তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। হাত ধোয়া সবসময়ই ভালো অভ্যাস, কিন্তু করোনা ভাইরাস অনেক সময়েই সরাসরি বাতাসে ভেসে ছড়ায় এবং ফলশ্রুতিতে হাত নিয়মিত ধুলেও নানা উপায়ে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা প্রবলভাবে থেকে যায়। সার্বিক বিবেচনায় মানুষের পক্ষে মাস্ক পরে, হাত ধুয়ে এই ভাইরাস ঠেকানো দীর্ঘমেয়াদী সম্ভব হবে না। এছাড়া দীর্ঘদিনের জন্য শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব না। এগুলো সবই ছিল ভ্যাকসিন আবিষ্কারের আগের পদক্ষেপ। এখন যেহেতু ভ্যাকসিন

ড. শামীম আহমেদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও সামাজিক-বিজ্ঞান গবেষক।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৫ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১১০ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪৪ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৩ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ২৫ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ শাখাওয়াত লিটন শাবলু শাহাবউদ্দিন