Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ২২ মার্চ, ২০২১
ল্যাব থেকে বাসায় ফেরার পথে কয়েকদিন আগে এক সুপারশপে গিয়েছিলাম। শপে ঢোকার পর আমি খেয়াল করলাম, আমার মাস্ক ল্যাবে ভুল করে রেখে গিয়েছি। সবার মুখে মুখে মাস্ক। আমার মুখে মাস্ক না থাকায়, আমার বারবার মনে হচ্ছিল সবাই আমার দিকেই চেয়ে আছে। কেমন যেন অস্বস্তি লাগছিল। মুখটা কিছু দিয়ে ঢাকবো তাও উপায় নেই। উপায়ান্তর না পেয়ে তড়িঘড়ি করে কসমেটিক কর্নার থেকে মাস্ক কেনার পরই তা মুখে পরবার পর সেইদিন রক্ষা পেয়েছি।
আগে এক সময় মনে করা হতো, মাস্ক কোভিড সুরক্ষা দেয় না। আমি নিজেও সেই ভুল করেছি। কিন্তু জাপানিরা শুরু থেকে যেভাবে মাস্ক ব্যবহার করে এসেছে, তার ফলও তারা পেয়েছে।
রাস্তাঘাট কিংবা রেস্তোরায় সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, তা আপনি চাইলেও এড়িয়ে যেতে পারবেন না। মুখামুখি বসার তো সুযোগই নেই। বসলেও দুইজনের মাঝে স্বচ্ছ প্লাস্টিক রয়েছে, যাতে করে সরাসরি সংস্পর্শ না আসে।
বিষয়টি চোখে সামনে ঘটছে বলে সহজে তুলে ধরতে পারছি। বিশ্বের যে কয়েকটি দেশ কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কিনেছে, তাদের তালিকায় উপরের দিকে রয়েছে জাপান। তিন কোম্পানির কাছ থেকে প্রায় ২৯০ মিলিয়ন ডোজ কিনেছে তারা। গত মাসে মাত্র ১০ হাজার মেডিকেল কর্মীদের টিকা দেয়া হলেও ব্যাপক হারে দেয়া শুরু করেনি তারা। অথচ তাদের হাতে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে।
আমার জানা মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় কোভিড ভ্যাকসিন প্রয়োগ এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। কয়েক লাখ মানুষ ইতোমধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনিকার ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। এরপরও গত কয়েকদিন ধরে কোভিড আক্রান্ত যেভাবে বাড়ছে, তাতে অনেকেই মনে করতে পারে ভ্যাকসিন দিয়ে কী লাভ?
দেখুন, জানুয়ারির শুরু থেকে সারা বিশ্বেই কোভিড আক্রান্তদের সংখ্যা কমেছে। গত ১৬ মার্চ পর্যন্ত ৯০ মিলিয়ন মানুষ ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে। অথচ আমাদের দেশে ভ্যাকসিন নেয়ার পরও থেমে নেই সংক্রমণ। কিন্তু কেন?
আমার বিশ্বাস যারা ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছে, তাদের একটি বড় অংশ নিজেকেই কোভিড প্রতিরোধী মনে করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেনি। অনেকের ধারনা, ভ্যাকসিন নেয়া মানে হলো শতভাগ সুরক্ষা। কিন্তু আমাদের সেই ধারণা ভুল।
ভ্যাকসিন নেয়ার পরও ৩০ শতাংশ মানুষ অনিরাপদই থাকবে। আমরা এখনো বড় ডেটা পাইনি, যে বাংলাদেশে কতভাগ মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনটি নেয়ার পর ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে।
আমাদের দেশে নতুন কোন সার্স-কভ-২ ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণ ছড়াচ্ছে কি না তা নিয়ে স্টাডি হতে পারে। সরকার এই বিষয়টি কতটা গুরুত্ব দিয়েছে জানি না। তবে আমার মনে হচ্ছে, সাম্প্রতিক সময়ে অত্যন্ত সংক্রামক B.1.1.7 ভ্যারিয়েন্ট কিংবা 501Y.V2 দ্বারা যে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ছে, তার চেয়ে শক্তিশালী কোন ভ্যারিয়েন্ট এশিয়ায় তৈরি হতে পারে। পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ভারতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা।
মিছিল সমাবেশ, ওয়াজ মাহফিলে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা আজ অনেকেই প্রাণ সংহারের কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। আমাদের দেশে শতভাগ মানুষকে ভ্যাকসিন নেয়ার পরও অন্তত ছয় মাস থেকে এক বছর স্বাস্থ্যবিধির কঠোরভাবে মানতে হবে। ভ্যাকসিনের স্থায়িত্ব নিয়ে গবেষণার অগ্রগতি তেমন না হওয়ায় আমরা ঠিক জানি না, এই প্যানডেমিক কতদিন স্থায়ী হবে।
তাই সরকারের উচিত হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোরতা অবলম্বন করা। সেটা করা না গেলে, আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়বে তা অনায়াসে বলা চলে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য