প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
ড. শামীম আহমেদ | ২৬ জুন, ২০২১
করোনা নিয়ে দুটো কথা বলি। নীতি-নির্ধারকরা নাখোশ হবেন, কিন্তু যেহেতু আমি লিখি সাধারণ মানুষের জন্য, এবং জনস্বাস্থ্য কর্মী হিসেবে আমাদের দেশের মানুষের কাছে আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে, তাই নীতিনির্ধারকগণ কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও সাধারণ মানুষের জন্য আমাকে লিখতেই হচ্ছে।
১.
গরীব ঘরের বাবা মার অনেক কষ্ট। বাচ্চা মাছ মাংস খেতে চায়, তারা সব সময় দিতে পারেন না। বাচ্চাকে কোনোমতে শাক, লতা-পাতা দিয়ে ভাত খাওয়ান, আর প্রতিবেলা আশ্বাস দেন পরেরবেলায় গোশত রাঁধবেন। ইদ-চান্দ ছাড়া সেই গোশত আর আসে না।
২
করোনা ভাইরাসের যখন সংক্রমণ হলো, সারা বিশ্ব বিপর্যস্ত, ওষুধ নাই, ভ্যাক্সিন নাই, আইসিইউ নাই, পিপিই নাই, ভ্যান্টিলেশনের ব্যবস্থা নাই– তখন আমার মতো সামাজিক ও আচরণগত বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা জনস্বাস্থ্যের মানুষরা আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে মানুষকে বার বার হাত ধুতে বললাম, দূরত্ব বজায় রাখতে বললাম, মাস্ক পরতে বললাম। এটা কিন্তু আপৎকালীন ব্যবস্থা মনে রাখতে হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এগুলো অনুসরণ করে উপকৃত হয়েছে, আবার কোটি কোটি মানুষ হয় নাই। অনেকে অপেক্ষা করছিলেন হয় হার্ড ইমিউনিটি হয়ে যাবে অথবা ভ্যাক্সিন আবিষ্কার হবে– এই আশায়।
৩
যারা প্রকৃত অর্থেই জনস্বাস্থ্য বোঝেন, মাঠ পর্যায়ে চর্চা করেন, পাঠ্যপুস্তকের বাইরে লব্ধ জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগ করতে পারেন, তারা কিছুদিন পরেই বুঝে গেলেন বৈশ্বিক মহামারী, বিশেষত ২০২১ সালের পৃথিবী, যেখানে ‘বৈশ্বিক আইসোলেসন’ একটি অবাস্তব ধারণা, সেখানে হার্ড ইমিউনিটি হবে না। সুতরাং আশার মধ্যে বাকি থাকল ভ্যাক্সিন।
৪
আশার কথা ফাইজার, মডার্নার মতো অসাধারণ দুটি ভ্যাক্সিন এবং এস্ট্রাজেনেকা, সিনোফার্মা, স্পুটনিকের মতো বেশ কার্যকর কিছু ভ্যাক্সিন প্রত্যাশার চাইতেও দ্রুত আবিষ্কার হয়ে গেল।
৫
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বুদ্ধিমত্তায় বাংলাদেশ অক্সফোর্ডের সাথে চুক্তি করে এস্ট্রাজেনেকা পাবার ব্যবস্থা করল অনেক দেশের আগেই। আমাদের শুরুর দিকের ভ্যাক্সিন সাফল্য ঈর্ষণীয়।
৬
এদিকে হঠাৎ করে ভারত সরকারের ব্যর্থতায় ভারতে করোনার পরিস্থিতি খারাপ হলো এবং ভারতের সরকার তাদের ব্যর্থতা ঠেকাতে সমস্ত আন্তর্জাতিক ভব্যতা, শিষ্ঠতা লঙ্ঘন করে যুক্তরাজ্যের এস্ট্রাজেনেকা তাদের দেশের বাইরে রপ্তানি নিষিদ্ধ করল। এখানে বুঝতে হবে, ভারতের প্রতিটি মানুষের জীবনের মূল্য পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশের মানুষের জীবনের মতোই সমান মূল্যবান, বেশি নয়। কোনোভাবেই ভারত চুক্তি ভঙ্গ করে ভ্যাক্সিন তাদের দেশের রাখবার যৌক্তিকতা প্রমাণ করতে পারে না।
৭
ভারত এস্ট্রাজেনেকার ভ্যাক্সিন রপ্তানি বন্ধের পর বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যত মানুষ মারা গেছে, তার সিংহভাগ দায়ভার তাদের। এজন্য তাদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন করা উচিৎ।
৮
ভারতের স্বৈরাচারী আচরণে দিশেহারা বাংলাদেশ অন্য সোর্স থেকে ভ্যাক্সিন আনার চেষ্টা করে খুব ভালো সাফল্য পেয়েছে বলা যাচ্ছে না। একটি কারণ, বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানিকে অধিক লাভ পাইয়ে দেয়ার জন্য এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায় নেয়ার অনিচ্ছার কারণে চায়না ও রাশার সাথে সরাসরি সরকারি পর্যায়ে চুক্তি করতে না চাওয়ায় দেশ দুটি প্রথমে পিছিয়ে যায়, যেটি থেকে তাদের সরিয়ে আবার চুক্তির আওতায় আনার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, গত দুই যুগ নানা ক্ষেত্রে ভারতের বিশ্বাসঘাতকতা ভুলে গিয়ে শুধু তাদের উপর বিশ্বাস রেখে অন্যদের সাথে শুরুর থেকেই চুক্তি না করা।
করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় ভ্যাক্সিন। লক-ডাউন, শাট-ডাউন হচ্ছে গোশত দিতে না পেরে ছোট বাচ্চাদের শাক ভাত খাইয়ে বুঝ দেবার মতো অসহায় একটা চেষ্টা। সরকারের হাতে কোন উপায় নেই, তাই তাদের এখন আপৎকালীন সময়ে লক-ডাউন, শাট-ডাউন দিতে হবে, তাতে দৈনন্দিন মৃত্যু কিছু কমে আসবে আশা করা যায়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদের দেশের অর্থনীতি পঙ্গুত্বের দিকে যাবে। এর আগেও লক ডাউন কাজ হয়নি, হলুদ-সবুজ-লাল নানা অথর্ব তাত্ত্বিক জ্ঞানের নিষেধাজ্ঞাও ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
সারা বিশ্ব যখন ভ্যাক্সিনেশনের মাধ্যমে করোনামুক্তির দিকে দ্রুত এগুচ্ছে, তখন বাংলাদেশ সরকার দ্রুতই ভ্যাক্সিন আনার ক্ষেত্রে কার্যকরী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিয়ে দেশকে এইসব আপৎকালীন লক-ডাউন, শাট-ডাউন থেকে বাঁচাবে, এই কামনা করি।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য