আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

ইতিবৃত্ত: ব্লগ, ব্লগার ও ব্লগিং

নাজমুল হাসান  

ব্লগ বা ব্লগার সম্পর্কে শুদ্ধ জ্ঞান না নিয়েই এক শ্রেণির কূপমণ্ডূক গোষ্ঠী পবিত্র ধর্ম রক্ষার নামে ব্লগ সম্পর্কে অব্যাহতভাবে ব্যাপক নেতিবাচক অপপ্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছে। এমন অপপ্রচারের ফলে সমাজের মানুষের মধ্যে তারা ব্লগ সম্পর্কিত একটা নেতিবাচক ধারণা ও বিতর্ক প্রতিষ্ঠা করতেও সমর্থ হয়েছে। শুধু তাই নয়, তারা তাদের অজ্ঞানতাকে সেরা-জ্ঞান করে এবং সে জ্ঞানকে পূঁজি করে ব্লগ সংশ্লিষ্ট লেখকদেরকে হত্যা করার জন্য একটা আত্ম-ব্যাখ্যা তৈরি করেছে এবং সেটার উপরে ধর্মীয় প্রলেপ দিয়ে ধর্মকেও খানিকটা বিতর্কিত করে ফেলেছে । এ ব্যাখ্যার উপরে ভিত্তি করে তারা তাদের দ্বারা কৃত হত্যাকাণ্ডগুলিকে বৈধ ও পুণ্যের কাজ বলে জ্ঞান করছে এবং পুন পুন হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করছে; ধর্ম ও মানবতার দৃষ্টিতে যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

কোন বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডই সুস্থ বিবেকের কাছে সমর্থিত হতে পারে না। ধর্মীয় প্রলেপযুক্ত এ ধরনের হত্যাকাণ্ড তো নয়ই। যে ধর্মের জন্য, ধর্মের নামে এ হত্যাকাণ্ডগুলি ঘটানো হচ্ছে সেই ধর্মের লক্ষ-কোটি অনুসারীদের জন্যও এটা খুবই বিব্রতকর। ধর্মপ্রাণ মানুষের প্রিয় ধর্মের জন্য খুবই হতাশাব্যঞ্জক, নেতিবাচক তো বটেই। দেশের ভিতরে সংগঠিত এমন একেকটি হত্যাকাণ্ড যেমন দেশের ভিতরে ভীতি সঞ্চার করছে তেমনি সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে থাকা মুসলমানদের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সে সব দেশের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হবার কারণে সেখানে বসবাসরত নিরীহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে সে দেশের মানুষ ভাল চোখে দেখছে না। সে দেশগুলির রাষ্ট্রীয় আইন-কানুনগুলির উপরে এর একটা বিরূপ প্রভাব পড়ছে, ফলে যোগ্যতা থাকার পরেও ভাল কাজ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেখানকার মুসলমান ধর্মের অনুসারীরা। বিভিন্ন দেশে ভিসা ও চাকুরী পাবার ব্যাপারে সৃষ্টি হচ্ছে নানান সন্দেহ-অবিশ্বাস, দীর্ঘতর হচ্ছে ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া, ক্ষেত্রবিশেষে দেওয়া হচ্ছে না ভিসা। উচ্চ শিক্ষার জন্য স্কলারশিপ পাবার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হচ্ছে মুসলমান ছাত্র-ছাত্রীরা।

বিবেচনায় রাখা দরকার যে, মানুষের জন্যই সবকিছু, মানুষকে মেরে কোনকিছু প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টি কোনোভাবেই কাম্য নয়- তা সে গণতন্ত্রই হোক, সমাজতন্ত্রই হোক আর ধর্মই হোক। মানুষকে মেরে নয়, মানুষকে বুঝিয়ে তার মস্তিষ্কে কাঙ্ক্ষিত প্রতিক্রিয়া ও উন্মাদনা সৃষ্টি করে, মানুষকে ধারণ করে এগোনোই আদর্শ হওয়া উচিৎ। মানুষকে মানুষের নিজস্ব ইমোশন অনুযায়ী সম্মান না করলে সে পন্থা যতো উন্নতই হোক না কেন তা ব্যর্থ হতে বাধ্য। অতি বোঝাটা খারাপ, এই অতিবোঝার কারণেই বাংলাদেশের বাম রাজনীতি আজ জনবিচ্ছিন্ন এবং বহু-বিভক্ত। একই ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য অসংখ্য গ্রুপ হবার কারণটিও হয়ত তাই। পৃথিবীতে অনেক দেশ আছে যারা কয়েক মিনিটের মধ্যে সারা পৃথিবী থেকে তাদের বিপরীত মতের মানুষকে হত্যা করে ফেলতে পারে। কিন্তু তারা তা করছে না, কারণ মানুষকে মেরে ফেলাটাই সব সমাধান নয়।

ব্লগার হত্যাসহ ধর্মের কারণ দেখিয়ে মানুষ হত্যার বিষয়গুলি ইসলাম ধর্মকে কতোটা এগিয়ে নিচ্ছে সেটি বিবেচনায় রাখা দরকার। বরং ক্ষেত্রবিশেষে সারা বিশ্বের মানুষ ও রাষ্ট্রের মধ্যে এমন একটি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে যার মূল বক্তব্যটি এরকম- স্বল্প শক্তি নিয়ে ইসলাম ধর্মের পক্ষে তাদের কিছু অনুসারীগণ যেভাবে ভিন্নমতাবলম্বীদেরকে হত্যা করছে তা দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, শক্তি সঞ্চয় করতে পারলে তারা আরও বেশি মানুষকে খুন করবে।

ধর্মের নামে এসব কৃতকর্ম থেকে এমন একটি ধারণার জন্ম হবার ফলে সারা বিশ্বেই মুসলমানদেরকে দাবীয়ে রাখার একটা প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। একারণে জ্ঞান-বিজ্ঞানের অনেক ক্ষেত্রেই পিছিয়ে পড়ছে মুসলমানেরা। বিবেচনায় রাখা দরকার যে, আজকের পৃথিবীতে লড়াইটা জ্ঞানের, শুধু শক্তি প্রয়োগের মধ্যেই এটি সীমাবদ্ধ নয়। শক্তি প্রয়োগ করে খুব ছোট-খাট কিছু আপাত: বিজয় অর্জন করা সম্ভব কিন্তু বৃহৎ অর্জন কখনওই সম্ভব নয় বরং এটি তার জন্য অন্তরায়। বৃহৎ অর্জনের জন্য দরকার কৌশল ও মেধা, শক্তির বিষয়টি সেখানে গৌণ।

পৃথিবীতে সাড়ে সাত শ’ কোটি মানুষ আছে, এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ মানুষ নাস্তিক, সে হিসেবে প্রায় আড়াই শ’ কোটি মানুষকে মেরে ফেলতে হবে। কয় জনকে মেরে শেষ করা সম্ভব! মেরে সবাইকে শেষ করে ফেলার চিন্তাটা কি কোন সুস্থ-স্বাভাবিক চিন্তা হতে পারে! আইসিস-ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ভিন্ন মতাবলম্বীদেরকে মেরে ফেলার মিশন বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু যথাযথ মেধা না থাকার কারণে নিজেদের বেঁচে থাকার জন্য তাদেরকে অন্য ধনী দেশের নিরপরাধ নাগরিকদেরকে বন্দী করে মুক্তিপণ আদায় করতে হচ্ছে। এভাবে কতদিন তারা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে। যে অস্ত্র তারা ব্যবহার করছে তা-ও তাদের নয়, অন্যদের বানানো। নিজেরা যে অস্ত্র তৈরি করছে তার অবস্থা অনেকটা তীর-ধনুক টাইপের। এ যুগে হাতিয়ার দিয়ে যুদ্ধ করে জিতে যাবার চিন্তা করাটা অসম্ভব রকমের অপরিণত চিন্তা। এখন রিমোট কন্ট্রোল দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে সারা পৃথিবী ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব।

ব্লগ সম্পর্কে খানিকটা স্বচ্ছ ধারণা থাকলে ব্লগারদের উপরে যারা ক্ষুব্ধ তাদের চিন্তা-চেতনার কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে বলে আমার ধারণা। আর সে কারণেই ব্লগ ও ব্লগিং সম্পর্কে কিছু সংগৃহীত তথ্য দিতে চাই।

বাংলা ‘ব্লগ’ শব্দটি ইংরেজি Blog এর প্রতিশব্দ। শুরুতে এটি ছিল অনলাইনে ব্যবহৃত এক ধরনের ব্যক্তিগত দিনলিপি বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক পত্রিকা। ইংরেজি Blog শব্দটি হচ্ছে Weblog এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যিনি ব্লগে তার লেখা পোস্ট করেন তাকে বলে ব্লগার। ব্লগাররা প্রতিনিয়ত তাদের ওয়েবসাইটে কনটেন্ট যুক্ত করেন আর ব্যবহারকারীরা সেখানে তাদের মন্তব্য করতে পারেন। এছাড়াও সাম্প্রতিককালে ব্লগ ফ্রিলান্স সাংবাদিকতার একটা মাধ্যম হিসেবেও গড়ে উঠছে। সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ নিয়ে এক বা একাধিক ব্লগার এ মাধ্যমকে নিয়মিত আপডেট করেন।

অনেক ব্লগ আছে যা কোন একটা নির্দিষ্ট বিষয়সম্পর্কিত ধারাবিবরণী বা তথ্য পরিবেশন করে; যেমন- কবিতার ব্লগ, গল্পের ব্লগ, বানান ব্লগ, মেডিকেল ব্লগ, ইঞ্জিনিয়ারিং ব্লগ, ইসলামী ব্লগ ইত্যাদি। কিছু কিছু ব্লগ খুবই ব্যক্তিগত পর্যায়ের অনলাইন দিনপত্রী বা অনলাইন দিনলিপিসমূহ সংরক্ষণ করে।

একটা আইডিয়াল ব্লগ নিয়মমাফিক ব্লগারদের নানা ধরনের লেখা, ছবি, ওয়েভ পেজ এবং  এ সংক্রান্ত অন্যান্য মাধ্যমের লিঙ্কের সমাহার বা সমষ্টি। পাঠকদের মিথষ্ক্রিয়াময় মন্তব্য করার সুযোগ রাখা বেশিরভাগ ব্লগের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। অধিকাংশ ব্লগই মূলত লেখক বা ব্লগারদের  লেখা নিয়ে তৈরি। প্রচলিত মিডিয়ায় যারা লিখতে পারেন না বা সে সুযোগ নেই, তাদের লেখার একটি মাধ্যম হচ্ছে ব্লগ। কিছু কিছু ব্লগ আবার বিশেষ কিছু টপিকের উপরে জোর দেয়; যেমন- শিল্প (আর্ট ব্লগ), ছবি (ফটো ব্লগ), ভিডিও (ভিডিও ব্লগ), সঙ্গীত (এমপি থ্রি ব্লগ) এবং অডিও (পডকাস্টিং) এর উপর। মাইক্রোব্লগিং নামে আরেক ধরনের ব্লগিং আছে যেখানে খুব ছোট ছোট পোস্ট দেওয়া হয় এবং যা সংরক্ষিত থাকে। পৃথিবীতে ব্লগের সংখ্যা অনেক, বলা চলে অগণিত। ‘টেকনোরাট্টি’ নামক একটি সফটওয়ার আছে যা ব্লগ খুঁজতে পারে, এটাকে বাংলায় বলা হয় ‘ব্লগ খোঁজারু ইঞ্জিন’। ডিসেম্বর, ২০০৭ সালে টেকনোরাট্টি এগারো  লাখেরও বেশি ব্লগের হদিশ পেয়েছে।

ব্লগিংয়ের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা  যায়, ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৯৭ সালে জোম বার্গার সর্বপ্রথম ‘ওয়েবলগ’ নামক শব্দটি ব্যবহার করেন। এ শব্দটিরই ছোট্ট সংস্করণ ‘ব্লগ’ চালু করেন পিটার মেরহোলজ। তিনি তাঁর ব্লগ পিটারমে.কম (PeterMe.com)-এর সাইডবারে ১৯৯৯-এর এপ্রিল বা মে মাসের দিকে ঠাট্টা করে ওয়েবলগ (weblog) শব্দটিকে ভেঙে  ‘উই ব্লগ’ (we blog) লেখেন। তার ঠিক পরপরই, পাইরা ল্যাবস-এ ইভান উইলিয়ামস ‘ব্লগ’ শব্দটি বিশেষ্য এবং ক্রিয়া দুটো হিসেবেই ব্যবহার করা শুরু করেন। এটিকে বিবেচনায় নিলে ‘ব্লগ করা’ মানে দাঁড়ায় ‘কারোর ওয়েবলগ সম্পাদনা করা বা কারোর ওয়েবলগে লেখা দেওয়া’। পাইরা ল্যাবস এর ব্যবহৃত ‘ব্লগার’ শব্দটিই পরবর্তীতে বিভিন্ন দেশের পরিভাষায় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

ব্লগিং জনপ্রিয় হওয়ার আগে, ডিজিটাল গোষ্ঠীগুলোর নানান ধরন ছিল; যেমন- ইউজনেট-Usenet, জিনি-Genie, বিক্স-Bix নামক বাণিজ্যিক অনলাইন সার্ভিস। আরও ছিল পুরনো আমলের কম্পুসার্ভ-CompuServe, ই-মেইল লিস্টস, বুলেটিন বোর্ড সিস্টেমস-বিবিএস। ১৯৯০-এর দিকে, ইন্টারনেট ফোরাম সফটওয়ার ‘থ্রেড’ এর মাধ্যমে কথোপকথন চালানোর ব্যবস্থা শুরু হয়। থ্রেড হচ্ছে একটা ভার্চুয়াল ‘কর্কবোর্ড’-এ বার্তাগুলোর মাঝখানের সাময়িক সংযোগের সমষ্টি।

আধুনিক ব্লগের উৎপত্তি ঘটে অনলাইন দিনপত্রী থেকে, যেখানে ব্যবহারকারীগণ তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনের বিবরণ লিপিবদ্ধ রাখতেন। এধরনের বেশিরভাগ লোকেরাই তাদের নিজেদেরকে বলতেন ডায়েরিস্টস, জার্নালিস্টস বা জুমালারস। সোয়ার্থমোর কলেজ-এ পড়ার সময় জাস্টিন হল নামক এক ব্যক্তি খুব বেশি ব্যক্তিগত ব্লগিং করতেন, এ কারণে জাস্টিন হল-কে অন্যতম আদি ব্লগার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জেরি পুমেল, ডেভ উইনার এর স্ক্রিপ্টিং নিউজ এর ওয়েবলগ-ও সবচেয়ে পুরনো এবং সে সময়ে এটির অনেকদিন ধরে চালু থাকার খ্যাতি আছে।

প্রথম দিককার ব্লগগুলো ছিল স্রেফ সাধারণ ওয়েভসাইটের মতো। সময়ের সাথে সাথে পোস্ট-করার জন্য ব্লগে লেখা এবং পোস্টকৃত লেখাগুলোর দেখভাল করার বিষয়টিকে সহজীকরণ করা হয়। ধীরে ধীরে ব্লগ বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ব্যবহারের সহজীকরণের ফলে যারা প্রযুক্তি দক্ষ নয় তাদের কাছেও এটি ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে। এর ফলেই ব্লগের মাধ্যমে আলাদা ধরনের একটা অনলাইন প্রকাশনা ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এটিই আজকাল আমাদের চেনা চেহারার ব্লগ।

যে সমস্ত ওয়েবসাইট এবং ব্লগিং এপ্লিকেশনের মাধ্যমে একটি ব্লগ তৈরি করা যায়, এগুলোকে ব্লগিং প্লাটফর্ম বলা হয়। বর্তমানে কিছু জনপ্রিয় ব্লগিং প্লাটফর্মের মধ্যে গুগলের ব্লগার, ওয়ার্ডপ্রেস, টেকনোরাতি, ব্লগ ডট কম, হোপব্লগ ইত্যাদি অন্যতম।

শুরুটা ধীরগতির হলেও, ব্লগিং দ্রুতই জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৯৯ সাল এবং তার পর থেকেই ব্লগ ব্যবহার খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। ১৯৯৮ সালে ব্রুস আবেলসন অনলাইনে একটি ‘ওপেন ডায়রি’ নামক ব্যবস্থা করতে সমর্থ হন। এর ফলে হাজার হাজার অনলাইন দিনপত্রী তৈরি হয়। ওপেন ডায়রির প্রধান দিকটি হচ্ছে ‘পাঠক মন্তব্য’ রাখার সুযোগ। মূলত এটাই ছিল প্রথম ব্লগ কমিউনিটি যেখানে পাঠকেরা অন্য লেখকের ব্লগে অন্তর্ভুক্ত হতে পারতেন এবং  মন্তব্য করতে পারতেন। ১৯৯৯ সালের মার্চে ব্র্যাড ফিটজপ্যাট্রিক অনলাইন ভিত্তিক লাইভ জার্নাল শুরু করেন।   জুলাই, ১৯৯৯-এ এন্ড্রু স্মেলস ওয়েবসাইটে একটা ‘খবর পাতা’ রাখার বিকল্প হিসেবে জন্ম দেন পিটাস.কম-এর। এর পরপরই সেপ্টেম্বর, ১৯৯৯-এ আসে ‘ডায়েরিল্যান্ড’, যেখানে ব্যক্তিগত দিনপত্রীমূলক কমিউনিটির ওপর জোর দেওয়া হয়। ইভান উইলিয়ামস এবং মেগ হুরিহান (পাইরা ল্যাবস) ব্লগার.কম চালু করেন অগাস্ট, ১৯৯৯-এ। এটা গুগল কিনে নেয় ২০০৩-এর ফেব্রুয়ারিতে।

ব্যবহারকারী ভেদে ব্লগকে কয়েকটি ক্যাটেগরিতে ভাগ করা হয়; যেমন-
১. ব্যক্তিগত ব্লগ- যা ব্যক্তিগতভাবে নিজের মত করে কেউ ব্যবহার করেন।
 ২. কোম্পানি ব্লগ- যা কোন কোম্পানি তার বিজনেস প্রমোশনের জন্য ব্যবহার করেন। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান তাদের কোন পণ্য বা সেবার উপর নতুন নতুন তথ্য প্রদান করেন এবং পাঠক সেখানে  তাদের মতামত প্রদান করেন।
 ৩. সামাজিক ব্লগ- যা সমাজের বিভিন্ন পেশার ব্যবহারকারী ব্যবহার করেন এবং যেখানে বহু সংখ্যক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী তাদের সুচিন্তিত মতামত ও লেখনীর মাধ্যমে একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলেন। আমাদের দেশে যে ব্লগ বা ব্লগার আলোচিত সেটি হচ্ছে সামাজিক ব্লগ।

অবস্থা ও অবস্থানভেদে যে কোন কৌশলই পরিবর্তিত হয়। বর্তমানে যারা ধর্মের নামে মানুষ খুন করছেন, সার্বিক বিষয়াদি বিবেচনায় নিয়ে তারা যদি তাদের কৌশল পরিবর্তন করে মানুষকে হত্যার পরিবর্তে মানুষকে ভালবেসে, তাদের কৌশল পরিবর্তন করে মানুষকে ধারণ করার চর্চা শুরু করেন- সর্বতোভাবে সেটিই হবে উত্তম পন্থা। দেশটা অনেক বড়, পৃথিবীটা আরও অনেক বড়- যে অবস্থানে থেকে মানুষ হত্যা করে আপনি আপনার মধ্যে ধারণ করা আদর্শকে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন, জনমানুষের মধ্যে সেটিকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হলে হত্যার পথ থেকে সরে আসুন। মানুষকে বুকে টেনে নিয়ে তাকে আপনার আদর্শ-বন্ধনে আবদ্ধ করুন। হোক সে আপনার বিরুদ্ধমতের কেউ- তাতে কি এসে যায়, আপনি মহৎ সেটিই বড় কথা। আপনি যদি আপনার আদর্শকে অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে ধরে নেবেন আপনি নিজেই সে আদর্শকে সঠিকভাবে ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সত্যিই যদি আপনি আদর্শকে ধারণ করতে পারেন, তবে কেন আপনি অন্যকে আপনার দিকে আনতে পারবেন না! কেন আপনি আপনার আদর্শকে অন্যের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারছেন না, সে জন্য নিজের ক্রুটিগুলি খুঁজতে চেষ্টা করুন, নিজেকে আরও যোগ্যতর করে গড়ে তুলুন। নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে গড়ে তুলতে পারলে আপনাকে সবাই অনুসরণ করবে। মানুষ মেরে নিজেকে লুকিয়ে রাখলে কি ভাবে আপনি আপনার আদর্শকে ছড়িয়ে দেবেন!  

যে সমস্ত অনলাইন একটিভিস্ট বা ব্লগার এমনভাবে তাদের যুক্তিকে উপস্থাপন করছেন যে তা কোন কোন মহলে গ্রহণযোগ্য হবার পরিবর্তে তাদেরকে উত্যক্ত করে তুলছে, তারা তাদের লেখাকে আরও গ্রহণযোগ্য করে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন। সমাজ উপযোগী ভিন্ন কৌশল নিন যেন আপনি মানুষের মধ্যে আপনার চিন্তা-চেতনাকে যথাযথভাবে ছড়িয়ে দিতে পারেন। জীবনটা লড়াই করার জন্যে, অকারণে এভাবে সপে দেবার জন্য নয়। আপনার আদর্শকে ছড়িয়ে দেবার জন্যই আপনার বেঁচে থাকার দরকার আছে। বৈরী পরিবেশেও কীভাবে নিজের আদর্শকে ছড়িয়ে দেবেন তা নিয়ে আরও বেশি ভাবুন। যদিও সেটাই শেষ রক্ষার সব নয়- তারপরেও কৌশলী হতে তো দোষ নেই।

 হ্যাপি ব্লগিং।

নাজমুল হাসান, লেখক, গবেষক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ