প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
গোঁসাই পাহ্লভী | ০১ মে, ২০১৬
সিম নিবন্ধন নিয়ে হুলস্থূল কারবার চারদিকে। হুলের মতো স্থূল বিষয়গুলো ফুটিয়ে যাচ্ছে বেশ। মৌমাছির হুল ফোটানো, সেই হুল কি খুব স্থুলো? অবশ্যই নয়, আমাদের কাছে তো মনে হয় খুব সূক্ষ্ম। সেই সূক্ষ্ম হুলের ফোটানোই সহ্য করতে কষ্ট হয়, অথবা স্থুলো হুলের ফোটায় জর্জরিত আমরা নিরব আছি।
ঠিক কি নিরব আছি? মানুষ রাস্তা-ঘাটে, রেস্টুরেন্ট কিংবা বাজারে যেখানেই দেখা হচ্ছে, হুলস্থূল বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলছে, বলছে ‘আর পারছি না ভাই’। দৈনিক পত্রিকাগুলোতে দৈনিক ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোর আমলনামা আছে, আপনারা পড়ে দেখতে পারেন কি সব হুলস্থূল বিষয় ঘটছে। এর মধ্যে সিম নিবন্ধনের চূড়ান্ত দৃশ্যের মুখোমুখি আমরা।
সিম নিবন্ধনের বিষয়ে বরাবরের মতোই এই জাতি দ্বিধাবিভক্ত। সরকার বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশনের কথা বলছে, এই নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ। পাশ্চাত্যের ইতিহাসে ‘লজি’র ধারণা তো অনেক পুরানো। শব্দ কেন্দ্রিক প্রতিনিধিত্ব ঢের হয়েছে, এখন বায়োর কথা উঠছে, অর্থাৎ আপনাকে অজৈব উপস্থিতি থেকে জৈব উপস্থিতিতে আসতে হবে। এই প্রবণতার মধ্যে শব্দ বিষয়ক অজৈব ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
এই যে বায়োলজি এইটা হচ্ছে জৈবযু্ক্ততা। এ্যাতো দিন চলেছে শব্দযুক্ততা, লেখযুক্ততা, এবারে শব্দকে, বায়োর মাধ্যমে কনফার্ম হবার প্রসঙ্গ তুলেছে। আইনের কাঠামোতে ঢুকেছে। মনে রাখতে হবে, আইনের কাঠামোতে ঢুকে যাওয়া মানে দীর্ঘদিনের সেশন জট। এই জট ঠেলতে ঠেলতে পাশ করার নয়, মরার সময় এসে যায়। ফলে বায়োমেট্রিক বিষয়ে ভাবনা চিন্তাটা তাহলে এখনই জোরসে শুরু করেন।
বায়োলজি থেকে বায়োলজিক্যাল। একটা নাউন আরেকটা এডজেকটিভ। ফলে আপনাকে কেবল লজিক্যাল হলেই চলছে না, আপনাকে বায়োলজিক্যাল হতে হবে, আপনার সাক্ষ্য হতে হবে জৈব।
সুতরাং সিম নিবন্ধন নিয়ে আমাদের কথা খুব সংক্ষিপ্ত। নিবন্ধন বায়োমেট্রিক হলে, সরকার কি ভাবছে যে সেই বায়ো নিবন্ধিত বায়োর মতো অপরিবর্তিত থাকবে? বিবর্তনবাদ বা রূপান্তরবাদ এইখানে বাঙালিকে নিয়ে যেন ডুবে যাচ্ছে। একটা কথা মনে রাখতে হবে, কেবলমাত্র পৃথিবীকে নয়, মহাকাশের রূপ রেখা পাল্টে দেবার ক্ষমতা মানুষের হাতে এসেছে, সেখানে মানুষ তার নিজের জন্যে প্রয়োজনমাফিক পাল্টাতে পারবে না এই ভাবনাটা শিশুসুলভ।
সিম হচ্ছে, একটা মাধ্যম। আবার বাহনও বলতে পারেন। এখানকার দেবতাদের আলাদা আলাদা বাহন ছিলো, মানুষ বাহনকে ব্যবহার করে ঠিকই, কিন্তু বাহনের সাথে যুক্ত হয়ে থাকে না, জৈব যুক্ত থাকা তো নয়-ই। যদি সে জৈবসত্তায় যুক্ত থাকে, অর্থাৎ যে কোনও প্রকার জৈব যুক্ত থাকাকে এখানে পাশবদ্ধতা অর্থাৎ পাশবিক ভাবা হয়েছে। এই পাশবদ্ধ থাকার নামই হচ্ছে পশু।
যা হোক, সিম নিবন্ধনের থেকে, সিমের সাথে আমাদের জৈব সম্পৃক্ততার থেকে আমার অনুরোধ হচ্ছে, আসুন আমরা নি>বন্ধনও নয়, (আমরা সিমের মতো মাধ্যম ব্যবহার না করে সরাসরি আমাদের যার সাথে যোগাযোগ করার প্রয়োজন হবে, তার সাথে) বন্ধনে আবদ্ধ হই।
রাষ্ট্রের সাথে, আমলাতন্ত্রের সাথে কোনও প্রকার নিয়োগ প্রথায় যখন এই বায়োলজিক্যাল বন্ধন দেখা যায়, তাহলে আমাদের এই বন্ধনে আবদ্ধ হতে সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা হচ্ছে ওখানেই যে, বাহনকে টিকিয়ে রাখতে হবে, মাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, মাধ্যম ছাড়া মানুষ যাতে অচল বোধ করে এই ভাবনাটাও প্রচার করতে হবে। এবং সেটাই হচ্ছে। মাধ্যমকে গুরুত্ব করে তুলতে গিয়েই ঈশ্বর ও বান্দার মধ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে প্রফেট, অবতার। এখন সেই প্রফেট বা অবতারের পরিবর্তে মাধ্যম হিসাবে অন্য কিছু এসেছে, কিন্তু মাধ্যমের বিলুপ্তি ঘটেনি।
আপনার সাথে রাষ্ট্র নামক প্রকল্প কিংবা মানুষ নামক সম্পর্কে মাধ্যমকে অতিক্রম করে সরাসরি যুক্ত হতে পারেন না । যদি বায়োলজির কথা বলা হয়, তাহলে এই লজিতে ‘বায়ো’ই মাধ্যম, নতুন কোনও মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য