আজ শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

হাওরাঞ্চলের জন্যে নিবেদিত ‘বোনাস লাইফে থাকা’ এমএ মান্নান

আলমগীর শাহরিয়ার  

বিএনপি আমলে দীর্ঘ সময়ের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সিলেট অঞ্চলের উন্নয়নে অনেক ভূমিকা রেখেছিলেন—দল মত নির্বিশেষে মানুষ আজও সে কথা স্মরণ করে। সিলেট অঞ্চলের উন্নয়নে তিনি কীরকম ভূমিকা রেখেছিলেন এরকম একটা গল্প শুনেছিলাম বেশ আগে। তখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় আলাদা না। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত। বড় কোন কাজ বা প্রকল্প পাস হতে হলে প্রথমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি লাগত। একবার বগুড়ার এক এমপি বগুড়ায় একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের ফাইল নিয়ে এসে সাইফুর রহমানকে বললেন, স্যার, তারেক জিয়া বিশেষভাবে এই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপনের ফাইলটির জন্য সুপারিশ করেছেন। সাইফুর রহমান সেই এমপিকে বললেন সময় নিয়ে এরকম আরেকটা ফাইল রেডি করে নিয়ে আসুন। আমি এটি দেখছি। কয়েকদিন পর সেই এমপি এরকম একটি ফাইল রেডি করে নিয়ে আসলে তিনি সেটা দেখে বললেন শোনেন, এসব কি শুধু বগুড়ায় হয়, সিলেটে হয় না?

গল্পের সত্যমিথ্যা জানি না কিন্তু সাইফুর রহমান এলাকার উন্নয়নে এরকম আন্তরিক ছিলেন। সবাই জানে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ স্থাপন হয়েছিল। শুনেছি অনেক ব্যয়বহুল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ এখন অযত্নে অবহেলায় পড়ে আছে। বিএনপি আমলে সিলেটসহ সারাদেশে দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। আজও জাতির জীবনে সেসব অমোচনীয় পাপের মতো অভিশাপ হয়ে আছে। কিন্তু এ কথা বলতে দ্বিধা নেই ব্যক্তি সাইফুর রহমান সিলেট শহরের টিলাগড় সংলগ্ন এলাকায় এক কিলোমিটারে যে উন্নয়ন করেছিলেন তা আর কোনও আমলে হয়নি। অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের মতো সৎ, নিষ্ঠাবান, পণ্ডিত একজন অর্থমন্ত্রী পাওয়ার পরও আওয়ামী লীগের উন্নয়ন দশকেও সিলেট বেশ বঞ্চিত। রুটিন উন্নয়নের বাইরে দৃশ্যমান বড় কোনো উন্নয়ন অগ্রগতি নেই। সরকারের অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দশ মেগা প্রজেক্টের মতো একটি বড় প্রকল্প সিলেট অঞ্চলে নাই।

উপরের প্রাসঙ্গিক গল্পটি বললাম বিশেষ কারণে। প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তে মন্ত্রিসভায় ভাগ্যবানেরা আনুষ্ঠানিক ডাক পান মন্ত্রিপরিষদ সচিবের ফোনে। সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে এম এ মান্নান নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় দফা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফের সংসদ সদস্য হয়ে অর্থ প্রতিমন্ত্রী হন। ক্যাবিনেটে ডাক পাওয়ার সে খবর সচিবালয় বিট করেন এমন এক সাংবাদিক সহকর্মীর মাধ্যমে অগ্রিম জেনে অভিনন্দন জানানোর জন্য উনাকে ফোন করলাম উনার ০১৭১৫০৩... এই নাম্বারে। ব্যক্তিগত পূর্ব পরিচয় থাকায় সাথে সাথে কল রিসিভ করলেন এবং অভিনন্দন জানালাম। উনি প্রথম বিশ্বাস করলেন না। বললেন, আমি না রে ভাই। হয়ত বগুড়ার এমপি মান্নান সাহেব। অন্য এক সূত্রে অধিকতর নিশ্চিত হয়ে উনাকে নিশ্চিত করলাম যে উনিই ক্যাবিনেটে ডাক পেতে যাচ্ছেন। অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিতের সঙ্গে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ও পরে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন শেষে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয়বারের মতো বিজয়ী তিনি পরিকল্পনা মন্ত্রীর পূর্ণ দায়িত্ব পান।

নির্বাচিত হয়ে পশ্চাৎপদ নিজ জেলা সুনামগঞ্জের উন্নয়নে মনোযোগ দেন। সুনামগঞ্জ দেশের সপ্তম বৃহত্তম জেলা। অনাদিকাল থেকে অবহেলিত। অকাল বন্যা, ঝড় ঝাপটা আর ফসলহানিতে এখানকার প্রান্তিক কৃষকের জীবন চিরকালই বিপর্যস্ত। হাওরাঞ্চলের উন্নয়নের অংশ হিসেবে সেখানে একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনে উদ্যোগ নেন। কলেজের কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন অবহেলায় পড়ে থাকা আন্তঃজেলা সড়ক সিলেট টু সুনামগঞ্জের রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। পরিবহন-মালিক শ্রমিক স্বার্থান্বেষী মহলের তীব্র বাধা অতিক্রম করে সাধারণ মানুষের জন্য সুনামগঞ্জ টু সিলেট সাশ্রয়ী আরামদায়ক বিআরটিসি বাস চালু করেছেন। আজ (৩০ ডিসেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কাছ থেকে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন করালেন। এ বিশ্ববিদ্যালয় নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জসহ বৃহত্তর হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রাখবে।

হাওরের অনেক জাতীয় নেতা জন্মেছিলেন। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের নিজ জেলা কিশোরগঞ্জের বাইরে হাওর পারের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তারা তেমন কিছু করেছেন বলে মনে করতে পারছি না। তাদের যেমন শ্রদ্ধায় স্মরণ করি তেমনি একথা বলতেও দ্বিধা নেই তারা চিরকালের বঞ্চিত অবহেলিত হাওরের মানুষের ভোটে নির্বাচিত হলেও তাদের উন্নয়নে তেমন কিছু করেননি। কিন্তু কোন্দলের রাজনীতি আর স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভক্তির স্থায়ী ক্ষত রেখে গেছেন। একজন এম এ মান্নান পুরাদস্তুর রাজনীতিবিদ নাহলেও এখানে তাদের চাইতে ব্যতিক্রম। ব্যক্তিগত জীবনে এম এ মান্নান একজন নির্লোভ পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক। দলাদলির ঊর্ধ্বে। পেশাজীবনে ছিলেন একজন সৎ আমলা। সফল মন্ত্রী। যিনি এক কালে বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে বোনাস লাইফে বেঁচে আছেন।

সেই রোমহর্ষক অলৌকিক ঘটনাও স্মরণ করা যেতে পারে। আজ থেকে ৫৩ বছর আগে ১৯৬৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২ তারিখ বুধবার। আমেরিকান সাহায্য সংস্থা কেয়ারের তৎকালীন ঢাকা অফিসে চাকরি করতেন এম এ মান্নান। অফিসের কাজে দেশের নানা জায়গায় যেতে হত তাকে। সেদিন তাঁর কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা। পিআইএ তখন দেশের নানা জায়গায় সীমিত আকারে হেলিকপ্টার সার্ভিস চালু করেছে। ঢাকা থেকে দুপুরে ফরিদপুর হয়ে তাঁর কুষ্টিয়া যাওয়ার কথা। হেলিকপ্টারে ছিলেন যাত্রী মোট ২৪ জন। ফরিদপুরের কাছাকাছি যেয়ে হঠাৎ হেলিকপ্টারটি সেদিন বিধ্বস্ত হয়। আগুন ধরে ধানক্ষেতে বিধ্বস্ত কপ্টার থেকে প্রাণপণ চেষ্টায় বেরিয়ে আসেন এম এ মান্নান। খেতে থাকা কৃষকেরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বাকি ২৩ জন ঘটনাস্থলেও মারা গেলেও একমাত্র তিনি সেদিন বেঁচে ছিলেন। তাঁর এই অলৌকিক বেঁচে যাওয়ার গল্পটি প্রথম শুনেছিলাম সুনামগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মুহিবুর রহমান মানিক ভাইয়ের কাছে। বিবিসি বাংলাও এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন করেছিল। সেই বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান মানুষটিই আজকের পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। তাঁর ভিশনারি নেতৃত্বের জন্য সুনামগঞ্জের মানুষ তাকে ভালবেসে শ্রদ্ধায় স্মরণে রাখবে।

শুধু নিজ এলাকা নয়; প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে যুগের পর যুগ দেশের অবহেলিত হাওরাঞ্চল, চরাঞ্চল ও দুর্গম পাহাড়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তিনি আরও অনেক কিছু করবেন—এই প্রত্যাশা করি।

আলমগীর শাহরিয়ার, কবি ও প্রাবন্ধিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ