আজ মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫

Advertise

উন্নয়ন চক্র ও নগরের জলাবদ্ধতা

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল  

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে এটা শত্রুরাও স্বীকার করবে। কিন্তু কিছু উন্নয়ন মৌলিক ও দৃশ্যমান যার সাথে মানুষের সংযোগ নিত্যদিনের। এত উন্নয়ন করার পরও যে সমস্যা রয়ে গেছে, জনগণ যে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে তা হলো - এলাকার রাস্তাঘাটের দুরবস্থা ও নগরীর জলাবদ্ধতা।

এ সমস্যা যুগ ধরে চলে আসছে বললেই হবে না। আমাদের নবম চীন মৈত্রী সেতু না হলেও চলবে, কেউ প্রশ্ন তুলবে না। তবে আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে যেতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়নের দিকটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।

প্রয়োজনীয় বাজেট:
দেশের প্রতিটি এলাকার রাস্তা নির্মাণ, পুনর্নির্মাণ বা সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয় ঠিকই কিন্তু এ বরাদ্দের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নেই। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ম হলেও জনপ্রতিনিধিদের প্রভাব থাকে না। চা-পানি খাওয়ার মোটা অংকের টাকা দিতে হয় স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও সংশ্লিষ্ট সরকারী লোকদের। অতঃপর ঠিকাদারের লাভ রাখার পর কাজের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের একটি অংশ মূলত কাজে লাগে।

উন্নয়ন চক্র:
কিছু এলাকায় দেখবেন সারা বছরই কোনো রাস্তা আটকে মেরামতের কাজ চলছে। এ কাজগুলো কিছুদিন বিরতি দিয়ে শুরু হয়। অর্থাৎ এত নিম্নমানের কাজ করা হয় যে অল্প সময়ের ব্যবধানে পুনরায় মেরামতের প্রয়োজন হয়। আবার মেরামত মানে নতুন বাজেট বরাদ্দ। সময় মতো কাজ না হলেও নির্বাচনের আগে তড়িঘড়ি করে পুনর্নির্মাণ বা মেরামত শুরু হয়। সড়কগুলোর এ চলমান উন্নয়নকে উন্নয়ন চক্র বলাই বোধহয় শ্রেয়।

জলাবদ্ধতা ও অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি:
ঢাকার কয়েকটি এলাকা, বিশেষত চট্টগ্রাম জলাবদ্ধতার জন্য ব্যাপকভাবে আলোচিত। আমাদের দেশের রাস্তাগুলো নির্মাণে বিটুমিন ব্যবহার হয়। বিটুমিন সুলভ মূল্যের এবং এর কিছু সুবিধা আছে। কিন্তু বিটুমিন ব্যবহারের প্রধান শর্ত হচ্ছে ড্রেনেজ সিস্টেম থাকতে হবে। পানি বিটুমিনের ক্ষতিসাধন করে বলে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকলে পানি জমে থাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই বেশি সময় ধরে আটকে থাকা পানি সরে গেলে আবার প্রয়োজন হয় রাস্তা সংস্কারের। একেও উন্নয়ন চক্রের অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

সম্ভাব্য সমাধান:
নির্মাণ কাজে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট এলাকার। কিন্তু তারা যদি নিজ এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে নিজের কাজ হিসেবে গণ্য না করে, তাহলে কাজের মান যথাযথ হবে না এটাই স্বাভাবিক। সুরকি ও বালির পরিমাণ বেশি দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করলে এ সমস্যার কখনোই সমাধান হবে না। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের যদি সততা না থাকে তাহলে উন্নত মানের নির্মাণ ও মেরামত কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।

বিশ্বে ব্যবহৃত নির্মাণ কৌশল ও প্রযুক্তি:
ভারতে কয়েক বছর আগে রাবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি হওয়ায় কমমূল‍্যে রপ্তানি না করে রাস্তা নির্মাণে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত হয়। পুনা, ব‍্যাঙ্গালোর ও মুম্বাইয়ের সড়ক নির্মাণে প্লাস্টিক বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। ন্যাচারাল পিচ, সবুজ পিচ ছাড়াও অনেক ধরনের সয়েল স্ট‍্যাবিলাইলাইজার প্রযুক্তি বিশ্বে ব্যবহৃত হচ্ছে যা যানবাহনের ফুয়েল ব্যবহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে। আমরা বিভিন্ন দেশের সাথে চুক্তি করি, নগর উন্নয়নের জন্য কৌশল বিনিময় করতে চাইলে তা কঠিন কোনো বিষয় হবে না।

নগর পরিকল্পনা:
অবকাঠামোগত উন্নয়নে নির্মাণ কৌশল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাস্তাঘাট নির্মাণ বা সংস্কার কাজে পানি ও বর্জ্য নির্গমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা নগর পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। বিশ্বের অনেক দেশেই ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু তারা দ্রুততম সময়ে পানি নির্গমনের ব্যবস্থা রেখেছে। আমাদের নগর পরিকল্পনাবিদরা জলাবদ্ধতার দায় এড়াতে পারেন না। উন্নত দেশের মতো দূরবর্তী স্থানে পানি নির্গমনের ব্যবস্থা করার মতো বাজেট না থাকলে প্রতিটি এলাকার নির্দিষ্ট স্থানে পানি নির্গমনের ব্যবস্থা করা যায়। সেখান থেকে পানি বহন করে নদীতে ফেলার বা ওয়াসা কর্তৃক সঞ্চিত পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করার উদ্যোগ কার্যকর করা যায়।

যেকোনো উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টির প্রয়োজন তা হচ্ছে দেশপ্রেম। দেশকে ভালো না বাসলে দেশের উন্নয়নের চেয়ে নিজের স্বার্থ তথা পকেট ভারী করাকে বড় করে দেখা হয়। গুটিকয়েক ব্যক্তির জন্য ভোগান্তি হয় কোটি জনতার। অবকাঠামোগত উন্নয়নে কঠোর তদারকি, মান যাচাই, নিরীক্ষা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা উচিত। প্রয়োজনে অভিযুক্তদের নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ক্ষেত্রে অসততার কারণে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।

"বাসা থেকে বের হয়ে ঝামেলাবিহীনভাবে ও নিরাপদে ফিরে আসবো" - এ চাওয়া সকলকে সন্তুষ্ট করতে সম্ভবত যথেষ্ট। এ চাওয়া করুণা নয়, নাগরিক অধিকার।

আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল, সাবেক ছাত্রনেতা ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ।

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৫ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৮ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১১০ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪৫ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৪ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ২৫ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ শাখাওয়াত লিটন শাবলু শাহাবউদ্দিন