প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রহিম আব্দুর রহিম | ২৬ এপ্রিল, ২০১৮
ঘুষ দুর্নীতি, মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসা, আইন শৃঙ্খলার অবনতি, ধর্ষণ- খুন, মজুদদারি, ভেজাল, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন হাতে তুলে নেওয়া, সড়ক দুর্ঘটনাসহ সকল প্রকার ঘৃণিত কর্মকাণ্ডের মূলে অজ্ঞতা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের চরম নৈতিক অবক্ষয়।
সমকালীন যথাযথ আধুনিক শিক্ষার অভাবই বেকারত্বের মূল কারণ, অপরদিকে দরিদ্রতার অন্যতম কারণ নদী ভাঙন। প্রতি বছর নদী ভাঙনের ফলে হাজার-হাজার পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে।
গত ২০ এপ্রিল দৈনিক সমকাল পত্রিকার সপ্তম পাতায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম ছিলো, ‘বর্ষা শুরুর আগেই ভাঙছে পদ্মার পাড়’, সংবাদ বডিতে বলা হয়েছে, ‘সবে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে এখনো প্রায় দুই মাস বাকি, এর মধ্যে রাজবাড়ির গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মার তীরে শুরু হয়েছে ভাঙন। গত তিন-চার দিনের ভাঙনে পদ্মায় বিলীন হয়েছে শতাধিক বিঘা ফসলি জমি, ভিটামাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে কয়েকটি পরিবার।’
প্রতিবেদক সংবাদের শেষাংশে বলেছেন, ‘এদিকে গণদাবি থাকা সত্ত্বেও এলাকার নদী ভাঙন রোধে কার্যকর স্থায়ী কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। জরুরী ভিত্তিতে ভাঙন রোধ করা না গেলে আগামীতে দেবগ্রাম ইউনিয়নের বেশির ভাগ গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।’ প্রতিবেদক সরকারের স্থানীয় দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জেনেছেন, ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
গত বছর প্রকাশিত একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়েছিলো, বর্ষা মৌসুমে দেশের ছয় বিভাগের যমুনা, মেঘনা, পদ্মা, সুমেশ্বরী, বাঙালি, দুধকুমা, বিষখালী নদীসহ প্রায় ৭০টি নদী অবিরাম ভেঙে চলছে। নদী ভাঙন কবলিত জেলাগুলো হচ্ছে, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বগুড়া, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, মনপুরা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, খুলনা, রাজশাহী, ফরিদপুর।
গত ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষার জন্য যে বাঁধ দেওয়া হয়েছিলো, তার হার্ড পয়েন্টে ১৪০ মিটার নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অথচ ওই শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করতে সরকারের ৩শ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যমুনার মত দেশের অন্যান্য নদীর ভাঙন ক্রমেই বেড়েই চলছে। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হচ্ছে।
গত ৪৫ বছরে প্রায় ২ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ নদী ভাঙনের শিকার হয়েছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৬টি জেলা নদী ভাঙনের কবলে পড়েছে। গত ৩৫ বছরে সরকার নদী ভাঙন রোধে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। সরকারের বরাদ্দকৃত টাকার ব্যাপক অপচয়ই হয়েছে।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টারের এক জরিপে বলা হয়েছে, ‘নদী ভাঙনের ফলে প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ জনমানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে রাষ্ট্রের স্থায়ী এবং টেকসই কোন পরিকল্পনা দীর্ঘ ৪০ বছরের ব্যবধানে হয়নি। বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনকে পুঁজি করে পাইলিং ফেলার নামে সরকারের অর্থের ব্যাপক অপচয় এবং লুটপাট হচ্ছে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’
বর্ষা মৌসুম নদী ভাঙন ঠেকানো কোনভাবেই সম্ভব নয়। নদীর স্রোত প্রকৃতির খেয়ালে চলে। যার গতি পথ বর্ষা মৌসুমে রোধ করার পর্যাপ্ত শক্তি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের তেমনটা নেই। একপাশে বাঁধ সাধলে অন্যপাশে ভাঙবেই।
তবে কি নদী ভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে নদীর গতিপথ নির্ণয়, দীর্ঘ এবং স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ এবং শুষ্ক মৌসুমে পাইলিং পদ্ধতিতে নদীর প্রবহমান গতি ধারা সৃষ্টি করার ব্যবস্থা হলেই দেশের চির অভিশাপ নদী ভাঙন ঠেকানো সম্ভব। একই সাথে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর প্রবহমান গতিপথ ড্রেইজিং এর মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে পারলেই আমাদের এই নদী ভাঙন সমস্যার অবসান ঘটবে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য