প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ০৫ আগস্ট, ২০১৯
গণমাধ্যমের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ডেঙ্গু নিয়ে গত চব্বিশ ঘণ্টায় ১৮৭০ জন হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। আর প্রতিদিনই মৃত্যুর মিছিলে যোগ দিচ্ছে অনেক মানুষ।
ডেঙ্গু নিয়ে দায়িত্বশীলদের অথর্ব কথাবার্তা আর কার্যকলাপ দেখে সত্যি এক ধরনের অস্বস্তিবোধ করছি। ডেঙ্গুবচন নিয়ে অনেকে যখন হাসি তামাশায় ব্যস্ত তখন ডেঙ্গু ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। তাই ডেঙ্গু নিয়ে আর কৌতুক করার সময় নেই।
শহর থেকে গ্রামে গ্রামে এপিডেমিক হারে ছড়িয়ে পড়ছে ডেঙ্গু। আমাদের সময় এসেছে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার।
সামনে ঈদ। ঈদকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে অনেকে প্রিয়জনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে ফিরতে শুরু করেছে। ডেঙ্গু ছড়ানোর এটি বড় ধরনের সুযোগ। শহরে ডেঙ্গু পরীক্ষা নিরীক্ষার অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া গেলেও গ্রাম অঞ্চলে এটির তেমন সুফল নেই। তাই একবার ভাবুন তো, শহরের এই ইনফেক্টেট মানুষগুলো সেকেন্ডারি বাহক হিসেবে যদি গ্রামে গিয়ে ডেঙ্গু ছড়িয়ে দেয়, তাহলে কী ধরনের ভয়াবহতা ধারণ করবে? চিকিৎসার অভাবে কী পরিমাণ মানুষ মারা যেতে পারে? তাই সময় থাকতে আমাদের সাবধান হতে হবে। আর ডেঙ্গুকে রুখতে নিচের কিছু বিষয়ে নীতি নির্ধারকরা ভাবতে পারেন
১. শহর ছাড়ার আগে জ্বরে আক্রান্ত প্রতিটি মানুষের ডেঙ্গু পরীক্ষা নিশ্চিত করা হোক। আর এই জন্য শহরের প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, বিমানবন্দরে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক। ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাকেন্দ্রে যাত্রীদের এই সুযোগ তৈরি করতে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হোক
২. যতটুকু জেনেছি, তাহলো জেলা-উপজেলা সদরে ডেঙ্গু আক্রান্তদের অধিকাংশদের হিস্টরি বলছে, তারা শহর থেকে জ্বর নিয়ে গ্রামে ফেরার পর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। তাই এই কথা সত্যি যে, মশকীর চেয়ে সেকেন্ডারি বাহকদের দ্বারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। তাই প্রতিটি জেলা ও উপজেলার প্রবেশ মুখে আর একটি করে প্যারা মেডিকেল টিম বসানো হোক। এইসব টিমে অভিজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে নেতৃত্ব দিতে পারে মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা। আর এই জন্য তাদের ডেঙ্গু নিয়ে সাময়িক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়াও রেডক্রসের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।
৩. এরপর তৃতীয় স্তরে চিকিৎসাব্যবস্থা সচল করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি হেলথ কমপ্লেক্সগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যাতে করে, গ্রামের মানুষদের হাতের নাগালে এই চিকিৎসা সেবা পায়।
৪. দেশের এক বৃহৎ অংশ জ্বর হলেই হাসপাতালগুলোতে ভিড় করছে। এদের বড় অংশ সাধারণ জ্বর নিয়ে আসছে বলে জানছি। তাই জনসচেতনতামূলক প্রচারণা বাড়াতে দেশে আনসার-গ্রাম্য পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগিয়ে ডেঙ্গু বিরোধী সচেতনতা তৈরি করা যেতে পারে।
৫. প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গুর জন্য বিশেষ ইউনিট/ওয়ার্ড তৈরি করা হোক। যাতে করে, ডেঙ্গু আক্রান্তদের স্বাস্থ্যসেবা একটি রিমোট এরিয়ার ভিতর রাখতে পারে।
৬. ডেঙ্গু নিয়ে জনপ্রতিনিধি ও অপেশাদারদের বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য বন্ধ করতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। গণমাধ্যমে ডেঙ্গুর আপডেট জানাতে, বিশেষজ্ঞদের দ্বারা একটি বিশেষ সেল গঠন করা যেতে পারে। যেখান থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা যাবে।
সর্বশেষ এইটুকু বলতে চাই, এক সময়ের কালাজ্বর, গুটিবসন্ত আর ম্যালেরিয়ার চেয়ে ভয়ানক পরিস্থিতির মুখে আমাদের দেশ। ডেঙ্গুকে প্রতিরোধ করা না গেলে এটি ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তাই নীতি নির্ধারকদের কাছে অনুরোধ, দয়া করে বালখিল্যতা ছেড়ে, কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসুন।
রাস্তায় ঝাড়ু দিয়ে মশা তাড়ানোর চেয়ে মস্তিষ্কে ঝাড়ু দিয়ে বুদ্ধিহীনতা দূর করুন। এই দেশ আমার, এই মানুষগুলো আমার স্বজন, প্রিয়জন হারানোর বেদনার স্বাদ নেয়ার আগে সবাই সোচ্চার হোন।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য