প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জাকিয়া সুলতানা মুক্তা | ২৫ মার্চ, ২০২০
সারাবিশ্বের দেশগুলো বৈশ্বিক করোনা দুর্যোগে সব থমকে গেছে। থমকে গেছে অর্থনীতি, থমকে গেছে মানুষের চলাচল-ব্যস্ত বিচরণ। সবাই এক অদৃশ্য ভাইরাসের আতঙ্কে গৃহবন্দি। রাষ্ট্রের হাত-পা বাঁধা। ঘড়ির কাঁটা ধরে চলা মানুষের ব্যস্ততম প্রতিটি দিন, রুটিন করা সমস্ত নিয়ম আর ব্যবসা-বাণিজ্য, ভ্রমণসূচির পৃষ্ঠাগুলো নির্বিকার নিশ্চুপ হতে আজ বাধ্য হয়েছে।
এত এত কোলাহল ছেড়ে সবাই যেন প্রহর গুনছে অনিবার্য কোন নিয়তির। কারণ মানুষ স্বার্থপর হয়ে উঠেছিলো, মানুষ একা বাঁচতে চেয়েছিল। মানুষ ভুলে গিয়েছিলো সে অত্যন্ত দুর্বল প্রাণি, একা সে বাঁচতে পারেনি কখনো; এখনও নয়। সে নিজেকে এতটাই শ্রেষ্ঠ ভেবেছে, যার কারণে সে বিচ্ছিন্ন করেছে পৃথিবীর অপরাপর অন্যান্য প্রাণের সাথে সমস্ত সখ্যতা। অধীন ভেবে তাদের নিরাপত্তার কথা স্মরণে রাখেনি, প্রকৃতির রুদ্ররূপ ভুলে গিয়ে মিছে অহংকারের ভ্রমে মশগুল ছিলো। এতটাই বিভোর ছিলো প্রমোদ উল্লাসে যে, মানুষের কাছেই মানুষ হয়েছে অনিরাপদ; শুধু মানুষভিন্ন অন্য প্রাণ কিংবা প্রকৃতিই নয়। আজ তাই করোনাক্রান্ত হয়ে মানবসমাজের দেহ সেই বিচ্ছিন্নতা আর উন্নাসিক ফাঁপা গর্বের নিষ্ঠুর ফলাফলের সম্মুখীন।
বাস্তবতা আজ এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে যে, বিশ্বের প্রতিটি ঘর-মন-জানালা আজ স্তব্ধ একটি ক্ষুদ্র ভাইরাসের কাছে। মানুষের প্রাণচাঞ্চল্য যে পথ দিয়ে গেছে, সেই পথই প্রকৃতিকে দলে মুচড়ে একাকার করে গেছে, তাই মানুষের পদধ্বনি নিয়ন্ত্রিত হওয়ার বার্তায় প্রকৃতিও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে; প্রাণ পাচ্ছে সজীবতা ও অন্যান্য প্রাণের মুখর উৎসবে। মানুষ কি তা বুঝতে পারছে? মানুষ কি তার ভুল অনুধাবন করতে পারছে? এই বিশ্বের মনুষ্যপ্রজাতি এতদিন ভুল পথে হেঁটেছে, এটা কি এই পৃথিবীর মানবকুল ভাবতে পারছে? যদি না পারে এখনও, তবে মানুষের পতন কেউ ঠেকাতে পারবে না।
প্রকৃতি আজ শাসনের বার্তা দিতে আরম্ভ করেছে। এই কিছুদিন আগেও মানুষের হৃদয় পৃথিবীর ফুসফুস আমাজনে আগুন লাগলে কাঁদেনি, মানুষ ব্যতিব্যস্ত ছিলো তার জয়রথ অব্যাহত রাখায়। এইতো সেদিন দাবানলে অস্ট্রেলিয়ার প্রাণ ও প্রকৃতি জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো বিষমাকারে, মানুষের তাতে কোন ভ্রুক্ষেপ জন্মায়নি। আজ সেই মানুষ পড়েছে বিপর্যয়ে, নিজেরই ফাঁদা ফাঁদে। এতদিন যে প্রাণগুলোর হন্তারক হয়েছে, এতদিন প্রকৃতির অপরাপর প্রাণগুলোর প্রতি যত অত্যাচার করেছে মানুষ কেবল বৃহৎ মস্তিষ্কের শ্রেষ্ঠত্বের বড়াইয়ে; তার মূল্য দেওয়ার এইতো শুরু।
এত বড় বিপর্যয় মানুষের সমাজে আর কখনো কোনদিনও আসেনি। কারণ পৃথিবীর সব দেশে এই মুহূর্তে করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবা পৌঁছে গেছে। একই সাথে এবং একই ভয় ছড়িয়ে এভাবে বিশ্বের মানব সভ্যতাকে স্থবির করে দিতে আর কোন যুদ্ধ কিংবা বিমার পারেনি। তাই মানুষকে এবার ভাবতে হবে- মানুষ যা যা অপরাধ করেছে, তা তারা শোধরাবে কিনা?
মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি নিছকই একটা মিথ বৈ আর কিছুই নয়। এটা মানুষকে এইবেলায় এসে অনুধাবন করতে হবে। নইলে প্রকৃতি মানুষকে আর ছেড়ে কথা বলবে না। আজ করোনায় কিংবা আগামীকাল অন্যকোন পঙ্গপালে এসে মানুষকে নিশ্চিহ্ন করতে উদ্যত হবেই।
সময় থাকতেই মানুষ নিজের ভোগবিলাসিতাকে এখন নিয়ন্ত্রণ করুক। ভালোবাসুক বিশ্বের অপরাপর প্রাণকে, ভালোবাসতে শিখুক এই প্রকৃতিকে। মানুষ ভালোবাসুক ধর্ম-বর্ণ-গোত্রভেদে নিজেদেরকেও নিজেরা। বিভেদের, হিংসার এই দেয়াল মানুষকে স্বয়ং মানুষের থেকেই বিচ্ছিন্ন করেছে; আর অনিবার্যভাবে আলাদা করেছে মানুষভিন্ন পৃথিবীর অন্যান্যদের কাছ থেকেও।
তাই বিরোধ বা শ্রেষ্ঠত্বের বড়াই বাদ দিয়ে এই বিশ্বকে মানুষ আপন করে নিক, ভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের বিশ্বে মিলেমিশে থাকতে শিখুক। তবেই মানুষ এই বিপর্যয় কার্যকরীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবে, অন্যথায় নয়।
মানুষের প্রভাবশালী জীবন দর্শনগুলোকে মানুষ বিনির্মাণ করুক, মানবের কল্যাণে কেবল নয়; এই মহাবিশ্বের সবার কল্যাণে, সবার জন্য। মানুষ হয়ে উঠুক প্রকৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, বিচ্ছিন্ন কেউ হিসেবে নয়। বিচ্ছিন্নতা, বিভক্তির বিষ কাটিয়ে আজকের মানবসভ্যতা হয়ে উঠুক আগামীকালের সত্যিকারের সজীব প্রাণ।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য