আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

কাপ্তাই বাঁধ বনাম ফারাক্কা বাঁধ: আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার বাংলাদেশ

রেজা ঘটক  

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কোল্ড-ওয়ার যুগে পাকিস্তান ও ভারতে নির্মিত দুইটি বাঁধ শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য বিপদ ডেকে এনেছে। বাঁধ দুটি হলো কাপ্তাই বাঁধ ও ফারাক্কা বাঁধ। মজার ব্যাপার হলো, কাপ্তাই বাঁধের জন্য পাকিস্তানকে অর্থ সাহায্য করেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর ফারাক্কা বাঁধ ভারতের হিন্দুস্তান কনস্ট্রাকশন কোম্পানি তৈরি করলেও এর পেছনে রাশিয়ার সরাসরি সহযোগিতা ছিল।

কাপ্তাই বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় শুরু হয় ১৯৫৭ সালে আর নির্মাণ শেষ হয় ১৯৬২ সালে। অন্যদিকে ফারাক্কা বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে আর শেষ হয় ১৯৭৫ সালে।

কাপ্তাই বাঁধের ফলে তখন চট্টগ্রামের কাপ্তাই এলাকায় প্রায় চল্লিশ হাজার চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষ চাষের জমি, বাড়িঘর হারিয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেয়। আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বাহিনী প্রতিষ্ঠা এবং ওই অঞ্চলে সৃষ্ট সংঘর্ষের প্রধান কারণ এই কাপ্তাই বাঁধ। যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান ২৩০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নামে সৃষ্টি করেছিল।

কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে পার্বত্য এলাকায় জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয়েছে। বন্যপ্রাণী এবং তাদের বসবাস উপযোগী আবাসও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

অন্যদিকে রাশিয়ার সাহায্য নিয়ে গঙ্গা নদীতে ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে ভারত কলকাতা বন্দরকে পলি জমা থেকে রক্ষা করা এবং ফারাক্কা সুপার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে জল সরবরাহ করার অজুহাত দেখায়। বাস্তবে ফারাক্কা বাঁধ গোটা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পদ্মা নদী নির্ভর কৃষি চাষাবাদের উপর সুদূরপ্রসারী নেগেটিভ প্রভাব ফেলেছে। যা বাংলাদেশকে ধীরে ধীরে মরুভূমি বানাতে চলেছে। পদ্মা নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় প্রতি বছর বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে বড় ধরনের বন্যা হচ্ছে।

কাপ্তাই বাঁধ ও ফারাক্কা বাঁধ কোল্ড-ওয়ার যুগের মার্কিন-রাশিয়ার আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্বের চরম বহিঃপ্রকাশ, যা এই দুই দেশের বন্ধু রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ভারত তাদের স্বার্থরক্ষায় করতে আগ্রহী হয়েছিল। কিন্তু এই বাঁধ দুটির ফলে স্থায়ী ক্ষত সহ্য করতে হয়েছে বা এখনো হচ্ছে বাংলাদেশকে।

মজার ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কাপ্তাই বাঁধের সমস্যা নিয়ে যতটা নীরব, ফারাক্কা বাঁধের সমস্যা নিয়ে ততটাই সরব।

অথচ আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশ্লেষণে একটু যদি খেয়াল করা যায়, তাহলে অন্তত বলা যায় যে, পাকিস্তান কাপ্তাই বাঁধ না দিলে ভারত হয়তো ফারাক্কা বাঁধ দিতো না! বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরেও এই বাঁধ দুটি নিয়ে সরকারিভাবেই আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি থাকায় দেশের সাধারণ মানুষ আসল সমস্যাটি আজ পর্যন্ত ধরতে পারেনি। অথচ প্রকৃতির বিরুদ্ধাচরণ করে নদীর উপর যে কোনো ধরনের বাঁধ দেওয়া একটা বড় ধরনের অপরাধ হলেও রাষ্ট্রযন্ত্র সেই অপরাধের জন্য দায়ী।

আর তা থেকে সৃষ্ট নেতিবাচক বিষয়গুলো পরবর্তী সময়ের সকল অনাচারের অনুষঙ্গ।

রেজা ঘটক, সাহিত্যিক, নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ