প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ০৪ এপ্রিল, ২০২০
গত ৮ মার্চ প্রথমবারের মত নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর আজই (৪ এপ্রিল) সর্বোচ্চ নয়জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে, মারা গিয়েছেন আরও দুইজন। এই যখন শঙ্কার পরিস্থিতি তখন সকাল থেকে ময়মনসিংহ থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বে ঢাকায় পৌঁছাতে হাজার হাজার মানুষ পায়ে হেঁটে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। বিকেলে মাওয়া ফেরিঘাটে হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড়। এরা সবাই যাচ্ছেন ঢাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কর্মে যোগদান করতে।
দেশে কভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে চিকিৎসক, পুলিশ, সেনাবাহিনী যখন রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, খেয়ে না খেয়ে মানুষরা যখন প্রাণ বাঁচাতে ঘরে মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, সরকার যখন এইসব মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে সাধারণ ছুটি ঘোষণার মাধ্যমে কার্যত লকডাউন করেছেন, ঠিক তখন এই দেশের চালক অংশের একটি বড় দল, এই গরীব মানুষদের মৃত্যুর রশির উপর দিয়ে জীবন-জীবিকার লোভে দেখিয়ে ঘর থেকে বের করতে সক্ষম হয়েছেন।
মানুষকে ঘরে রাখতে সরকার যখন হিমসিম খাচ্ছে তখন বেশ সফলতার সাথে এই দেশের গার্মেন্টস মালিকরা এই খেটে খাওয়া মানুষদের রাস্তায় আনতে দ্বিধা করেননি।
২৫ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত গার্মেন্টস’ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল কোম্পানিগুলো। ঠিক এই সময় সরকার ঘরে থাকার কর্মসূচি বাড়িয়ে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত করলেও গার্মেন্টস খোলার পূর্ব ঘোষণায় তারা কোনো পরিবর্তন করেনি।
সরকারের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না হওয়ায় পরিবহন বন্ধ রয়েছে, অথচ এই লাখ লাখ মানুষকে দুর্ভোগ নিয়ে ঢাকা ফিরতে বাধ্য করানো হয়েছে।
এই গার্মেন্টসগুলো যখন ক্ষতির শিকার না হোন সেই জন্য গত ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজিএমই তথ্য অনুযায়ী ১ হাজার ১০৪ কোম্পানির ৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির কথা যখন বলছেন, ২০ লাখ ১৯ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানে ক্ষতির কথা বলছেন ঠিক তখনই, সরকার তার প্রধান রপ্তানি আয়ের উৎসকে অক্সিজেন দিতে রাজি, সাধারণ মানুষদের বাঁচাতে কোটি কোটি টাকার ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন, তখন গার্মেন্টস মালিকদের এমন সিদ্ধান্ত যেন এক মণে দুধে এক ফোঁটা টকের সমতুল্য।
সারা বিশ্ব যখন কার্যত লকডাউনে, কেনাকাটা যখন বন্ধ, মানুষ যখন বেঁচে থাকার সংগ্রামে ঘরবন্দি, অর্থনীতির মন্দার কবলে যখন বিশ্ব তখন এদেশের গার্মেন্টস মালিকরা ‘সম্ভবত মানুষ মেরে’ দেশ (নিজে) বাঁচানোর লড়াই করতে যাচ্ছেন।
কারণ, এই গার্মেন্টস কোম্পানির মালিকরা কেউ সাংসদ, কেউ বা মন্ত্রী কিংবা সরকারের নীতি নির্ধারক। এরাই চালাচ্ছেন দেশ। এদের কথায় আপনি যেমন ঘরে থেকে করোনা প্রতিরোধ করতে নেমেছেন, ঠিক এদের অপর পৃষ্টের কথায় নিম্নবিত্তরা পেটের তাগিদে কাজে ফিরছে। মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ চরিত্রে দেশ করোনা প্রতিরোধ করছে।
এই গার্মেন্টস মালিকদের কেউ কেউ গণমাধ্যম চালায়, এদের কথায় সংবাদ উঠে আর বসে।
তাহলে এইসব তামাশা দেখানোর মানে কী? পরিবহন বন্ধ রেখে লাখো মানুষদের হেঁটে ঢাকায় ফেরানোর মানে কী তাহলে?
ক্ষতি শুধু গার্মেন্টস মালিকদেরই হচ্ছে, এই দেশের অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী, দিনমজুর, রিকশাচালকদের ক্ষতি হচ্ছে না?
সবাই যখন ক্ষতির কথা মেনে নিয়ে ঘরে থেকে করোনা প্রতিরোধে ঘরে থাকছে, তখন গার্মেন্টস মালিকরা ৫ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা পাওয়ার পরও মৃত্যুর খেলায় কেন নামল? ওই প্রণোদনা দিয়ে তো ২৫ লাখ গার্মেন্টস শ্রমিকদের কয়েক মাস বসিয়ে রেখে বেতন দেয়া যেত।
তাহলে এই চিকিৎসক, সাংবাদিক, সেনাবাহিনী, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তারা দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন কীসের জন্য, কাদের জন্য?
বিপদ আমাদের এখনো কাটেনি, সামনে ওঁত পেতে আছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এদের থামান। আপনার শত ভাল সিদ্ধান্ত মলিন হয়ে যাতে পারে এইসব লোভী গার্মেন্টস কর্তাদের বেখেয়ালি সিদ্ধান্তে। দেশ বন্ধ থাকলে প্রতিদিন যে আপনি হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান মাথায় নিয়ে মানুষদের ঘরে রাখছেন, সেখানে গার্মেন্টস মালিকরা কয়েক বিলিয়ন ডলারের নেশায় মৃত্যু নিয়ে খেলছে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য