আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: জনকল্যাণ বনাম খরচ

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী  

করোনাভাইরাসকালেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে বলে বিবিএসের পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত আশার কথা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি যখন ঘটে তখন উৎপাদিত সমস্ত কিছু সক্রিয় হয়ে ওঠে, যাতে ভোক্তার পণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি পায়। এর দরুন অতিরিক্ত ভোক্তা পণ্য গ্রহণ করে মানুষের জীবনযাত্রার মানের অগ্রগতি সাধিত হতে পারে। উৎপাদিত সম্পদ যদি সুন্দর ও দক্ষতার সঙ্গে বণ্টন ব্যবস্থায় সুষমভাবে এবং দুর্নীতিমুক্তভাবে প্রাপ্য লোকের কাছে পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় তবে ‘চুইয়ে পড়া’ তত্ত্বের আলোকে সমাজের দরিদ্র শ্রেণিও আয় বণ্টন ব্যবস্থার আওতায় ধনী শ্রেণি কর্তৃক প্রদত্ত কর এবং প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা দ্বারা উপকৃত হতে পারে। আসলে বৈষম্য হ্রাস করার যে উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে তাকে বণ্টন ব্যবস্থায় এনে নিম্ন আয়ের লোকদের কাছে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ কোন একটি শ্রেণির কাছে আটকে না রেখে পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হবে, যেক্ষেত্রে প্রাপকরা নিজস্ব বরাদ্দের অর্থ পাওয়ার জন্য কোন ধরনের সমস্যায় না পড়েন।

এদেশে যদিও সাম্প্রতিক বছরসমূহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, তথাপি দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশসমূহের মধ্যে কর থেকে জিডিপির প্রাপ্য অনুপাত হচ্ছে মাত্র ৯.৩%। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ যেমন নেপাল কর থেকে জিডিপির অনুপাত হচ্ছে ২৩.১% আর ভারতে হচ্ছে ১৬.৮%। এমনকি ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানেও কর থেকে জিডিপির অনুপাত হচ্ছে ১১%। আমাদের দেশে ধনবান শ্রেণি কর দিতে চান না কিংবা কর আদায়কারী প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সঠিক পন্থায় কর আদায়ে ব্যর্থ হচ্ছে। আসলে গ্রিস দেশের নাগরিকদের মতো কর ফাঁকি দিতে উৎসাহী হওয়া উচিত নয়। সবাই কর আদায়ের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে তোলার কথা বলেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো সরকার তো প্রচুর প্রশিক্ষণ বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে গ্রহণ করেছিল। এ সমস্ত প্রশিক্ষণের ফলাফল দেখতে পাচ্ছি না। যতক্ষণ না আঁতাতকারী ট্যাক্স প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি, ইনকাম ট্যাক্সের উকিল আর কর্মকর্তারা যৌথভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করবে ততক্ষণ এমনটি ঘটতে পারে।

যখনই একটা দেশে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায় তখনই বিলাসবহুল পণ্যের প্রাপ্যতা দেশি কিংবা বিদেশি পণ্য থেকে সরবরাহ সুনিশ্চিত করতে হবে। দেশি পণ্যের ক্ষেত্রে দেশে মূল পুঁজি থেকে যায় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে বিদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি করতে গেলে প্রচুর অর্থ ব্যয় হতে পারে। দেশে বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ঘটে থাকে, যেমন- রাস্তা, রেল, নৌপথসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধিত হওয়ার কথা। তবে এদেশে নৌপথ ক্রমশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। সরকার ড্রেজিংয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ ও খরচ করছে। কিন্তু অধিকাংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিষ্ঠা এবং দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। অথচ ড্রেজিং যদি ঠিকভাবে না করা যায় তাহলে পলি পড়ে নৌপথ বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও নৌপথের মাধ্যমে পরিবহন সর্বদা একটি প্রাকৃতিক, পরিবেশবান্ধব এবং এক-চতুর্থাংশ খরচে সম্ভব। কিন্তু নদী ক্রমশ সঙ্কুচিত এবং ড্রেজিং ঠিকমতো না করা ও নৌপথ অব্যবস্থাপনার কারণে দেশের অনেক নৌপথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সরকারের চেষ্টা থাকলেও কী হবে, এক্ষেত্রে সার্বিকভাবে যারা দখল করে থাকেন তাদের বুকের পাটা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি।

সামাজিক কল্যাণের সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে উন্নত জীবনমানের সংযুক্তি ঘটে থাকে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক কল্যাণ তথা ব্যষ্টিক থেকে সমষ্টিগতভাবে মানুষের কল্যাণ সাধন করতে পারলেই কেবল জনকল্যাণ সাধিত হতে পারে। এজন্য সামগ্রিক বিবেচনায় সবাইকে নিয়ে অগ্রযাত্রা সাধনের মতো মত ও পথের প্রয়োগ ঘটাতে হয়। তবে কখনও কখনও এমনও দেখা যায় যে, যাদের লক্ষ্য করে সামাজিক কল্যাণ তথা উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে তারা কিন্তু বাস্তবায়নকারীদের কারণে নীতিগতভাবে যে সাফল্য পাওয়ার কথা তা বিচ্ছিন্নতার কারণে সমাজের বিভিন্ন স্তরে অবিচ্ছিন্নভাবে সাহায্যপ্রাপ্তিতে অক্ষম থাকেন। কল্যাণ কর্মকাণ্ডকে সাফল্য মণ্ডিত করতে করোনা-পূর্বেই বর্তমান সরকার সেফটি নেটের আওতা বৃদ্ধি করেছে। সেফটি নেটের আওতায় বিভিন্ন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সহায়তার জন্য সরকার যে সমস্ত কার্যক্রম গ্রহণ করেছে তা দেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্য এবং পিছিয়ে পড়া ও ভঙুর অবস্থা থেকে মুক্তির পথ নির্দেশ করে থাকে। এই সমস্ত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের আয়-রোজগারের সুরক্ষার বিধান করা, সাময়িকভাবে কর্মজীবী নারী-পুরুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য যুবতী মা ও শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া এবং তৃতীয় লিঙ্গের জন্য উন্নতমানের জীবনমানের উদ্যোগ গ্রহণ করা। সরকারের এ সদিচ্ছা যারা বাস্তবায়ন করবেন তারা কতটুকু আন্তরিক তার জন্য তদারকি ব্যবস্থা জোরালো থাকা উচিত। এই কার্যক্রমগুলো আরও গতিময়তা পেত যদি এক শ্রেণির লুটেরা, পেটোয়া, সন্ত্রাসী এবং অন্যের সম্পদ দখলকারী বিভিন্ন সরকারের সময় যে পৃষ্ঠপোষকতা পঁচাত্তর পরবর্তীতে পেতে পেতে কেবল নিজেরাই নয়, তাদের উত্তরসূরিরা তাদের একটি গ্রুপ যারা ক্ষমতার কাছাকাছি আছে তাদের মধ্যে এক ধরনের দুর্বীনিত সাহস সমাজে দেখাতে শুরু করেছে। এরা আসলে কোন দলের নয়। কাউওয়া শ্রেণি কিংবা গিরগিটির মতো রং পাল্টানোর কারণেই দুঃসাহস দেখাচ্ছে তারা।

প্রশংসা করতে হয় বর্তমান সরকার কিছু দুর্বীনিত ও দুর্নীতিগ্রস্তকে ইতোমধ্যে বিচারের আওতায় এনেছে। জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডকে শক্তিশালী করতে প্রশাসনিক দক্ষতা বৃদ্ধি, ভঙুর ব্যবস্থাপনাকে পরিবর্তনের মাধ্যমে গতিশীলতা প্রদান, সময়োপযোগী ও দক্ষতার সঙ্গে সুবিধা এবং পরিষেবাদি সরবরাহ করতে এবং নাগরিকদের জীবনমান উন্নত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে ধীরে ধীরে মানব সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মাথায় রেখে যাতে নতুন করে কর্মহীন না হয় কেউ সেজন্য প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাটির মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। দুর্ভাগ্য যে, নিয়ম মেনে দরখাস্ত করলেও করোনাকালে টাকা দিয়ে ডিজিটাল উপায়ে দরখাস্ত করার পর সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশপত্র দেয়নি। পরে খোঁজ নিতে গেলে, দেখা গেল সিস্টেম থেকে দরখাস্তকারীর নাম বিলুপ্ত করে দিয়েছে। যারা এ ধরনের দুর্নীতি করেছে তারা অবশ্যই ডিজিটাল আইনের আওতায় বিচার্য। কারণ একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হিসেবে জানি, কখনও নির্দেশ ছাড়া কারোর দরখাস্ত সিস্টেম থেকে মোছা যায় না। তাছাড়া নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষাও কিন্তু হয়নি। এমনকি দরখাস্ত করেছে তার ট্র্যাকিং নম্বর দিলেও বলছে যে, সিস্টেমে নেই। আইটির ক্ষেত্রে ডেটা ওয়ারহাউসে পরীক্ষা হওয়ার পর তিন মাস তথ্য-উপাত্ত জমা থাকার কথা।

করোনাকালে যারা এ ধরনের অঘটন ঘটিয়েছে তাদের মনে রাখা উচিত তাদেরও সন্তান-সন্ততি আছে। সরকারের সাধু ইচ্ছাকে অন্যায়ভাবে ডিজিটাইলাইজেশনের সুফলকে যারা কুফলে রূপান্তরিত করছেন তারা চরম ব্যর্থতা এবং দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। আমি মনে করি, যে যেখানে আছেন তিনি সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে এ ধরনের হীন ঘটনা ঘটত না। এমনিতেই চাকরির বাজার করোনার কারণে মন্দাক্রান্তা। এ ধরনের তামাশা যারা করেছে তারা অবশ্যই যুবক-যুবতীদের মনের কষ্ট বুঝবে না। ভুলে যায় যে, আমাদের দেশের জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় মানুষের উন্নয়নের কথা ভাবেন। অথচ বড় পদ পেয়ে তারাও যে আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে সমস্যার মধ্য দিয়ে গেছে সেটি কিন্তু তাদের মনে থাকে না। মানুষ ভুল করলে সহজে সে পথ থেকে উত্তরণের সুযোগ অবশ্যই দিতে হবে। দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, কিন্তু সেখানে কার কতটুকু অবদান সেটি বিচার্য হয়ে উঠছে। নেত্রী আমাদের উন্নয়নের কথা ভাবেন, পথনির্দেশিকা দেন। মাঝপথে একজন আরেকজনের ওপর নানা দোষ চাপায়। ফলে প্রকৃত দোষীরা অনেক সময় বেঁচে যায়। মাঝখান থেকে রুই-কাতলার বদলে পুঁটি-মলা মাছ ধরা পড়ে। গডফাদারদের দেখা মেলে না। সরকার চলতি অর্থবছরের বাজেটে দেশের নাগরিকদের জন্য সুস্পষ্ট নির্দেশনা কোভিডের কারণে ঘোষণা করেছে, যাতে তাদের স্বাস্থ্য ও জীবনের সুরক্ষা হয়।

প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং দু’বার এবং তারও বেশি ক্ষেত্রে শীতকালে করোনার প্রকোপ বাড়তে পারে বলে জনগণকে সাবধান করেছেন। সরকার একটি জরুরি প্রক্রিয়ায় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যাতে স্বার্থ এবং আর্থ-সামাজিক পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছি, একটি শ্রেণির চিকিৎসক-নার্স সমাজ ও মানুষের সেবায় দায়বদ্ধ। আরেকটি শ্রেণির চিকিৎসক-নার্স, যাদের সংখ্যাই অধিক তারা কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করছে না। চিকিৎসা তৎপরতা মোকাবেলার জন্য তিন ধাপে তাৎক্ষণিক, স্বল্প এবং মাঝারি কর্মসূচির মাধ্যমে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট মার্কিন ডলার ১২.১১ বিলিয়ন, যা আমাদের মোট দেশজ উৎপাদনের ৩-৭ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। স্বেচ্ছা সেবামূলক জাতীয় পর্যালোচনা প্রক্রিয়ায় দেখা যাচ্ছে যে, ইতোমধ্যে ২০২০ সালের জন্য নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আমাদের অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০০৫ সালে দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ২০১৯ সালে ২০.৫ শতাংশ হয়েছে এবং মানুষের আয়ুষ্কাল ৬৫ বছর থেকে বেড়ে ৭২.৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। তবে তারা উল্লেখ করেছে যে, গিনি সহগ ১৯৯১-৯২ সালে যেখানে ০.৩৩৮ ছিল, ২০১০ সালে এটি হয়েছে ০.৪৫৮ এবং ২০১৬ সালে হয়েছে ০.৪৮২।

গিনি সহগ কমানোর জন্য অবশ্যই অর্থনীতিবিদ এবং পরিকল্পনাবিদ ও বাস্তবায়নকারীদের একযোগে কাজ করতে হবে। সাম্যভিত্তিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে পরমুখাপেক্ষী চাকরির চেয়ে স্বকর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা যুবক-যুবতীদের জন্য করতে হবে। এদেশে উদ্যোক্তা তৈরির জন্য, উদ্ভাবনের জন্য প্রধানমন্ত্রী বহু পদক্ষেপ নিয়েছেন। কিন্তু কিছু সুযোগসন্ধানী এই সমস্ত উদ্যোগ থেকে প্রতিশ্রুত কর্মকাণ্ড সরকারি-বেসরকারি সংমিশ্রণে করতে মোটেও ইচ্ছুক নন। বরং ব্যক্তিগত সুযোগ গ্রহণে বা স্ব-প্রতিষ্ঠানের সুযোগ গ্রহণে তারা পারদর্শী। এত সুযোগসন্ধানী থাকলে তাদের পক্ষে কর্মপরিচালনা সুচারুরূপে সরকারের নির্দেশিত পথে করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তবে সরকার যে অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় উন্নয়ন ঘটাচ্ছে সেখানে কোন ধরনের বাধা-বিপত্তির সঞ্চার হলে তা পরীক্ষাকরতঃ আবার নতুনভাবে কর্মস্পৃহা তরুণদের মনে জাগাতে হবে। তরুণদের মাদক, জুয়া, অস্ত্র এবং নাইট ক্লাব থেকে দূরে রাখা ও কিশোর গ্যাং থেকে দূরে রাখতে সমাজ থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষ মানুষের জন্য এবং প্রতিটি মানুষের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা আছে। মহিলাদের দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে সরকার জোর দিয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। যে সমস্ত ছেলেমেয়ে মাস্টার্স চারে চার পাওয়ার পরও তার পঠন শেষ করা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় চাকরি দেয় না, তাদের অবশ্যই ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচিত কি কারণে শিক্ষকতা অথবা প্রশাসনিক পর্যায়ে চাকরি দিচ্ছে না তার তদন্ত করা। তারা যদি মনে করে থাকে তাদের পরীক্ষার মূল্যায়ন ভুল হয়েছে তবে তা প্রকাশ্যে স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়া উচিত। ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ যে ধরনের খেলা খেলে তার দিকে অবশ্যই ইউজিসি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নজর দিতে হবে। এ পর্যন্ত সরকার শিক্ষার মান উন্নয়নে এক্রিডেন্সিয়াল কাউন্সিল গঠন করলেও বেতন-ভাতাদি গ্রহণ এবং পদ বসানো ছাড়া জাতি কোন কিছু পাচ্ছে না। এর কারণ কি বোধগম্য নয়? তাদের উচিত অনলাইন পাঠ্যক্রম তৃণমূল থেকে উচ্চশিক্ষা, এমনকি মেডিকেল, প্রকৌশলসহ সর্বত্র দেখার উদ্যোগ নেয়া। এ তো দেখি যাকে যেখানে পদায়ন করা হচ্ছে তাদের অনেকেই রিপ ভ্যান উইংকেলের মতো সুখনিদ্রাসহ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণে ব্যস্ত আছেন। উন্নত কারিগরি ও প্রযুক্তিগত বিদ্যা শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে দেশে দক্ষ উদ্যোক্তা বিভিন্ন স্তরে তৈরি করা, আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে বর্ধিতভাবে ব্যবহারে উৎস হিসেবে চিহ্নিত করা এবং দেশের প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানবসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, যাতে করে সৃজনশীল, উদ্ভাবনী, মৌলিকত্বের বিকাশ ঘটে থাক।

যেহেতু বিশ্বে অনেক দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে এবং আমাদের এখানেও আসবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেহেতু এখন থেকেই বিজিএমইকে সতর্ক হয়ে দেশে-বিদেশে বাজারের চাহিদা এবং পণ্য রপ্তানির ব্যবস্থার সুযোগ যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য এখন থেকেই নীতিনির্ধারণ করতে হবে। একই সঙ্গে কারখানায় যেন সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সকল ধরনের আমদানি বিকল্পায়ন এবং রপ্তানিমুখী কারখানার কর্মীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বাধ্য করা দরকার। অক্টোবর ২০২০-এ দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪০৮১৬.৩ মিলিয়ন ডলার। এ দেশের ঋণ-জিডিপির অনুপাত তুলনামূলকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় স্বল্প। দেশে বর্তমানে চলতি হিসাবের ভারসাম্য মোটামুটি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশি হওয়ায় ভাল কাজ করতে সরকারকে উদ্বুদ্ধ করবে। কোভিডের কারণে যে ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিল সরকারের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে, বিশেষত অপ্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গঠনমূলক ভূমিকা পালন করেছে। প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তুলনামূলকভাবে ধনী শ্রেণির পক্ষে কাজ করেছে। দীর্ঘমেয়াদী দারিদ্র্যের হাত থেকে এ পর্যন্ত সরকারের প্রয়াসে সাধারণ মানুষ বেঁচেছে। যারা করোনাকালে মানুষকে চাকরিচ্যুতি করেছে তারা অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ করেছে। উপার্জন সমাজ ব্যবস্থায় আয় বণ্টনে সহায়তা করে থাকে। উদ্যোক্তা শ্রেণি গঠনে প্রয়োজনীয় পাঠ-পঠনের বিকল্প নেই। বিশেষত করোনাকালে এটি পরিষ্কারভাবে অনুভূত হয়েছে যে, উদ্যোক্তা পূর্বাভাসের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব। উদ্যোক্তা পূর্বাভাসের মাধ্যমে এমনভাবে কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন যাতে করে ভবিষ্যতের কর্মকাণ্ডের রূপরেখা নির্ধারণ বিচার-বিশ্লেষণকে উপাত্ত হিসেবে নির্ধারণ করে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডকে দুরবস্থার মধ্যে সচল রাখতে সহায়তা করে থাকে। উদ্যোক্তারা কিভাবে তাদের বাজেট বরাদ্দ করে সমস্যা মোকাবেলা করবে এবং ভবিষ্যতে যাতে প্রত্যাশিত ব্যয়ের জন্য পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে পারে সেজন্য অবশ্যই অনুমান সঠিকমাত্রায় ঘোষণা করবে।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে কর্মসংস্থান ক্রমশ সঙ্কুচিত হচ্ছে। এ সময় অর্থনীতির বৃহত্তর স্বার্থে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে এবং এটি করতে হলে অধিক হারে উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে। এজন্যই বিশ্বব্যাপী উদ্যোক্তা শিক্ষা ব্যবস্থায় গুরুত্ব বাড়ছে। আর তাই দেশেও উদ্যোক্তা শিক্ষা ব্যবস্থাকে সম্প্রসারণ এবং ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্সে উদ্যোক্তা তৈরিকল্পে যে সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে তাকে গঠনমূলক সহযোগিতা প্রদান করা দরকার রয়েছে।

অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী, ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ই৪কোনমিস্ট; শিক্ষাসংক্রান্ত বিদেশে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত; আইটি ও উদ্যোক্তা বিশেষজ্ঞ; সাবেক উপাচার্য প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ।ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ