আজ বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ভারতের অসম নাগরিকপুঞ্জি: একাল-সেকাল এবং ...

রহিম আব্দুর রহিম  

ভারত উপমহাদেশে অসম অঞ্চলটি এক সময় প্রকৃতির লীলাভূমি হিসেবে পরিচয় বহন করেছে। এই অঞ্চলে বসবাসকারীদের মধ্যে খাসিয়া জয়ন্তিয়া, লুসাই পাহাড়ের মিজো, নাগা পাহাড়ের নাগা, এনসি হিলের কার্বি ডিমাস, অরুণাচলের ট্রাইবাল সম্প্রদায়, অবিভক্ত কাছাড় জেলার বাঙালি, মণিপুরি হিন্দিভাষী, চা বাগান শ্রমিক জনগোষ্ঠী, নেপালি কুকিমার অসমীয় ত্রিপুরী উপজাতির আবাসভূমি ছিলো। কালের আবর্তে অসম এখন বহু জাতিক জন মানবের চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওয়ার সূত্রপাত ঘটে। ভারত স্বাধীনতা সংগ্রাম যখন প্রবল, ঠিক ওই সময় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারত উপমহাদেশ বিভাজনের কূটকৌশল ছুঁড়ে দেয়। ব্রিটিশদের কূটকৌশল গিলে তৎকালীন ভারতবর্ষের কিছু কিছু রাজনৈতিক দল। ফলে ভারত-পাকিস্তান দ্বিখণ্ডিত হয়। ১৯৫০ সালের ভারত স্বাধীনতা আন্দোলন দাঙ্গায়, প্রায় কয়েক লক্ষ লোক প্রাণ হারায়। ঘরবাড়ি, আবাস ভূমি ত্যাগ করতে হয়েছে আরও কয়েক লক্ষ জনমানুষদের। ওই সময় অবিভক্ত কাছাড় জেলা ও ব্রহ্মপুত্র উদ্বাস্তু কমিটি গঠন করে অসহায় জনমানুষদের জীবন রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালান। ওই কমিটি পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনের চেষ্টাও করে। এরকম পরিস্থিতিতে একমাত্র ভারতের অসমেই ১৯৫১ সালে নাগরিকপুঞ্জি তৈরি করার কাজ সরকার হাতে নেয়। প্রথম জাতীয় নাগরিকপুঞ্জি নবায়ন করার পর দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও অসমে এই নিয়ে কোন প্রকার তর্ক-বিতর্ক বা কোন জনমানুষ আতঙ্ক হতাশায় পড়েনি, এমনকি এই নিয়ে কোন রাজনৈতিক খেলাও চলেনি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকবাহিনীর নির্মম নির্যাতন নিপীড়ন, হত্যাযজ্ঞের হাত থেকে রেহাই পেতে মুক্তিকামী বাংলাদেশিরা ভারতে আশ্রয় নেয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রায় এককোটি জনমানুষ ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় সবাই দেশে ফিরে আসে। তবে কিছু বাংলাদেশী শরণার্থী, মাইগ্রেশন করে ভারতেই থেকে যায়।

১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ দীর্ঘ আট বছরের ব্যবধানে অসমে অবৈধ অভিবাসীদের চাপ বেড়ে যাচ্ছে বলে, মনে করে অসমের স্থায়ী বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ। তাদের অনুমান সন্দেহের কারণও স্পষ্ট, অসমের করিমগঞ্জও কাছাড় জেলার সাথে বাংলাদেশের, অসমের উদয়গিরি, কোকরাঝড়ও বাকসা জেলার সাথে ভুটানের আন্তর্জাতিক সীমানা থাকায় বাংলাদেশ ও ভুটানের জনমানুষরা কোন না কোন সময় অসম রাজ্যে প্রবেশ করতেই পারে। যারা দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে অসমের পঞ্চায়েত কিংবা রাজ্য সরকারের নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে, বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ বা অন্যকোন প্রক্রিয়ায় অসম সভ্যতায় একাকার হয়েছে।

‘অবৈধ অভিবাসী খেদাও’ আন্দোলন চাঙ্গা করতে ১৯৭৯ সালে অসমে গঠিত হয়, ‘অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়ন’ নামের একটি সংগঠন। যার নেতৃত্ব দেন প্রফুল্ল কুমার মহন্ত। এই সংগঠনই ১৯৮০ সালের ১৮ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কাছেই অবৈধ অভিবাসী বিষয়ক স্মারকলিপি প্রদান করেন। ২ ফেব্রুয়ারি ইন্দিরা গান্ধীর সাথে আন্দোলনকারী নেতা-কর্মীরা সাক্ষাৎ করেন এবং স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন। কিন্তু কোন ফলাফল শূন্য। আন্দোলন শুরু হয় মঞ্চে, ময়দানে এবং রাজপথে।

১৯৭৯ থেকে ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত চলে আন্দোলন। এসময়ের মধ্যেই সরকারের পুলিশ-মিলিটারির গুলিতে প্রাণ হারায় ৮৫৫ জন। এক পর্যায় ১৯৮৫ সালের পুনরায় আগস্ট মধ্য রাতে তৎকালীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে অবৈধ অভিবাসীর খেদাও আন্দোলনের নেতা কর্মীদের একটি চুক্তি হয়। ওই চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘১৯৭১ এর ২৪ মার্চ মধ্যরাত পর্যন্ত অসমে যারা প্রবেশ করেছে কিংবা বসবাস করছে, তারাই ভারতের অসম রাজ্যের নাগরিকত্ব পাবে।’

এই চুক্তির পরের বছর প্রফুল্ল কুমার মহন্ত (এজিপি) অসম গণপরিষদ নামে দল গঠন করে রাজ্য সরকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিজয়ী হন। এই সংগঠনটি ১৯৯০ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এনআরসি’র একটি মডেল তুলে দেয়।
আন্দোলনকারী সংগঠনটি ১৯৯৯ সালে ১৭ নভেম্বরে দিল্লিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সাথে ত্রিপক্ষীয় এক বৈঠকে মিলিত হয়। ওই সালেই এনআরসি নবায়ন খাতে কেন্দ্রীয় সরকার ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেন। ২০০৫ সালে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার আমলে অসম এনআরসি ডিরেক্টরেট অধিকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় দীপক শর্মাকে।

২০০৮ সালের ৮ আগস্ট তৎকালীন রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের এনআরসি বিষয়ক একটি চিঠি পাঠান প্রধানমন্ত্রীকে। ২০০৯ সালে নাগরিকত্ব বিধি ২০০৩ এ ৪(ক) দফা সংযোজন করে এনআরসি ১৯৫১ এবং ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের ভোটার তালিকার ভিত্তিতে জাতীয় নাগরিকপুঞ্জি নবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এনআরসি তালিকা শুরুর প্রাক্কালে অর্থাৎ ২০০৯ সালের ২৫ মে, ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশীদের নাম রয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ আকারে এক আবেদন জানায় তৎকালীন পাবলিক ওয়ার্কস (এপিডব্লিউ) নামের একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। ৭ জুলাই এই সংগঠনের আবেদনটি সুপ্রিমকোর্টে মামলা হিসেবে রেজিস্টারভুক্ত হয়। ।

২০১০ সালের ২২ এপ্রিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব জিকে পিল্লাই, রাজ্য সরকার ও অল অসম স্টুডেন্ট ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সাথে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে মিলিত হয়। ওই বৈঠকেই এনআরসি বিষয়ক দায়িত্ব অর্পণ করা রেজিস্টার জেনারেল অব ইন্ডিয়াকে। ওই বছরই ১ জুন বরপেটা ও ছয়গাঁওয়ে শুরু হয় এনআরসির পাইলট প্রকল্পের কাজ। প্রকল্প চলাকালীন এনআরসি নবায়ন কাজে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সেখানে ব্যাপক দাঙ্গা হাঙ্গামা হয়। যা বর্তমানে বরপেটাকাণ্ড বলে ভারতে ব্যাপক জনশ্রুতি।

২০১০ সালের শেষের দিকে তদানিন্তন মন্ত্রী ডা. ভুমিধর বর্মণের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু ওই সময় সুপ্রিম কোর্ট জানান যে, এপিডব্লিউ সংগঠনটি সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা করেছে, ওই মামলার রায় দেওয়া হবে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। কোর্টের এই ঘোষণার পর, এপিডব্লিউ পুনরায় সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে এই বলে যে, ‘রায় নয়, সরাসরি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এনআরসি নবায়ন করতে।’

১৯৫১ সালকে ভিত্তিবর্ষ সংক্রান্ত এক তথ্যের ভিত্তিতে ২০১২ সালের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন অসম সম্মিলিত মহাসংঘ নামের আরেকটি সংগঠন। ওই সালের ১৬ আগস্ট ক্যাবিনেট উপ-সমিতি প্রণীত একটি প্রতিবেদন রাজ্য ক্যাবিনেটে গৃহীত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অসম রাজ্যের গৃহ ও রাজনৈতিক দপ্তর ২৯ আগস্ট এনআরসি নবায়নের মডালিটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠান। ২০১৩ সালের ২ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এপিডব্লিউ সকল তথ্যাদি উচ্চ আদালতে জমা দেন। ৮ মে সুপ্রিম কোর্টে এনআরসি মডালিটি দাখিল করে সরকার। ওই সময় সেপ্টেম্বরে এনআরসি’র রাজ্য সমন্বয়ক (স্টেট কো-অর্ডিনেটর) পদে আইএএস আধিকারি প্রতীক হাজলাকে নিয়োজিত করা হয়। ১৮ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশ দেন এনআরসি মডালিটি চূড়ান্ত করতে। ২৩ আগস্ট ভারত সরকারের উপসচিবের চিঠি আদালতে দাখিল করেন কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল রাজেশ খান্না। ওই বছর ১৮ অক্টোবর এনআরসি নবায়নের প্রক্রিয়া খাতে অসমকে ৪৮৯ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্রীয় সরকার।

২০১৪ সালের মার্চ থেকে শুরু হয় এনআরসি নবায়নের কাজ। ৪ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে এনআরসি মামলার প্রধান বিচারক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর, আদালত ১৮ মাসের মধ্যে এনআরসি নবায়ন সংক্রান্ত সংশোধিত সূচি দাখিলের নির্দেশ দেন এবং ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারির মধ্যে নবায়িত এনআরসি তৈরি করার সময়সীমা বেঁধে দেন।

২০১৫ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অসমে স্থাপন করা হয় ১০০টি এনআরসি সেবা কেন্দ্র, ২৭ মার্চ রাজ্য জুড়ে ২ হাজার ৫শ টি এনএসকে এবং ওই সময়ের এপ্রিল মাসে লিগ্যাসি ডাটা ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিয়ে আসা হয়। আদালত ২৩ মে বাংলাদেশ সীমান্ত সম্পর্কে কোর্ট কমিশনারের নিয়োগ করেন। ২০১৫ সালের জুন থেকে শুরু হয় এনআরসি সম্পর্কিত ফরম বিতরণ। সেই বছরের ৩১ আগস্ট ছিল ফরম জমা দানের শেষ দিন। নথিপত্র যাচাই প্রক্রিয়া শুরু হয় ১ সেপ্টেম্বর।

এনআরসি প্রস্তুতের সময়সীমা বাড়াতে আদালতে আর্জি জানায় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কাজ হয়নি। ২০১৬ সালের এনএসকে গুলোতে বিশেষ পুন:নিরীক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৭ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি এনআরসি নবায়ন প্রক্রিয়ায় পঞ্চায়েত নথি অবৈধ বলে রায় দেন গুয়াহাটি উচ্চ আদালত। এই রায়ের পর, ‘আমসু জমিয়তে উলেমা-ই হিন্দ’ এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করেন। সুপ্রিম কোর্ট পঞ্চায়েত নথি গ্রহণের পক্ষে রায় দেন।

অসমের প্রকাশিত নাগরিকপুঞ্জিতে নাম আসেনি ৪০ লাখ মানুষের। এই ৪০ লাখ জন মানুষ কারা? ১৯৫১ সালের নাগরিকপুঞ্জিতে নাম রয়েছে, ১৯৬৬ সালে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিলো, ১৯৭১ সালের পূর্বের জমির দলিল-পত্র, শরণার্থীর সার্টিফিকেট এবং মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট ধারীদের নথিপত্র অবমূল্যায়ন, আদালতের নির্দেশ মান্য করতে গিয়ে তাড়াহুড়ো, মাঠকর্মীদের দায়সারা কর্মকাণ্ডের ফলে বিপুল সংখ্যক জনমানুষ এনআরসি তালিকা থেকে বাদ পড়েছে বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে।

নিম্ন অসমের বঙাইগাঁও, চিড়াং, বাকসা, ওদাসগুড়ি জেলাসহ অসমের বিভিন্ন জেলায় একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। ভারতের একটি দৈনিক পত্রিকায় ২৫ আগস্ট প্রকাশিত একটি সংবাদ শিরোনাম ছিল, “১৯৫১ সালের জমির দলিলেও কাজে আসছে না এনআরসিতে।” সংবাদ বডির একাংশে স্পষ্ট করা হয়েছে রূপেন্দ্র দাশ গুপ্তের পূর্ব পুরুষরা গত ১শ বছর যাবত বসবাস করছে অসমে। ১৯১১ সালে অসমের তৎকালীন রাজধানী শৈলশহর শিলংয়ের লাবানিতে জমি কিনেন রূপেন্দ্র দাশ গুপ্তের ঠাকুর দা। অসমের বন বিভাগের কর্মচারী প্রয়াত রমেশ চন্দ্র দাশ গুপ্ত। যিনি শিলংয়ের ফরেস্ট রেঞ্জার হিসেবে অবসর নেন। রমেশ বাবুর ছেলে রুপেন্দ্রনাথের জন্ম এই বাড়িতেই। তিনি বর্তমানে শিলচরের মালু গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। ২০১৫ সালে যখন এনআরসি নিয়ে কাজ শুরু হয়, তখন থেকেই রূপেন্দ্র বাবু জমির কাগজপত্র খুঁজতে একবার শিলং আবার ডিসপুরে যাওয়া-আসা করছে। কোথাও পায়নি তার দলিলপত্র। ২৫ আগস্ট তিনি সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, ‘আমার পরিবারের কেউ আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ বা পূর্ব পাকিস্তান দেখেনি। আমার বাবা বেঁচে থাকতেও কোন দিনই যাননি পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে। অথচ এনআরসিতে নাম না উঠায় আমার কেমন যেন নিজেকে বাংলাদেশি -বাংলাদেশি বলে মনে হচ্ছে। এটাতো হওয়ার কথা ছিল না! অবিভক্ত আসামের বাসিন্দা আমরা। তাহলে কেন আমাদের এই দুর্ভোগ। এর দায়তো সরকারের উপরই বর্তায়, কেননা অতীতের ভোটার তালিকা সংরক্ষণ করা দরকার ছিল সরকারের। অসমের খসড়া নাগরিকপুঞ্জি প্রকাশ হওয়ার পর অসমের বিভিন্ন স্থানে উগ্রপন্থি একটি ছাত্র সংগঠন অবৈধ-বৈধ নাগরিকদের চেক করছে। এই সংগঠনের সদস্যদের এই দায়িত্ব কে দিয়েছে, কারা এই সংগঠনটিকে মদদ দিচ্ছে? রাষ্ট্রের সমস্যা রাষ্ট্রীয়ভাবেই সমাধান হওয়ার কথা। সাধারণের বিপক্ষে সাধারণরা কেন? লক্ষণতো শুভ নয়!

১৯৫৫ সালে ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের ১৭ ধারায় বলা আছে প্রকৃত নাগরিকদের হেনস্তা করা যাবে না। যদি কেউ হেনস্তা হয় তবে হেনস্তাকারীর সাজা হবে। কাউকে অবৈধ নাগরিক ঘোষণা করতে হলে উপযুক্ত নথিপত্র দায়ের করতে হবে।

বহুদিনের পুরোনো সমস্যা, সময়ের ব্যবধানে রাজনৈতিক ঘোলাপানি, সাধারণ জনমানুষের একাংশের দাবী-দাওয়া, পরস্পর বিরোধী মামলা মোকদ্দমা, আইন-আদালতের নির্দেশ সবকিছু মিলিয়েই অসমের নাগরিকপুঞ্জি বিষয়টি এখন ‘লেজে গোবরে অবস্থা’। অসমের নাগরিকপুঞ্জি নবায়ন ঘিরে যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা অত্যন্ত জটিল। এক্ষেত্রে অনেকেই মনে করছেন ব্রিটিশ কর্তৃক সৃষ্ট জটিলতা এত সহজেই সমাধান সম্ভব নয়।

তবে বিশ্লেষক ও গবেষকদের ধারণা, ভারতবর্ষের গোটা বিবেক কি এখনও ব্রিটিশের ধুম্রজালে আবদ্ধ! অসমের নাগরিকপুঞ্জি নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ নয়, বৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ ভারত, মহামানবতার স্বার্থেই অতীত বিশ্লেষণ, বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলা ও মানবতা রক্ষায় সরকার ও রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে ভারতের অসম রাজ্যের নাগরিকপুঞ্জির চির নবায়ন করতে পারে। অন্যথায় স্বপ্রণোদিত উচ্চ আদালতের নির্দেশই অসমের বর্তমান অস্থিরতার অবসান ঘটাতে পারে।


মানুষ ও মানবতা নিয়ে রাজনীতি নয়, মানুষ-মানবতার জন্যই রাজা-রাজনীতি, নীতি-আদর্শ এবং আইন আদালত।

রহিম আব্দুর রহিম, শিক্ষক, কলামিস্ট, নাট্যকার ও শিশু সাহিত্যিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ