আজ বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

ভারতের গণতন্ত্র

মাসকাওয়াথ আহসান  

ভারতের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিলো কংগ্রেস নামের রাজনৈতিক দলটি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন বিজেপির অনেকে ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার বিপক্ষে কাজ করেছিলো। আবার ভারতের জাতির জনক গান্ধীজীর হত্যাকারী নাথুরাম গডসে'কে প্রকাশ্যে রীতিমত দেবতার মতো পূজা করে বিজেপির অনেকেই। ইতিহাস আলোচনায় এটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু গণতন্ত্র চর্চার ক্ষেত্রে এই ইতিহাস বিজেপির জন্য কোন বাধা হয়নি। ভারতের স্বাধীনতা ও জাতির জনক প্রশ্নে বিজেপির এ আচরণ সমালোচনার যোগ্য; কিন্তু বিজেপি'র গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্নে তা প্রাসঙ্গিক নয়।

গণতন্ত্র মানেই বহু-মত; বহু-পথ। ইতিহাসকে অজুহাত করে কংগ্রেসও বিজেপির রাজনীতি চর্চার পথে বাধা হয়নি। ভারত রাষ্ট্রটিকে কে শাসন করবে; সে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিবেচনার দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া হয়েছে জনগণের ওপর। দেশের ভালোমন্দ বোঝার দায়িত্ব সাধারণ মানুষের হাতে ছেড়ে দেয়ার এই চর্চাকেই গণতন্ত্র বলা হয়।

কংগ্রেস দলটি ভারতের স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির কৃতিত্ব নিয়ে কখনো নিজেকে ভারতের মালিক দাবি করেনি। জনগণের রাষ্ট্র ভারত তাই বিকশিত হয়েছে পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসেবে। কংগ্রেস যেহেতু উদারপন্থী দল তাই সে ঔদার্য চর্চার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সার্বভৌম নির্বাচন কমিশন গড়তে চেষ্টা করেছে। কখনো এমন করে ভাবেনি যে, পুরো ভারত শুধু কংগ্রেস-কংগ্রেস বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলবে। কংগ্রেস স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বলেনা যে, শুধু কংগ্রেসিরাই ভারতে থাকবে; বাকিরা "বাপের দেশ বৃটেনে চইলা যাও"। কংগ্রেসের উদারপন্থা কখনো গিয়ে হিন্দুত্ববাদের শোকরানা মেহেফিলে অংশ নেয়নি। উদারবাদের গাছেরটা খেয়ে কট্টরপন্থার তলেরটা তারা কুড়াতে চেষ্টা করেনি।

কংগ্রেস ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের আস্থা দিতে সক্ষম হয়েছে। ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা বেড়েছে। সুতরাং কংগ্রেসের অসাম্প্রদায়িক আদর্শ কোন লিপ সার্ভিস নয়। এ কারণে ভোটের প্রতিযোগিতায় কংগ্রেস অনেকবারই হেরে গেছে। কংগ্রেসের মনমোহন সিং-এর মতো আগামীমনষ্ক-স্থিতধি-মানবিক প্রধানমন্ত্রীকে ফেলে ভারতের সাধারণ মানুষ বিজেপির নরেন্দ্র মোদিকে বেছে নিয়েছে। কংগ্রেস হাসিমুখে মেনে নিয়েছে জনতার রায়। কারণ সেটাই যে গণতন্ত্রের স্পিরিট।

ভারতের বিচার বিভাগ সার্বভৌমত্ব নিয়ে বেড়ে উঠেছে; ফলে গণতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় সেটি সহগামী হয়েছে। ভারতের বিচার বিভাগ এই রক্ষণশীল আমলে উদারপন্থী বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছে। কিন্তু ভারতের প্রধান বিচারপতিকে উড়োজাহাজে তুলে দিয়ে কট্টরপন্থী মোদির পেশীরা বলেনি, তরে যেন আর এ তল্লাটে না দেখি।

কংগ্রেস নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন; কিন্তু তাঁর ছেলে রাজীব গান্ধীকে প্রতিশোধ স্পৃহা নিয়ে বনবন করে ঘুরতে দেখা যায়নি। এমনকি রাজীব গান্ধী যার হাতে নিহত হয়েছেন; সেই খুনির মৃত্যু দেখে রাজীব গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধীর মনে হয়েছে, এই লোকটির সন্তানদেরও আজ নিশ্চয়ই ঠিক ততোটা দুঃখ যতোটা দুঃখ বাবার মৃত্যুতে রাহুল পেয়েছিলো। এই হলো মানবিক উদারপন্থী কংগ্রেস; গান্ধীজীর অহিংস আদর্শের কংগ্রেস।

বিপুল জনসংখ্যার বিশাল আয়তনের ভারতে অনেক সমস্যা রয়েছে; কিন্তু গণতন্ত্র নামের প্রতিষ্ঠানটি গর্বের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ভারতের নির্বাচন কমিশন এই নিশ্চয়তা দিতে পারে; জনগণের ভোট দেবার অধিকার যে কোন মূল্যে রক্ষা করা হবে। জনগণ এই ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার উপভোগ করতে পারায়; ভারতে গণতন্ত্র শব্দটি অর্থবহ হয়েছে; তা সংবিধানের শুধু পটে লেখা "অধিকার" হয়ে থাকেনি।

ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে বিজেপি সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, ইতিহাস বিকৃতি, সংখ্যালঘু নিপীড়নসহ যেসব অগণতান্ত্রিক আচরণ করছে; জনগণ গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমেই এর উত্তর দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বরাবর ক্ষমতাসীন দলগুলোর ভুলগুলোর জবাব ভারতের মানুষ ভোটের মাধ্যমেই দিয়েছে। এরকম দেশে লিফলেট ছেপে বা গলা চেপে ধরে দেশপ্রেম শেখাতে হয়না। জনগণ শাসক বা ব্যবস্থাপক নির্বাচনের ক্ষমতাটি পেয়ে যাওয়ায় নিজেদেরকে অনায়াসে দেশের মালিক ভাবতে পারে। সুতরাং সে দেশকে ভালবাসতে তারা বাধ্য।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ