আজ শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪

Advertise

জেসিন্ডা আর্ডেন: সাম্প্রদায়িক পৃথিবীতে সম্প্রীতির প্রতীক

আলমগীর শাহরিয়ার  

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে হামলায় ইতোমধ্যে নিহতদের কিছু লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের ধর্মীয় রীতি মেনে স্থানীয় কবরস্থানে সমাহিত করার জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কবরস্থানে শোকাহত স্বজনদের ভিড়। স্থানীয় অনেকেই ফুল নিয়ে এসেছেন সমাধি প্রাঙ্গণে। এই ভিড়ের মধ্যে আছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রীও। জেসিন্ডা আর্ডেন।

গোরস্থানে স্বজন হারানো এক শোকাতুর নারীকে গভীর মমতায় জড়িয়ে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। কোন ভণিতা নেই। আমাদের রাজনীতিবিদদের মত কপটতার কোন বালাই নেই। দৃশ্যটা দেখলেই বুঝা যায় এ আলিঙ্গনে আছে গভীর সমবেদনা, আন্তরিকতা, মায়া। রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তাঁর সকল নাগরিকদের পূর্ণ সুরক্ষা দিতে না পারার জন্য অনুতাপ, দুঃখবোধ।

ঘটনার দিন ছিল শুক্রবার। ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষের কাছে একটি পবিত্র প্রার্থনার দিন। অন্যান্য দিনের মতই সহজ সরল বিশ্বাসী মানুষেরা জুম্মার নামাজ আদায় করতে গেছেন। এদের অধিকাংশই পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে অভিবাসী হিসেবে নিউজিল্যান্ডে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্বে বিশ্বাসী, ইসলামোফোবিয়ায় আক্রান্ত এক অস্ট্রেলীয় বংশোদ্ভূত যুবক এই সরল বিশ্বাসী মানুষদের প্রার্থনার সময় ঠাণ্ডামাথায় গাড়িতে থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র নিয়ে নেমে মসজিদে ঢুকে ৫০জন মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার ভিডিও দৃশ্য ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেয়।

ভিডিও গেমের মত দেখতে নজিরবিহীন বর্বরতার এই দৃশ্য দেখে হতবাক গোটা পৃথিবী। এমন এক বিভীষিকাময় সন্ত্রাসাচ্ছন্ন সময়কে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তাঁর প্রেস ব্রিফিংয়ে দেশটির অন্ধকারতম দিন আখ্যায়িত করে---এরকম কোন নৃশংস খুনিদের তাঁর দেশে ঠাই নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি বলেন, মুসলিম বলে যাদের হত্যা করা হয়েছে তারা অন্য কেউ নয়, আমাদের। তারা বসবাসের জন্য নিউজিল্যান্ডকে বেছে নিয়েছেন কারণ নিউজিল্যান্ড নিরাপদ এবং শান্তিপ্রিয় দেশ। এখানে ঘৃণা বা বর্ণবাদের কোন স্থান নেই। কেননা আমরা বহুত্ববাদ, পরস্পরের প্রতি দয়া ও সহানুভূতিতে আস্থা রাখি। যারা এসব মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এবং যাদের আশ্রয় দরকার তাদের আমরা স্থান দিই। খুন করে আমাদের এই মূল্যবোধগুলোর নড়চড় ঘটানো যাবে না।

খুনিদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, হত্যার লীলাভূমি হিসেবে আমাদের দেশকে বাছাই করতে পারো কিন্তু আমরা তোমাদের পরিষ্কারভাবে প্রত্যাখ্যান করি, নিন্দা করি।

শুধু তাই না, মুসলমানদের বিশ্বাসের প্রতি সহানুভূতি ও শ্রদ্ধাশীল হয়ে সেদিন নিউজিল্যান্ড পার্লামেন্টে অধিবেশন শুরু হয় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। সে এক পবিত্র সুন্দর সম্প্রীতিপূর্ণ দৃশ্য। নৃশংস এ হামলার পর গভীরভাবে শোকাহত প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডেনের মাথায় শুধু হিজাব পরেননি, মুসলিম কম্যুনিটির উদ্দেশ্যে বারবার সালাম দিয়ে কথা বলে তাদের সঙ্গে সর্বতভাবে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।

তাঁর এই সহানুভূতিশীল সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়া দেখে অনেককে সম্প্রদায়গত বিজয়োচ্ছ্বাস করতে দেখা গেছে। এর মানে কি নিউজিল্যান্ডের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন সকলে ইসলাম ধর্ম কবুল করে মুসলমান হয়ে গেলেন?---ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই তা না।

অন্য ধর্ম, মত, পথ ও বিশ্বাসী মানুষের প্রতি তাদের গভীর শ্রদ্ধাবোধ এতে ফুটে ওঠেছে। এটাই আধুনিক সভ্যতার মানবিক মন্ত্র, উদার শিক্ষা। পরের ধর্মবিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হও। সহিষ্ণু হও। মুসলমান, ইহুদি, ক্রিস্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ---সকলে মিলেই একটি সমাজ, দেশ সর্বাঙ্গীণ সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ হয়। পারস্পরিক ঘৃণা বা বিভক্তিতে নয়।

এখন একবার ভেবে দেখুন (আল্লাহ না করুক) বাংলাদেশে এরকম একটা ক্যাটাস্ট্রফি হবার পর যদি আমাদের সংসদে শোকাহতদের প্রতি সমব্যথী হয়ে গীতা, বাইবেল কিংবা ত্বোরা পাঠ করতেন কেউ---প্রতিক্রিয়াশীলদের প্রতিক্রিয়া কী হত?

যা হোক, ভার্চুয়াল সম্প্রসারণশীল দুনিয়ায় নিউজিল্যান্ডের ঘটনা আমাদের অনেক শিক্ষাই দিয়ে গেল। বিশেষ করে দেশটির সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া মাত্র ৩৮ বছর বয়সে জেসিন্ডা আর্ডেনের মানবিক উদার রাষ্ট্রনায়কসুলভ নেতৃত্ব তাকে---বিশ্বে মানবতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধি নয়, মানুষের প্রতি মানুষের এই ভালোবাসা সার্বজনীন হোক। শিয়রে, সংকটে, সন্নিকটে যেন সর্বদা আমরা মানুষকেই চিনি। মানুষ মানুষকে আলিঙ্গন করুক। কোন বিভেদ বা ঘৃণাকে নয়।

আমাদের বিদ্রোহী কবি, মানবতাবাদী কবি নজরুল তাঁর ‘কাণ্ডারি’ কবিতায় বলছিলেন,
‘হিন্দু না ওরা মুসলিম? ওই জিজ্ঞাসে কোন জন?
কাণ্ডারি! বল, ডুবিছে মানুষ, সন্তান মোর মার।’

আলমগীর শাহরিয়ার, কবি ও প্রাবন্ধিক। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬২ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩০ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৫ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ