প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
রণেশ মৈত্র | ০৮ জুন, ২০১৯
সুদীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের বিশাল প্রতিবেশী দেশ ভারতের লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো। শুধু এশিয়ার নয়, সমগ্র পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র বলে বিবেচিত ভারত। তাই সমগ্র পৃথিবীর দৃষ্টি স্বভাবত:ই নিবন্ধ-ছিল ভারতের লোকসভা নির্বাচনের প্রতি তার ফলাফলের প্রতি। যেমন গোটা বিশ্ব ঐ নির্বাচনের প্রতি তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রেখেছিল প্রায় তিনটি মাস ধরে তেমনই আবার তার ফলাফল দেখে বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক শক্তির মনে নির্বাচনের ফল চূড়ান্তভাবে প্রকাশের পর থেকেই তোলা, উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠারও সৃষ্টি হয়েছে।
সত্য বটে নরেন্দ্র মোদি অমিত শাহ্ জুটি এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে শুধুমাত্র ঝলসেই ওঠেন নি তাঁরা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়েও দিয়েছেন। তাঁদের দল বি.জে.পি. ছিল কার্যত: একটি আঞ্চলিক দল তাও আবার কেন্দ্রীভূত ছিল প্রধানত: দক্ষিণ ভারতের গুজরাট নামক রাজ্যে। যে গুজরাট হলো ভারতবর্ষের তথা বিশ্বের সর্বজনশ্রদ্ধেয় ধর্ম নিরপেক্ষতার, বর্ণবাদিতার বিরোধী এবং ভারতের দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামী মোহন লাল করম চাঁদ গান্ধীর পবিত্র জন্মস্থান।
বিশ্ববাসীর অজানা নয় যে, মহাত্মা গান্ধী ছিল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস নামক ভারতের সর্বাধিক জনপ্রিয় দলের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সমগ্র বিশ্বকে সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদিতামুক্ত করার সংগ্রামের তিনি ছিলেন অকুতোভয় নেতা। ভারতের কোটি কোটি হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টান নারী-পুরুষের সর্বাধিক জনপ্রিয় নেতা ছিলেন তাঁদের নয়নের মনি।
সেই গুজরাটে মহাত্মা গান্ধী খ্যাত সেই রাজ্যে বিপুল ভোটাধিক্য বিজয়ী হলেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ্ নামক মুসলিম বিদ্বেষী, বৌদ্ধ বিদ্বেষী, খৃষ্টান বিদ্বেষী-হিন্দু জাতীয়তাবাদ নামক একটি সাম্প্রদায়িক ও বিভেদকামী বা বিভেদ সৃষ্টিকারী দল ভারতীয় জনতা-পার্টি বি.জে.পি। দলটি শুধু গুজরাট নয় সমগ্র ভারতবর্ষের বিপুল সংখ্যক মানুষের অবিশ্বাস্য সমর্থন নিয়ে।
বি.জে.পি. নেতা নরেন্দ্র মোদি অমিত শাহের এই বিজয়কে তাঁদের বা তাঁদের দলের বিজয় বলে মনে করলে রাজনৈতিক বা আদর্শিক বিবেচনায় মারাত্মক ভুল হবে। আমলে বিজয় অর্জন করলো সাম্প্রদায়িকতা যা আদর্শিকভাবেই ঘৃণিত পরিত্যাজ্য ও গণতন্ত্র পরিপন্থী। গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যবাহী সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দেশটিতে উগ্র সাম্প্রদায়িক ভারতবাসীর জন্য অকল্যাণকর দেশটির সুবিশাল ঐতিহ্য বিনাশীও বটে।
আরও আশ্চর্যের বিষয় অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির, সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী রাজনীতির যে বিপুল ঐতিহ্য ধারণ করে, সকল প্রতিকুল আদর্শের নানা আঘাতকে প্রতিহত করে পশ্চিম বাংলা একটি বিশেষ মর্যাদার আসনে দীর্ঘকাল একটি বিশেষ মর্যাদার আসনে দীর্ঘকাল যাবত অধিষ্ঠিত ছিল সেখানেও বিজেপি দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস যদি পরাজিতও হতো তাতে শঙ্কিত বোধ করার কোন কারণ নেই। উদ্বেগের কারণ ভয়ঙ্করভাবে সৃষ্টি হলো বামপন্থী দলগুলির শোচনীয় পরাজয়ে গান্ধীজীর ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেসের মারাত্মক ব্যর্থতায়। বামশক্তি ও কংগ্রেস এবং অন্যান্য অসাম্প্রদায়িক আকস্মিক দল যদি দৃশ্যমান বিজয় পশ্চিম বাংলা উত্তর প্রদেশ গুজরাট কেরালা ও ত্রিপুরায় অর্জন করতে যদি সক্ষম হতো সেক্ষেত্রে তারা ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের মত পুরোপুরি শক্তি যদি অর্জন করতে নাও পারত, আমি অন্তত: (এবং সম্ভবত: আরও অনেকেই) ততটা হতাশ ও বিব্রত বোধ করতাম না। কারণ তার ফলে একদিকে লোকসভায় বি.জে.পি. ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী শক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতো সমগ্র ভারতের মানুষ রাজনীতির বলয়ে একটি আশাপ্রদ রাজনৈতিক বার্তা পেয়ে যেতে পারতেন। ফলে আরও অনেক রাজ্যে রাজনীতির প্রগতিপন্থী ধারাটি নতুন মাত্রায় বিকশিত হওয়ার মত অনুকূল পরিবেশ রচিত হতো। এবং সেক্ষেত্রে আগামী পাঁচ অথবা দশ বছর পর হয়তো গান্ধী নেহেরু-মওলানা আবুল কালাম আজাদ, কমরেড এস.এ. ডাঙ্গে, কমরেড মুজাফফর আহমেদের আদর্শিক রাজনীতি নতুন আলোকে ভারতব্যাপী উজ্জীবিত হতে পারত। যার প্রভাবে অন্তত: ভারতের নিকট প্রতিবেশী দেশগুলিতে ইতিবাচক রাজনৈতিক প্রেরণা সঞ্চার করতে সক্ষম হতো। আমরা কোটি কোটি মানুষ উজ্জ্বল একটি ঈশারা দেখার বা গড়ার সুযোগ পেতো। পেতেন প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ।
বি.জে.পি. (ভারতীয় জনতা পাটি) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা মোহন চাঁদ করম দাস গান্ধীকে খুন করেছিলেন তাদের সদস্য নাথুরাম গড়সেকে দিয়ে। সমগ্র ভারত, সমগ্র পৃথিবী এই হত্যালীলার খবর পেয়ে শোকাতুর হয়ে শোকাতুর হয়ে পড়লেও বি.জে.পি. নেতারা হয়েছিলেন তৃপ্ত। আজও তার নাথুরাম গডসের কৃত অপরাধকে নিন্দা করে না বরং তাকে (নাথুরাম গডসে নামক ঐ খুনিকে) নানাভাবে মহিমান্বিতই করে। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৪৮ সালে। যখন মহাত্মা গান্ধী সদ্য ফিরেছেন নোয়াখালীর ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে অনশন আন্দোলন ও তার অবসান সূচনা করে। ঐ দাঙ্গা ঠেকনো বি.জে.পির মন:পূত না হওয়ায় এবং আজীবন বিশ্বব্যাপী সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলন করায় নাখোস।
বি.জে.পি. গডসেকে দিয়েই তার প্রতিশোধ নিয়েছিল। এবার অবশ্য শপথ গ্রহণের দিন অর্থাৎ ৩০ মে মোদি অমিত গিয়ে গান্ধীর সমাধি স্থলে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন কিন্তু কদাপি উচ্চারণ করেন না একটি শব্দও খুনি নাথুরাম গডসের বিরুদ্ধে।
জিন্নাহ যেমন মুসলিম লীগের নেতা হিসাবে পাকিস্তান আন্দোলন করতে গিয়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে নয় তেমনি বিজেপি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ বিরোধিতা না করে করেছে মুসলিমদের বিরোধিতা। একাজে লিপ্ত ছিলেন নরেন্দ্র মোদির পূর্বসূরিরা তাঁদের তদানীন্তন নেতৃত্ব।
প্রিয় পাঠক-পাঠিকারা নিশ্চয়ই স্মরণে রেখেছেন প্রথমবার ২০১৪ সালে দিল্লী দখল করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে পর পর তিনবার তিন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ঐ সময় ২০০২ সালে সেখানে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রায় ২,০০০ মুসলিম নিহত হন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর পুলিশ ও অন্যান্য সরকারী বাহিনী বা তাঁর দলকে ঐ দাঙ্গা প্রতিরোধে এগিয়ে যেতে না বলে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দিলো তারা ঐ দাঙ্গার পক্ষে।
এহেন ঐতিহ্য নিয়ে দিল্লীর মসনদে ২০১৪ তে প্রথম দফা বসে পাঁচ বছর ধরে একদিকে মুসলিম-খৃষ্টানদের জোর করে হিন্দু’তে ধর্মান্তরিতকরণ, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে চলে গিয়ে যারা ভারতে বসবাস করছেন তাঁদের মধ্যে হিন্দুদেরকেই শুধু সেখানকার নাগরিকত্ব প্রদানের বারংবার ঘোষণা, গোহত্যা ও গোমাংস ভক্ষণের উগ্র বিরোধিতা এবং গোমাংস বাড়ীতে রাখার মিথ্যা অভিযোগে একটি মুসলিম পরিবারের প্রধানকে হত্যা করে পরিবারটিকে পথে বসানো নোট বাতিলের মাধ্যমে গরীব হিন্দু-মুসলিম গ্রামবাসী ও মধ্যবিত্তদের সর্বনাশ সাধন গ্রামীণ বেকারত্ব বৃদ্ধি প্রভৃতি উপহার দেওয়ার ইতিহাস কি ভারতীয়রা ভুলে গেলেন?
ক্ষমতায় যাওয়ার আগে (দুই দশকের ও বেশী আগে) বিজেপি বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার যে কদর্য ইতিহাস ও “রাম মন্দির” নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে নতুন করে সমগ্র ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক উত্থান ঘটিয়েছিল তা ভারতের অসাম্প্রদায়িক গৌরবময় ঐতিহ্যের স্থলে এক কলঙ্কময় ইতিহাস রচনা করেছিল। ঐ ঘটনায় অসংখ্য মন্দির, মসজিদ, গির্জা ধ্বংস হয়েছিল, হয়েছিলেন অগণিত নিরপরাধ হিন্দু-মুসলমান এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞের অসহায় শিকারে পরিণত।
বিজেপি’র এ ইতিহাস কার্যত: তাদের গণতন্ত্র বিরোধী চরিত্রকেই তুলে ধরে, আইনের শাসন বেপরোয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের দুঃসহ চিত্রকেই সামনে নিয়ে আসে।
তদুপরি ২০১৪ ও ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচন দেখিয়ে দিলো ভারতের সর্বাধিক ধনাঢ্য দল হেলা বিজেপি এবং ভারতের সর্বাধিক ধনীদের নৈতিক ও বৈষয়িক আশীর্বাদ পুষ্ট দলও তারাই। ৩০ মে’র শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিমজ্জিত ও অংশ গ্রহণকারীদের দিকে তাকালে দেখা যাবে টানা গ্রুপ সহ ভারতের সকল বৃহৎ ও একচেটিয়া ধনিক গোষ্ঠীর সকল সদস্য সেখানে আমন্ত্রিত। নির্বাচনী প্রচারে অভিযানে (২০১৪ ও ২০১৯) উভয় দফাতেই হেলিকপ্টারও তিন মাস ধরে ব্যবহার সমগ্র ভারত জুড়ে প্রতিদিন একাধিক জনসভার বিশাল আয়োজন তারই সন্দেহাতীত প্রমাণ।
তারা দিব্যি ভারতের সংবিধানের দুটি প্রধান স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বিরোধী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে দিব্যি তাকে লঙ্ঘন করে চলেছে। একদিকে ঐ স্তম্ভগুলির প্রতি নৈতিক সমর্থন ঘোষণা এবং অপরদিকে কার্যত: তার বিরোধী কার্যকলাপ নিরন্তর চালিয়ে যাচ্ছে।
এ সব কার্যকলাপের দ্বারা ভারতের জনগণের সামনে যে সাম্প্রদায়িক আবহ তৈরি হচ্ছে, সমাজতন্ত্র বিরোধী অভিযান চালিয়ে নীরবে ধানিক ঘোষণা চালানো হচ্ছে তার ফলে সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে বামশক্তি উল্লেখযোগ্য বিজয় অর্জন করবে এমন প্রত্যাশা কি বাস্তবে সঠিক?
যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পঞ্চাশ বছরেও অধিক কাল ধরে ভারত শাসন করেছে যে দলটি সে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতৃত্বে বসিয়েছে মোহন দাস করম চাঁদ গান্ধী, পণ্ডিত জওয়াহের লাল নেহরু, মওলানা আবুল কালাম আজাদ সহ অসাম্প্রদায়িক জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী নেতাকে, সেই কংগ্রেস আজও কতটাই পিছিয়ে পড়েছে। আমার বিবেচনায় বিজেপি সৃষ্ট ঐ সাম্প্রদায়িকতা ও সমাজতন্ত্র বিরোধী আবহই তার জন্যে দায়ী।
একই ভাবে কমরেড এস.এ. ডাঙ্গে কমরেড বঙ্কিম মুখার্জি, হরকিষেণ সিং সুরজিত, কমরেড মুজাফফর আহমেদ, কমরেড জ্যোতি বসু যে বামপন্থী রাজনীতি সর্বভারতীয় নেতৃত্বে থেকে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক ভারত গড়তে কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত সমাজকে উদ্বুদ্ধ করে নানা প্রদেশে কমিউনিস্ট ও অপরাপর বামপন্থী দলের সমন্বয়ে গঠিত ফ্রন্টকে কেরালা, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরায় এবং অংশত: আরও কতিপয় রাজ্যে একক বা যৌথ শক্তিতে ক্ষমতায় এসেছিলেন তা ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে বহু দিনের জন্য এক শোষণমুক্ত গণতান্ত্রিক ও ধর্ম নিরপেক্ষ ভারতের স্বপ্ন দেখাতে সক্ষম হয়েছিল ঐ দেশের যুব ও তরুণ সমাজকে।
এর অবশ্যম্ভাবী পরিণতি বামপন্থী ও দক্ষিণ পন্থী আদর্শের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত। দক্ষিণপন্থীদের এক নীতিহীন অংশ গলাবাজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্রেফ এক বাম-বিরোধী উম্মাদনী ও আবেগ সৃষ্টি করে আজ থেকে ৮/৯ বছর আগে পশ্চিম বাংলায় ক্ষমতা দখল করে উগ্র কমিউনিস্ট বিরোধী কার্যকলাপের মাধ্যমে দক্ষিণপন্থীদের (বিজেপি ও তাদের মিত্রদেরকে) পশ্চিমবঙ্গ গ্রাস করার সুযোগ করে দিয়ে তার ফল এবারের লোকসভা নির্বাচনে পেয়ে গেলেন। তাতে তাঁর শিক্ষা হবে কিনা বলা যায় না।
অপরদিকে সর্বভারতীয় রাজনীতিতে উদার গণতান্ত্রিক দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস বেশ কিছু সংখ্যক অসাম্প্রদায়িক আঞ্চলিক দলও এবারের লোকসভা নির্বাচনে প্রচণ্ড আঘাতের সম্মুখীন হয়েছে। বামপন্থীরা তো চোখের আড়ালেই চলে গেছেন প্রায়। কিন্তু ভারতের রাজনীতিকে সাম্প্রদায়িকতার কলুষমুক্ত করে গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনে তাকে স্থিতিশীল করতে বামপন্থীদের উল্লম্ফন যত দ্রুত ঘটবে ততই তা ত্বরান্বিত হবে। ভারতের তরুণ-সমাজই হবে এবং হচ্ছে উগ্র দক্ষিণপন্থী রাজনীতির বিকাশের ফলে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত। তাই ঐ যুব ও তরুণ সমাজের জাগরণ যত ত্বরান্বিত হবে ততই মঙ্গল।
কিন্তু এই মুহূর্তে উগ্র দক্ষিণপন্থী বিজেপি আর এস এস বজরং নামক দলগুলিকে প্রতিহত করার পথ কি? এ বিষয়টি নিয়ে নিশ্চয়ই ভারতের বাম প্রগতিশীল ও উদার রাজতন্ত্রীরা পর্যালোচনা করছেন। তাঁর পর্যালোচনা এবং তারা ফলাফল কি দাঁড়াবে জানি না। তবে ভারতের রাজনীতিকে দক্ষিণপন্থার প্রভাবমুক্ত করে প্রগতির ধারায় ফিরিয়ে আনবার একক শক্তি কংগ্রেসের বা কমিউনিস্ট বা অপরাপর আঞ্চলিক দলগুলির এখন আর নেই। ভারতের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলার মত শক্তিও এ মুহূর্তে তাদের কারও নেই।
তাই ভারতকে প্রগতির ধারায় আনতে হলে, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, জাতীয় ভিত্তিতেই কমিউনিস্ট বা বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের মধ্যে সমঝোতা ও ঐক্য দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করা অপরিহার্য। অত:পর এই ঐক্যকে বৃহত্তর ঐক্যের ভিত্তি হিসেবে ধরে নিয়ে অপরাপর আঞ্চলিক দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করাও আন্তরিক প্রয়াস নিতে হবে। এই বৃহত্তর ঐক্যের আদর্শিক ভিত্তি হতে হবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও উদারনৈতিক গণতন্ত্র এবং শোষণ ও দারিদ্র এবং বেকারত্ব মুক্ত ভারত গড়ে তোলা।
তাই দ্রুত কংগ্রেস ও বামশক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়া জাতীয় ভিত্তিতে শুরু করে সহসাই তাকে সফল করে তুলতে পালে বাকী কাজগুলি সম্পন্ন করা সহজতর হবে।
মনে রাখতে হবে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে শুধু বামপন্থীরাই হারেন নি হেরেছেন কংগ্রেসও।
শেষ কথা হলো ভারতীয় গণতন্ত্র আজ বিপর্যস্ত।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য