প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আলমগীর শাহরিয়ার | ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৯
নগর পুড়লে যেমন দেবালয় এড়ায় না—তেমনি ভারত পুড়লে তার উত্তাপ না চাইলেও প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ছুঁয়ে যায়। ভারতের নয়া নাগরিকত্ব বিল নিয়ে যারা বলেন বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নাই তারা মূলত মরুভূমির বালিঝড়ে উটপাখির মতো মুখ লুকিয়ে রাখেন। মোদি-অমিত শাহ জুটি ভারতকে বর্বর মধ্যযুগের অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন।
ধর্ম পরিচয়ের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নির্ধারণ একুশ শতকের পৃথিবীতে একটি অমানবিক অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন। বিজেপির নেতারা নির্বাচন-পূর্ব সময় থেকেই বাংলাদেশ বিদ্বেষী নানা বক্তব্য (হেইট স্পিচ) দিচ্ছেন। অনেকে বলেছেন এগুলো নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার বাগাড়ম্বর। তেমন পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু বাস্তবতা বলছে এই বিদ্বেষ তাদের নানা কর্মকাণ্ডেও এখন প্রতিফলিত হচ্ছে।
ভারতের এমন অস্থিরতার কালে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সীমান্তে অনেক অনুপ্রবেশেরও খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বায়নের যুগে যেখানে মানুষ সীমান্তহীন এক বিশ্বের স্বপ্ন দেখছে সেখানে রোজই সীমান্তে নতুন নতুন এলাকায় কাঁটাতার দিয়ে বাংলাদেশকে ঘিরে রাখা, সীমান্তে নির্বিচার গুলি, আন্তর্জাতিক নদী আইন অনুসারে নদীর উজানের পানির ন্যায্য হিস্যা না দেওয়া, আচমকা পেঁয়াজ সরবরাহ বন্ধ করে ঝাঁঝ বাড়িয়ে নাগরিক অসন্তোষ বাড়ানো—কোনোমতেই বন্ধুসুলভ আচরণের নিদর্শন নয়। অথচ বাংলাদেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে ট্রানজিট, ট্রানশিপমেন্ট দিয়ে সাধ্যের সর্বোচ্চটুকু করতে কার্পণ্য করেনি।
ধর্ম পরিচয়ের নিরিখে নয়া নাগরিকত্ব বিলের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ছাত্ররা বিক্ষোভ করছে। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জেগেছে। টানা তৃতীয় দিনের মতো কলকাতার রাজপথে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা মমতা বলেছেন, "নয়া নাগরিকত্ব আইন বাস্তবায়ন হতে দেব না। সর্বধর্ম-সমন্বয় আমাদের আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে হবে না। কাউকে দেশ ছাড়তে হবে না।"
ভারত ঐতিহাসিকভাবে নানা ধর্ম মত পথ বিশ্বাসের মানুষের দেশ। বিশ্বকবি ভারতকে মহামানবের মিলনের তীর্থভূমি আখ্যায়িত করে বলেছিলেন,
"হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন—
শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন।...
এসো হে আর্য, এসো অনার্য, হিন্দু-মুসলমান।
এসো এসো আজ তুমি ইংরাজ, এসো এসো খৃস্টান।
এসো ব্রাহ্মণ, শুচি করি মন ধরো হাত সবাকার।
এসো হে পতিত, হোক অপনীত সব অপমানভার।"
ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ অনুদার শাসকগোষ্ঠী বিশ্বকবির বিশ্বজনীন চেতনা থেকে আজ অনেক দূরে। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস নীতি, শান্তির ললিত বাণী আজ পরিহাস শোনাচ্ছে। পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সেক্যুলার দর্শনের ভারত আজ বিপন্নপ্রায়।
পুঁজির আগ্রাসন এবং সংকীর্ণতার আবিলতায় নিমজ্জিত রাষ্ট্র হিসেবে ভারত আজ সংকটের নতুন আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ সংকট উত্তরণে সহসা কোনো আলো দেখা যাচ্ছে না।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য