টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
মাসকাওয়াথ আহসান | ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত ছাত্র-সংসদ নেতা নুর ও তার সতীর্থদের ওপর 'মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ' নামের একটি অনির্বাচিত সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আজও হামলা চালিয়েছে (২২ ডিসেম্বর ২০১৯)। ডাকসু ভিপি নুর ও তার সতীর্থরা ভারতের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কালে গত ১৭ ডিসেম্বর 'মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ' প্রথম হামলা চালায়।
ভারতের 'নাগরিক আইন সংশোধনের' বিরুদ্ধে ভারতের বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুললে; ইন্টারনেট যুগের সংযুক্ত বিশ্বগ্রামের নানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা এতে সমর্থন দিয়ে প্রতিবাদ মিছিলে যুক্ত হয়। সুবিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি উন্নয়নে ভূলোক-দোলক-গোলক ভেদিয়া আকাশ ফুঁড়িয়া উঠলেও যেহেতু পৃথিবী গ্রহেই রয়েছে; তাই বৈশ্বিক অভিঘাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরাও তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি নুরের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভে যোগ দিয়েছিলো; যেটিতে হামলা চালিয়েছিলো কথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
১৭ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর; কথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ থেকে থেকে তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে; ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি ও সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের ওপর।
ভারতের বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শান্তিপূর্ণভাবে ভারতের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে। ভারতের বাইরে বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই একমাত্র জায়গা যেখানে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ভারতের অভ্যন্তরের বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে মোদির পুলিশ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অনুরূপ হামলা চালিয়েছে। ভারতের বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদির দলীয় ক্যাডাররা হামলার সাহস করেনি; তারা রাজপথের বিক্ষোভে হামলায় নিয়োজিত। বাংলাদেশেই একমাত্র দেখা গেলো, কথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ইউনিফর্ম ছাড়াই মোদির পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ।
ছয় দিন ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোদির পুলিশ কথিত 'মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ' নামে ভারতের বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের প্রতিবাদকারী ডাকসু ভিপি ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর বিরতি দিয়ে দিয়ে হামলা চালিয়েছে; কিন্তু প্রশাসন ও পুলিশ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
এই প্রশাসন ও পুলিশ কথিত 'মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ' ক্যাডারদের এই হামলা স্বাভাবিক ঘটনা বলে ধরে নিয়েছেন হয়তো। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ কিছু বয়স্ক লোককে 'পেডোফাইলের' মত এই কিশোর-তরুণ নির্যাতন উপভোগ করতে দেখছি। এদের এই পেডোফাইলতার জাস্টিফিকেশানের কোন অন্ত নেই। পেডোফাইলদের গড়ে তোলা ন্যারেটিভ হচ্ছে, নুর কথিত জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে জড়িত। সুতরাং তাদের অভিমত, কথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ যা করছে ঠিকই করছে।
খুব সম্প্রতি বুয়েটের টর্চার সেলে আবরার নামের একটি তরুণকে রাতভর নির্যাতন করে হত্যা করে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা। আবরারের বিরুদ্ধে অভিযোগের ন্যারেটিভটিও একই ছিলো; সে শিবিরের সঙ্গে জড়িত। আবরার হত্যার পর অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বেরিয়ে এলো, আবরারের পরিবার কখনোই জামায়াত ঘেঁষা ছিলো না। বরং আবরারকে হত্যাকারী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের কারো কারো পরিবারের সঙ্গে জামায়াতের সম্পৃক্ততা ধরা পড়লো।
সেখান থেকে ছাত্রলীগের শিক্ষা হলো না; এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ' নামে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকেই দিনের আলোয় রাতের চেয়ে ঘন অন্ধকারের টর্চার সেল ও ডিটেনশান ক্যাম্প করে তুলেছে তারা।
আর প্রশাসন-পুলিশ নির্বিকার চিত্তে এই ছাত্রমানবতাবিরোধী অপরাধ না দেখার ভান করে চলেছে। ফেসবুকের পেডোফাইলেরা তাদের নরভোজি পুচ্ছটিকে উচ্চে তুলে নাচাচ্ছে।
কতটা অবিমৃষ্য এসব মানুষ; যারা তরুণের বিরুদ্ধে তরুণকে লেলিয়ে দিয়ে রক্তের হোলি খেয়ে তাতে জিতে যাওয়ার আনন্দ খোঁজে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য