আজ শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

করোনা মোকাবেলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর ছদ্ম সাফল্য ও বাস্তবতা

মাসকাওয়াথ আহসান  

করোনার মতো এমন বিপদ তো আমাদের জীবনে কখনো আসেনি। এসময়টাতে প্রত্যেকের অভিন্ন লক্ষ্য; নিজে নিরাপদ থাকা আর অন্যকে নিরাপদ রাখা। এসময় তথ্যের স্বচ্ছ প্রবাহ জীবন বাঁচাতে পারে।

করোনা প্রতিরোধে চীন নিজের সাফল্য যেভাবে দাবি করেছিলো; তা চীনের ভঙুর পণ্যের মতো ভেঙে গেলো আজ; যখন একইদিনে তাদের দেশে করোনায় আগের দেখানো মৃতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দেখাতে হলো।

চীনের মতো এই তথ্যচুরির প্রবণতা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে রয়েছে। ইন্টারনেট যুগে কোন তথ্য চুরি করে লুকিয়ে রাখা যায়না- চীনের এই করোনায় মৃতের সংখ্যা রাতারাতি পালটে একটা অপেক্ষাকৃত বিশ্বাসযোগ্য সংখ্যা বসানোর চুরি ঢাকার অপচেষ্টাটি সে সত্যকে আরও দৃঢ়তা দিয়েছে। কাজেই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে 'তথ্য চুরি' বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানে করোনায় মৃতের যে সংখ্যা সরকারিভাবে জানানো হয়েছে; এতে ব্যাপক জন-অনাস্থা রয়েছে। জ্বর-সর্দি-কাশিতে বা হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মানুষের মৃত্যুকে করোনায় মৃত্যুর তালিকায় না রেখে মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখাতে চেষ্টা করা হয়েছে। করোনায় মরতে মরতেও 'তথ্য চুরির নেশা' ছাড়ছে না দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ-কেরালা রাজ্যে আর দিল্লিতে অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ তথ্য প্রবাহ ও আন্তরিক করোনা ব্যবস্থাপনা চোখে পড়েছে। আর দক্ষিণ এশিয়ায় করোনা মোকাবেলায় একমাত্র সফল দেশ ভুটান। সরকারের সত্য তথ্য প্রদান-সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা; জনগণকে এই ঘোরতর বিপদে স্বস্তিতে রাখার ক্ষেত্রে শতভাগ সাফল্য পেয়েছে ভুটান। ভুটানে নীতি নির্ধারকদের কখনো বিগ মাউথ হয়ে জিডিপি গ্রোথের সঙ্গে বড়াই করতে দেখিনি। তারা কথায় কথায় বলেনি, ভুটান সিঙ্গাপুর কিংবা সুইজারল্যান্ড হয়ে গেছে। ভুটান সবসময় ভুটান থাকতে চেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ভুটান তার উন্নয়নে প্রকৃতি-পরিবেশ আর মানুষের যৌথ জীবনটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সুখের সূচক দিয়ে উন্নয়ন মেপেছে তারা। করোনা পরবর্তী পৃথিবীর উন্নয়ন মডেল কেমন হবে; তা জানতে ভুটানের উন্নয়ন মডেলটিকে জানতে হবে আরও বেশি করে। ভুটানে যেহেতু পরিবেশ বিনাশী উন্নয়নের বড় গলা নেই; তাই সেখানে সুষম উন্নয়ন রয়েছে; যা মানুষ ও প্রকৃতির রক্ষাকবচ তৈরি করেছে।

প্রথম করোনা রোগী চিহ্নিত হবার সঙ্গে সঙ্গে ভুটান তাকে কোয়ারেন্টিন করে; ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে সেই রোগী আর কার কার সংস্পর্শে এসেছে তা খুঁজে বের করে; তাদের কোয়ারেন্টিন করে; করোনা প্রতিরোধে সময়োচিত প্রয়োজনীয় অন্য সব ব্যবস্থা করেছে। এই প্রক্রিয়ায় নীতি নির্ধারকরা একটিও মিথ্যা কথা বলেননি। সত্যের ফল সুখকর হয়। ভুটানের প্রকৃতির কাছে থাকা মানুষেরা তা চর্চা করে তাদের যাপিত জীবনে।

ভুটান এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো জনগণের অর্থ খরচ করে যুদ্ধের সাজে সজ্জিত করেনি নিজেকে। ভুটান অর্থ ব্যয় করেছে করোনার বিরুদ্ধে মানবিক যুদ্ধে। ভুটান জানে, কোন রাষ্ট্রীয় ব্যয় জনগণের জীবন বাঁচাবে।

ভুটান কোন সাফল্যের দাবি করেনি; কারণ বিশ্ব কাঁপিয়ে দেয়া; তাক লাগিয়ে দেবার ঘোড়া রোগ ভুটানের রাজনীতি ও সমাজনীতিতে নেই।

ভুটান দেশটি পরিবেশ আর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক রেখে টিকে থাকায়; পরিবেশ বিনাশী উন্নয়ন মডেলের লোভে না গিয়ে জিডিপি গ্রোথ না খুঁজে মানুষের সুখের সূচককে গুরুত্ব দেয়ায়; আজো তার স্বকীয় জীবনধারা ধরে রাখতে পেরেছে।

রাষ্ট্রিকভাবে সাদাসিধে স্বচ্ছ সৎ পরিবেশবান্ধব জীবন যাপন করলে একটা রাষ্ট্র কতো সীমিত অর্থ-সম্পদ নিয়ে জনগণের নিরাপত্তা ও সুখ নিশ্চিত করতে পারে; তার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে রইলো ভুটান।

দক্ষিণ এশিয়ার চোরের খনিতে এমন সবুজ মানুষের খনিটি দেখে আনন্দ হয়। তথ্য চুরি থেকে ত্রাণ চুরিতে অন্ধকার; দক্ষিণ এশীয় ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোতে করোনা এসে বার বার হাত ধোয়ার দৃশ্যটি "শেক্সপীয়ারের ম্যাকবেথ নাটকে লেডি ম্যাকবেথের বার বার রক্ত মাখা হাত ধোয়া"র দৃশ্যের বাস্তব-রূপায়ন যেন। আর চোরের মুখে সততার মুখোশ নিয়ে উন্নয়নের গান গেয়ে বেড়ানোর যন্ত্রণা থেকে উপায়হীন জনমানুষকে বাঁচাতে; করোনা যেন মিথ্যাবাদী দক্ষিণ এশিয়ার নেতা ও হাতাদের মুখে ঠুলি এঁটে দিয়েছে।

করোনাকালের প্রতিটি দিনের খরখরে বাস্তবতা, দক্ষিণ এশিয়ার প্রতারক নীতিনির্ধারকদের ছদ্ম সাফল্য দেখাতে চুরি করে গোপন রাখা প্রতিটি তথ্য যেন উন্মোচন করে চলেছে।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ