আজ মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

Advertise

জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ড ও রেসিজমের করাল গ্রাস

রাজেশ পাল  

৮০ এর দশকে বিটিভিতে প্রচারিত অত্যন্ত জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ছিলো "রুটস", যার বাংলা অর্থ শেকড়। আমেরিকান লেখক এলেক্স হেইলির বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস "রুটস" অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিলো সিরিজটি। বাংলাসহ একাধিক ভাষায় অনুদিত হয় উপন্যাসটি। কালোদের অর্থাৎ আফ্রিকান আমেরিকানদের কীভাবে ক্রীতদাস হিসেবে জাহাজে ভরে আফ্রিকা থেকে বন্দি করে আনা হয়েছিলো আমেরিকায়। কীভাবে বংশানুক্রমে জীবন কেটেছে তাদের, কীভাবে হয়েছিলো তাদের দাসত্ব মোচন সেই ইতিহাসের সুলুকসন্ধান করেছেন লেখক এলেক্স হেইলি। সেই ক্রীতদাসত্বের যুগ পেরিয়ে এই আফ্রিকান আমেরিকানরা হয়েছেন সেনাপ্রধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত। আমেরিকার ইতিহাসের অত্যন্ত জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি ছিলেন বারাক ওবামা। অর্ধশতাব্দী আগেও যাদের "নিগার" বলে সম্বোধন করা হতো, তারা আজ গর্ব করেই নিজেদের পরিচয় দেন আফ্রিকান আমেরিকান বলে।

বিজ্ঞাপন

আমেরিকানদের নিজস্ব কোন জাতিসত্তা নেই। সেখানকার আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ানদের প্রায় নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি পত্তন করেছিলো মিশ্র জাতিগোষ্ঠীর এই রাষ্ট্রটির। সারা পৃথিবী থেকেই অভিবাসীরা গিয়ে গড়ে তুলেছে আজকের পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর ও সম্পদশালী এই রাষ্ট্রটি। রেড ইন্ডিয়ানদের বিরুদ্ধে চালানো সেই এথনিক ক্লিনজিং এর ইতিহাস বর্ণিত আছে "বেরি মি এট উইন্ডেড নি" বইটিতে। যার বাংলা অনুবাদ হয়েছে "আমাকে কবর দিও হাঁটু ভাঙার তীরে".

কিন্তু আজো বর্ণবাদ টিকে আছে দেশটিতে ভয়াবহ মাত্রাতেই। অসংখ্য জাতিগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা দেশটিতে সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ নিয়ে নির্মিত হয়েছিলো অস্কারজয়ী "ক্রাশ" চলচ্চিত্রটি। "হোয়াইট সুপ্রিমেসি" বা শ্বেতাঙ্গদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে চলেছে সিক্রেট সোসাইটি kkk (ক্লু ক্লক্স ক্ল্যান). উগ্র শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী এই সংগঠনটি জন্মলগ্ন থেকেই ঘৃণা আর বিদ্বেষ ছড়িয়ে চলেছে কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে। একদিকে কৃষ্ণাঙ্গরা হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান, অন্যদিকে হচ্ছেন তীব্র বর্ণবিদ্বেষের শিকার। এই চরম বৈপরীত্য নিয়েই আজকের আমেরিকা।

সম্প্রতি একটি ২০ ডলারের জাল নোটকে কেন্দ্র করে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে প্রতিবাদে উত্তাল আমেরিকা। কৃষ্ণাঙ্গ নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর মৃত্যুর পরে এতোটা বর্ণবাদী বিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়েনি আমেরিকা আর কখনোই। অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তার স্ত্রী পর্যন্ত তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন। হাঁটু গেড়ে বসে নিজেদের অনুতাপ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশবাহিনী। কিন্তু বিক্ষোভ প্রশমিত হওয়ার বদলে বৃদ্ধিই পাচ্ছে উত্তরোত্তর।

এর মাঝে লক্ষণীয় আরেকটি দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে বিক্ষোভের সুযোগে প্রতিবাদের নামে গণহারে বিভিন্ন দোকানপাটে হামলা আর লুটপাট চালাচ্ছেন কিছু আফ্রিকান আমেরিকান প্রকাশ্য দিবালোকেই। ক্যামেরার সামনে উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করছেন তারা লুটের মালামাল দেখিয়ে। এদেশের কেউ কেউ এটাকে বলছেন প্রতিবাদের ভাষা।

বিজ্ঞাপন

সহিংসতা সবসময় সহিংসতাই ডেকে আনে। এটাই হলো ইউনিভার্সাল ট্রুথ। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সেনা মোতায়েনের ঘোষণা পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছেন ইতোমধ্যেই। তার মানে নতুন মাত্রা যুক্ত হতে পারে এই বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে। আমেরিকার পুলিশ বাহিনীর যেমন "ট্রিগার হ্যাপি"বলে বদনাম রয়েছে যখন তখন গুলি চালানোর অভ্যাসের কারণে, ঠিক তেমনি এটাও সত্যি যে শহুরে অপরাধ বা গ্যাং ক্রাইমের হার কালোদের মাঝে তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত বেশি। এর পেছনে কাজ করে মূলত অশিক্ষা, বেকারত্ব আর ঘৃণার রাজত্ব। ফলে বেড়েই চলেছে "ক্রাশ অফ দ্য সিভিলাইজেশনস"।

আমাদের উপমহাদেশে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা যেভাবে বাসুকির নাগপাশে বন্ধন করে বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে। ঠিক একইভাবে বর্ণবাদ বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে ইউরোপ আর আমেরিকায়। পার্থক্য শুধু এই উপমহাদেশে বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে, আর সেখানে বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজপথ।

পুলিশের ব্রুটালিটি যেভাবে চরম মানবাধিকারের লঙ্ঘন, ঠিক একইভাবে লুটপাট, হামলা, ভাঙচুরও সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে চরম হুমকি। এর একটিকেও জাস্টিফাই করার কোনো অবকাশই নেই।

জর্জ ফ্লয়েড হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রত্যাশা করি। সেই সাথে প্রত্যাশা করি অবসান হবে লুটপাটের অরাজকতার।

সাদা, কালো, এশিয়ান, আফ্রিকান, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে গড়ে উঠুক একটি সাম্যের পৃথিবী। সেই প্রত্যাশাই করি কায়মনোবাক্যে। মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র এর ভাষাতেই বলি, I have a dream.

রাজেশ পাল, আইনজীবী, ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কর্মী

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অধ্যাপক ডা. শেখ মো. নাজমুল হাসান ২৭ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৫ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৪ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১১০ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪৪ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩২ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪৩ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯৩ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ২৫ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ শাখাওয়াত লিটন শাবলু শাহাবউদ্দিন