প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
জহিরুল হক বাপি | ০১ এপ্রিল, ২০২২
শ্রীলঙ্কার আর্থিক দুরবস্থার তথ্য ফেসবুকে পড়লাম। অবস্থা এতই খারাপ যে কাগজের অভাবে পরীক্ষা নেওয়া বন্ধ, পেট্রলের অভাবে ২৫% গাড়ি রাস্তায় চলতে পারছে। সবক্ষেত্রেই এ দুরবস্থা। আসলে কোন কিছুর অভাব নেই। অভাব "টাকার"। এর বিপরীতে শ্রীলঙ্কায় বড়, বড় নান্দনিক সব অবকাঠামো।
শ্রীলঙ্কান সরকার গত কবছর একের পর এক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে গেছে চীনের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে। অবকাঠামোগত এত উন্নয়ন করেছে যে অন্য কোন দিকে তারা নজর দেবার সময় পায়নি। হয়ত ভাবার সময়ও পায়নি। আজ রাস্তা চকচকে, দালান ঝকঝকে। কিন্তু রাস্তায় গাড়ি চালানোর জন্য তেল কেনার টাকা নেই। ঝকঝকে দালানে শিক্ষার্থীদের কাগজ কেনার টাকা নেই, বই ছাপানোর সংগতি নেই। ঢাকাইয়া প্রবাদ: উপরে দিয়া ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট। এ প্রবাদের বাস্তব উদাহরণ এখন শ্রীলঙ্কা।
বাংলাদেশের অবস্থাও সেই দিকে অনেকটা চলে গেছে। তবে তা আর্থিকভাবে না আত্মিক ভাবে। বাংলাদেশের অর্থের যোগান দিচ্ছে প্রবাসীরা। তাদের রক্ত পানি করা পয়সায় নিত্য নতুন অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। প্রায় কোটি খানেক মানুষ বিদেশে। দিন দিন বিভিন্ন দেশে আমাদের কাজের সুবিধা আরও বাড়ছে সরকারের চেষ্টায়। তাই বাংলাদেশ আর্থিক দুরবস্থায় পড়বে না। কিন্তু আত্মিক অবস্থা কুশিক্ষা, মৌলবাদ।
শ্রীলঙ্কান সরকার অবকাঠামো উন্নয়নের সাথে ভাবেনি কী করে আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন করবে তেমনি বর্তমান সরকার অবকাঠামোগত উন্নয়নের সাথে ভাবছে না কি করে আত্মিক উন্নতি, শিক্ষার উন্নতি করবে। বরং যতটুকু ছিল আত্মিক উন্নয়নের ব্যবস্থা সব একে একে শেষ হয়ে গেছে, যাচ্ছে। এর ফল কঠিনভাবে দৃশ্যমান। গত এক যুগে ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্ম বিকৃতকারীরা মানুষের বিশেষ করে কিশোর, তরুণদের মগজ খুব ভালোভাবে দখল করে ফেলেছে সুদূরপ্রসারী ভাবনায়। ধর্ম বিকৃতকারীদের সরকার ব্ল্যাংক চেক দিয়ে রেখেছে। মুফতি ইব্রাহিম, আমীর হামজা, আযহারী, মামুনুল হকের মতো মিথ্যুক, ধর্ম ব্যবসায়ীরা ধর্মকে যাচ্ছেতাইভাবে ব্যবহার করেছে নিজ স্বার্থে। অবস্থা এমন যে হুজুর বলৎকার, ধর্ষণ করলেও সেটা জায়েজ। এসব হুজুরদের অসততা ধরিয়ে দিলেও মানুষের কাছে তা ধর্ম অবমাননা। হুজুররাই এখন ধর্ম। এটা তো ছোট একটা উদাহরণ।
অবস্থা এরচেয়ে কয়েক লক্ষগুণ খারাপ। মুন্সীগঞ্জের স্কুলের অবস্থা একটা উদাহরণ মাত্র। জীববিজ্ঞান পড়ানোর কারণে ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনেছে। ভাঙচুর করেছে। তারা বিজ্ঞান বইও পড়তে রাজি না। তারা বিজ্ঞান জানবে ধর্মীয়গ্রন্থ থেকে। এ ধারণা এসব শিক্ষার্থীদের মগজে, মনে আপনাআপনি ঢুকে নাই। গত এক যুগে ঢোকানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ নির্দোষ। এখানে দোষ পুরাই সরকারের।
বর্তমানে রাস্তাঘাটে, পার্কে গানবাজনা করলে ধর্মের নামে কেউ না কেউ প্রকাশ্যেই বাধা দিচ্ছে। হিজাব না পরার কারণে বাসযাত্রীকে নাজেহাল করেছে আরেক যাত্রী। সবাই যেন শরিয়া পুলিশ। অথচ বিপরীতে ঘুষ দুর্নীতি বেড়ে গেছে। আত্মা কলুষিত।
পরিশ্রম করে শ্রীলঙ্কা হয়তো দ্রুতই তাদের আর্থিক অবস্থা ফেরাতে পারবে। কিন্তু আমাদের কয়েক প্রজন্মের মগজে, আত্মা যে ভাবে বিষাক্ত হয়ে গেছে তা দূর করার কোন ব্যবস্থা তো নাই, উপরন্তু মনে হচ্ছে সরকারই এসবের পোষকতা করছে।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য