প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আজম খান | ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
আরবদের খুবই বুদ্ধিমান একটা জাতি মনে হয়। কেন মনে হয় সেটা বলছি। বুদ্ধিমান লোকজন দুইটা কাজ করে। প্রথমত তারা ঠেকে শেখে না, দেখে শেখে। দ্বিতীয়ত এরা বাস্তববাদী।
২০২৩ সালের মে মাসে সৌদি আরব প্রথমবারের মতন কাউকে মহাকাশে পাঠিয়েছে। বেশিদূর তারা যায়নি। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন পর্যন্ত গেছে। তাদের মধ্যে একজন পুরুষ, আলী-আল-কারনি। আরেকজন নারী, রায়ানা বারনায়ি। সৌদি একজন নারীকে তাদের প্রথম মহাকাশ অভিযাত্রায় যুক্ত করে বার্তা দিতে চেয়েছিল তাদের নারী সমাজকে। বার্তাটা হচ্ছে যে রাষ্ট্র সকল নারী যতদূর যেতে চায় ততদূর যেতে সহযোগিতা করবে। এমনকি মহাকাশ পর্যন্ত যেতে চাইলে তাও সই।
যতদিন দুনিয়াতে মানুষ তেলের বিকল্পের কথা ভাবেনি বা বিকল্প ফিজিবল ছিল না আরবেরা যা খুশি করেছে। কিন্তু ধাক্কা লাগা শুরু করেছে ২০১০ সালের পর থেকে, যখন সোলারসহ অন্যান্য বিকল্প জ্বালানি প্রযুক্তি ম্যাচিউরড হওয়া শুরু করল। প্রযুক্তি ম্যাচিউরড হওয়া মানে কস্ট এফিশিয়েন্ট হওয়া। আর কস্ট এফিশিয়েন্ট মানে সেই প্রযুক্তির গণহারে ব্যবহার হওয়া। মোবাইল ফোনের কথাই উদাহরণ হিসাবে চিন্তা করতে পারেন।
তাহলে তেল না থাকলে আরবের অর্থনীতি চলবে কীভাবে? এ চিন্তা থেকেই আরবেরা বদলানো শুরু করল। প্রথম শুরু করল আরব আমিরাত, তারপর সৌদি আরব। এখন অন্য দেশগুলোও সেদিকে হাঁটছে। ইউরোপের মতই তারা ধর্মকে ছাঁচে ফেলে বনসাই বানানোর পথে হাঁটছে। সাথে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী উন্নত দেশগুলোর মডেল ফলো করছে।
এ দেশগুলো ঘোষণা দিয়ে ওহাবী-সালাফি ধর্মালয়ের ফান্ডিং দেশ-বিদেশে বন্ধ করে দিয়েছে। নারীদের ঘর থেকে বের করে আনার জন্য এমন কোন উদ্যোগ নাই নিতে বাকি রাখছে। হিসাবটা পাটিগণিতের মতই সোজা। জামাই একলা কাজ করলে বেতন ৫ হাজার, বৌও যদি কাজ করে তবে ঘরের ইনকাম ১০ হাজার। এই ফর্মুলা দেশের ক্ষেত্রেও খাটে। দেশের অর্ধেক নারী। তারা যদি কাজ না করে তবে দেশের যতটুকু ইকোনমিক গ্রোথ হওয়ার কথা হবে তার অর্ধেক। এ কারণেই আরবদের নারীদের ঘর থেকে বের করার জন্য পারাপারি। এখানে কারো কোন ষড়যন্ত্র নাই।
দুবাইতে গেলে ভ্রম হয় আসলে এটা কি ইউরোপ? বরং ইউরোপের চাইতেও ক্ষেত্রবিশেষে বেশি স্বাধীনতা আছে বলে আমার মনে হয়। সৌদিও একই দিকে হাঁটছে। পর্যটন এরিয়া করেছে। কনসার্ট, নারীদের খেলার টুর্নামেন্ট, ফুটবল সব কিছুর পসরা সাজিয়ে বসছে। কারণ একটাই; টাকা চাই, টাকা। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তো আরব সম্মেলনে ঘোষণা দিয়েই ফেলছে তার জীবনের একটাই লক্ষ্য আরবকে ইউরোপের মতই বাণিজ্যে, জ্ঞানে, প্রযুক্তি, সংস্কৃতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আরবেরা সেটা করবেও। আমাদের মতন অবাস্তববাদী তারা না। তারা উন্নত জীবনের স্বাদ তেলের টাকা দিয়ে পেয়েছে। তেলের যুগ শেষে তারা আবার মরুভূমির অভাবের জীবনে ফিরতে চায় না।
হ্যাঁ, এখনো আরবকে যেতে হবে বহুদূর। রাজতন্ত্রকে ধরে রেখে কতটুকু জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা সম্ভব সেটা অবশ্যই একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। মৌলিক জ্ঞানের চর্চার জন্য সমাজে চাই মুক্তমত প্রকাশের অধিকার। সেটা নাই তাদের। তবে তারা সঠিক রাস্তাতেই আছে। অন্তত সেই রাস্তায় হাঁটার পথে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সমাজগুলোর চাইতে গত কয়েক বছরেই কয়েক শত মাইল এগিয়ে গেছে। আমাদের নিয়তিই সম্ভবত অন্যদের পেছনে দৌড়ানো…
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য