প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শ্যামলাল গোসাঁই | ০৯ অক্টোবর, ২০২৩
বর্তমানে বিশ্বের আলোচিত ইস্যুতে পরিণত হয়েছে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যকার সংঘাত। যদিও, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের এ আক্রমণকে যুদ্ধ বলে ঘোষণা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে হামাসকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে বলেও হুশিয়ারি দিয়েছেন। নেতানিয়াহুর ভাষায়- 'গাজাকে জনমানবশূন্য দ্বীপে পরিণত করব।' এরপর থেকে গেল দুদিন ধরে দেশ দুইটিতে হামলা ও পালটা হামলার ঘটনা ঘটছে।
এখন পর্যন্ত হাজারের বেশি লোক নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। বিশ্ব মোড়লরাও মনে মনে ধরে নিয়েছেন, হামাস-ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সংঘাতের জেরে ফিলিস্তিনের গাজায় রক্তক্ষয়ী অধ্যায় আরও দীর্ঘ হতে যাচ্ছে। এর কারণ, ইসরায়েলের গত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে হামাসের সাম্প্রতিক হামলাটি ছিলো সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। কিন্তু, গোপনে হামাস-ইসরায়েলের এই অস্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থায় বিপাকে পড়েছে আরেক বিশ্ব মোড়ল দেশ আমেরিকা। সহজ করে বললে, আসন্ন নির্বাচনের আগে মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীল অবস্থা ফেরাতে আমেরিকার এতদিনের চেষ্টাটি হুমকিতে পড়েছে ইসরায়েল আর হামাসের মধ্যকার এই দ্বন্দ্বের ফলে। এতে করে চিন্তার ভাঁজ হয়তো দেখা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কপালে।
মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসলে বিশেষ করে, সুন্নিপ্রধান আরব দেশগুলোর সাথে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়ে গেলে এটি হবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাম্প্রতিক বছরের শ্রেষ্ঠ অর্জন। যা তাকে আমেরিকার আসন্ন নির্বাচনে আরও জনপ্রিয় করে তুলবে। বাইডেন প্রশাসন সে লক্ষ্যেই সৌদি আরব ইসরায়েলের মধ্যে একটি চুক্তির বন্দোবস্ত করেছে। উদ্দেশ্য, সুন্নিপ্রধান আরব বিশ্বের 'পিতা' সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের গরম সম্পর্ক শীতল করে মধ্যপ্রাচ্যে আপাতত শান্তি ফিরিয়ে আনা। এবং নির্বাচনে বাইডেনের জয়ের পথ আরও সহজ করা।
ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা হচ্ছে, এখন ফিলিস্তিন আর ইসরায়েলের মধ্যে সংঘাতে আমেরিকার এই দাবার চালটি হুমকির মুখে পড়েছে। যদিও সৌদি আরব খোলাখুলি ভাবে আমেরিকার মধ্যস্থতায় হতে যাওয়া সৌদি-ইসরায়েল চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় নি; তবে চুক্তি সাক্ষরের ব্যাপারে অগ্রসরের কথাও জানাচ্ছে না সৌদি আরব। শনিবার থেকে শুরু হওয়া হামাস ও ইসরায়েলি বাহিনীর সংঘাতের ফলে চুক্তিটি সৌদি যুবরাজ আপাতত স্থগিত রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এরিমধ্যে হামলার পর সৌদি যুবরাজ মুখে নাম না নিলেও এ হামলার জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছেন। ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির হতে যাওয়া চুক্তিটির ভবিষ্যৎ কী হচ্ছে তা এখনি বোঝা যাচ্ছে না।
হামাস-ইসরায়েলে হামলা শুরুর পর তাৎক্ষণিকভাবে নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়েছে তার দুই পরম মিত্র আমেরিকা ও ব্রিটেন। সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশও আছে। ইসরায়েলকে সহযোগিতার জন্য তারা এরিমধ্যে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের হামাস গোষ্ঠীর এ হামলাকে সমর্থন জানিয়েছে ইরান, লেবানন সহ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলো। তারা প্রকাশ্যেই হামাসকে সমর্থন করে বিবৃতি দিয়েছেন। সেদিক থেকে সৌদি আরব ইসরায়েলকে দোষারোপ করা ছাড়া বড় কোনো পদক্ষেপ নেয় নি। ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তি থেকে সরে যাওয়া ফিলিস্তিনের পাশে থেকে সৌদির একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারতো। কিন্তু, সৌদি আরব সহজেই ইসরায়েলের সাথে চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে বলেও মনে হয় না। কারণ, ইসরায়েলের সঙ্গে অনুষ্ঠিতব্য এ চুক্তিতে সৌদির জাতীয় স্বার্থ রয়েছে। এই চুক্তির বিনিময়ে সৌদি আরব আমেরিকার কাছ থেকে নিরাপত্তাজনিত সুবিধার আশা জানিয়েছে। আমেরিকা যেহেতু যেকোনো ভাবে চায় মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরে আসুক তাই তারা সৌদিকে নিরাপত্তা সুবিধা দিতে সহজেই রাজি হয়েছে।
সৌদি আরব আর ইসরায়েলের এই চুক্তির ফলে ফিলিস্তিনের হাজারো স্বার্থ জলাঞ্জলি যে যাবে তা সৌদির জানা কথা। উপরন্তু, সৌদি আরব ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিকে পাশ কাটিয়ে হলেও ইসরায়েলের সঙ্গে চুক্তিতে রাজি হয়েছে শুধুমাত্র আমেরিকার কাছ থেকে নিরাপত্তা এবং পরমাণু কার্যবিধি চালানোর সুবিধা পাওয়ার জন্য। তবে, হামাস-ইসরায়েলের মধ্যে হামলা, পাল্টা হামলার পর সেই চুক্তি স্থবির হয়ে গেছে। যা, এই মুহূর্তে আমেরিকার জন্য প্রধান দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমেরিকার জাতীয় নির্বচনের আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। গত নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন বিজয়ী হলেও তার আমলে তেমন কোনো প্রাপ্তি না আসায় আমেরিকায় বাইডেনের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমেছে। হারানো জৌলুশ ফিরিয়ে আনতে বাইডেন প্রশাসনের অনেক উদ্যোগের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ মধ্যপ্রাচ্যে চলমান সংঘাত, অস্থিরতা কমিয়ে সেখানে শান্তি ফিরিয়ে আনা। যা বাইডেনকে বিশ্ব অঙ্গনে এবং নিজ দেশের অভ্যন্তরে শান্তিকামী নেতা হিসেবে আরও জনপ্রিয় করে তোলতে সাহায্য করবে এবং আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হতে সাহায্য করবে। এ লক্ষ্যেই ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যকার দীর্ঘদিনের সাংঘর্ষিক সম্পর্কে বন্ধুত্বপূর্ণ করতে তোড়জোড় শুরু করে আমেরিকা। যখন চীন চেষ্টা করছে তাদের মধ্যস্থতায় আরেক মুসলিম দেশ ইরান এবং সৌদির সম্পর্কের ফাটল ঠিক করার। ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েলের চলমান সংঘাত বা যুদ্ধ আমেরিকার মধ্যস্থতায় হতে যাওয়া চুক্তি থেকে সৌদি আরব-ইসরায়েলের দূরত্ব বাড়ালেও দূরত্ব কমিয়েছে ইরান-সৌদির। ফিলিস্তিনের উপর হামলার প্রতিবাদে এরমাঝেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসরায়েল বিরোধী স্লোগান শোনা যাচ্ছে।
বিশ্ব নেতারা দুই দেশকে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানালেও ইসরায়েল গাজায় অভিযানের কথা জানাচ্ছে। যা হতে পারে ইসরায়েলি বাহিনীর ফিলিস্তিনে ২০১৪ সালে চালানো হামলার চাইতেও ভয়াবহ। এটাও পরিষ্কার ইসরায়েল কর্তৃক ফিলিস্তিনের গাজায় এমনকিছু ঘটলে এর রেশ ছড়িয়ে পড়তে পারে মধ্যপ্রাচ্যের সেইসব দেশগুলোতেও যারা ইসরায়েলের বিরোধিতা করছে এবং স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনিদের সমর্থন জানাচ্ছেন। যা হবে আমেরিকার জন্য আরও খারাপ পরিস্থিতি। তাই মধ্যপ্রাচ্যের এই কুটিল রাজনৈতিক মাঠে নির্বাচনের আগে মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে চালানো আমেরিকার শেষ দাবার চালটি ভেস্তে যাবে না সফলতা পাবে সেটিই এখন দেখার অপেক্ষায় বিশ্ববাসী।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য