প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
শ্যামলাল গোসাঁই | ২৩ জানুয়ারী, ২০২৪
গেল শুক্রবার আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরিমধ্যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের শুনানি শেষ হয়েছে। এবার অপেক্ষা, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালত কী রায় দেয় তার। কিন্তু, অনেক মুসলিম সমাজেই প্রশ্ন উঠেছে ফিলিস্তিনের এহেন দুর্দিনে শক্তিধর আরব দেশগুলো কেন আন্তর্জাতিক ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এই মামলা করল না? ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করার মতো যথেষ্ট প্রমাণাদি থাকার পরও কেন সৌদি আরব, মিশরের মতো দেশগুলো এই ইস্যুতে শীতল অবস্থানে আছে?
এই প্রশ্নগুলোর ঠিকঠাক উত্তর আমাদের অনেকেরই না জানার কথা। তবে, বিশ্ব রাজনীতির দিকে যাদের এক চোখ দৃষ্টিবদ্ধ থাকে তাঁরা অনুমান করতে পারেন সৌদি কিংবা মিশরের মতো দেশগুলোর এই নীরবতার নেপথ্যের কারণগুলো। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এপ মতামত বিভাগে এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ লিখেছেন আরাবি টোয়েন্টিওয়ান নিউজ ওয়েবসাইটের প্রধান সম্পাদক ফেরাস আবু হেলাল। তাঁর ওই লেখায় শক্তিধর আরব দেশগুলোর, বিশেষ করে সৌদি আরব, মিশরের মতো দেশগুলোর ইসরায়েল ইস্যুতে নীরব থাকা বা পশ্চিমঘেঁষা মনোভাবের নেপথ্যের কিছু কারণ তিনি তুলে ধরেছেন। যা, খুবই প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়েছে।
আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকা মামলা করলেও, জাতিগত দিক থেকে আরবদের এ মামলায় এগিয়ে আসা ছিল বেশি আশাজনক ব্যাপার। কিন্তু, আরবরা ইসরায়েল ইস্যুতে ফিলিস্তিনিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সেরকম কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। তাঁরা শুধু দুই পক্ষকে 'সংযম' ধারণের আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু, প্রশ্ন হলো কেন শক্তপোক্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও সৌদি আরব, মিশরের মতো দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কোনো উচ্চাওয়াজ করলো না? দক্ষিণ আফ্রিকাকেই কেন ফিলিস্তিনের পক্ষে মামলা করতে হলো?
যে মামলাটি দক্ষিণ আফ্রিকা করেছে, একই মামলা করতে পারতো অন্তত আরও ১৯টি মুসলিম দেশ। কিন্তু, তাঁরা নীরব কেন? একই বিবেচনায় ১৯টি আরব ও মুসলিম দেশ জেনেভা কনভেনশনের আওতায় একইভাবে মামলাটি করতে পারত। এসব মুসলিম দেশের মধ্যে রয়েছে মিসর, সৌদি আরব, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিরিয়া, সোমালিয়া, সুদান, ইরাক, ওমান, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মরক্কো, ইয়েমেন ও ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ (পিএ)।
যদিও এরমধ্যে কিছু দেশ কারণ দেখাতে পারে যে, তাঁরা ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবেই স্বীকৃতি দেয় না বলে তাঁরা মামলাটি করতে পারবে না। কিন্তু, সৌদি আরব, মিশর, ইয়েমেন, আলজেরিয়ার মতো দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ কথা খাটবে না। কেননা, রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের পাশাপাশি এই মুসলিম দেশগুলো ইসরায়েলের সাথে নিজেদের সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে অনেক উদ্যোগী হয়েছে। যার নেপথ্যের আয়োজক ছিল পশ্চিমা দেশগুলো। বিশেষ করে আমেরিকা।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার আনা গণহত্যার অভিযোগের শুনানি শেষ হয়েছে। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা সুনির্দিষ্ট করে বলেছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। কিন্তু, কোনো আরব দেশ এখনো দৃঢ়তার সাথে এই কথাগুলো বলতে পারেনি। এর কারণ চলুন ফেরাস আবু হেলালের সেই মতামত থেকে জেনে নেওয়া যাক।
ফেরাস আবু হেলাল তাঁর লেখায় দেখিয়েছে ফিলিস্তিন ইস্যুতে শক্তিধর কিছু আরব দেশের নীরব থাকার নেপথ্যের কারণগুলো। তাঁর মতে, মূলত নিজেদের দীর্ঘদিনের চর্চিত কুকর্ম ঢেকে রাখতেই এমন নীরব অবস্থানে আছে সৌদি আরব, মিশর, ইয়েমেনের মতো দেশগুলো।
আবু হেলালের মতে, সৌদি আরব ও মিসর এ বিষয়ে যে ব্যাখ্যা দিতে পারে তা হলো, ইসরায়েল ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কোপানলে পড়ার ভয়। বেশির ভাগ আরব দেশ বিশ্বাস করে, তাদের পক্ষে ইসরায়েল ইস্যুতে আমেরিকার অবস্থানকে অস্বীকার করা সম্ভব নয়।
এর বাইরে আরব দেশগুলোর মানবাধিকারসংক্রান্ত কুখ্যাত রেকর্ডগুলোও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেতে তাদের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের আশঙ্কা, আইসিজেতে যদি তারা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা করতে যায়, তাহলে ইসরায়েলও আইসিজেতে আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিতে পারে।
বেশির ভাগ আরব দেশকেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অভিযুক্ত করা যেতে পারে। তাছাড়া, মিসর একটি দুর্নীতিগ্রস্ত আইনি ব্যবস্থা দিয়ে বানোয়াট অভিযোগে হাজার হাজার রাজনীতিবিদ এবং বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীকে কারারুদ্ধ করে রেখেছে। মিসরের বিরুদ্ধে বহু মানবাধিকারকর্মীকে ঠান্ডা মাথায় খুন করার ও গুম করার অভিযোগ আছে। সৌদি আরব একইভাবে অসংখ্য ভিন্নমতাবলম্বীর ওপর উৎপীড়ন চালিয়েছে। ইয়েমেনে সৌদি আরব যুদ্ধাপরাধ করেছে বলেও জোরালো অভিযোগ আছে।
তাই ফেরাস আবু হেলাল তাঁর লেখার পরিশেষে বলেছেন, মূলত নিজেদের এসব অপকর্মের কারণে আরব দেশগুলো আইসিজে কিংবা আইসিসিতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নালিশ করতে যায় না।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য