Advertise
কাজী মাহবুব হাসান | ১০ জুন, ২০১৬
Each man’s death diminishes me,
For I am involved in mankind.
Therefore, send not to know, For whom the bell tolls,
It tolls for thee. (John Donne (1572–1631)
যুদ্ধের নামে মানুষের বর্বরতার উদাহরণের কোনো অভাব নেই ইতিহাসে। তবে বর্বরতার এই ইতিহাসটির সাক্ষী চেকোস্লোভাকিয়ার ছোটো একটি গ্রাম লিদিৎসে (Lidice)। ১৯৪২ সালের ১০ জুন নাৎসি জার্মানির এসএস সেনাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এই গ্রামটির নিরীহ বেসামরিক অধিবাসীরা: শিশু, নারী এবং পুরুষ।
১০ জুন সেই গণহত্যার ৭৪তম বার্ষিকী। এই ৭৪ বছরে আরো অসংখ্য গণহত্যা হয়েছে। ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য,ধর্ম আর সাম্রাজ্যবাদের শিকার হয়েছে নিরীহ শিশু, নারী ও পুরুষ। আমরা কিছুই বদলাতে পারিনি এবং পারবো বলেও অনেকের মত আমি আশাবাদী না। তাই হয়তো এই লেখা : সব গণহত্যার সামাজিক ও রাজনৈতিক বিস্মৃতির প্রতি, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির প্রতি অসহায় কিছু শব্দমালা।
লিদিৎসে’র শিশুদের স্মরণে চেক ভাস্কর মারী উচাইতিলোভার The Memorial to the Children Victims of the War
বর্তমান চেক প্রজাতন্ত্রের রাজধানী প্রাহা ( Prague) থেকে প্রায় ২০ কিমি দুরে উত্তর পশ্চিমেই অবস্থিত লিদিৎসে; ১৯৪২ সালে যেখানে মুল গ্রামটি ছিল, তার কাছেই আবার নতুন করে তৈরি করা হয়েছে লিদিৎসে, পুরো গ্রামটাই এখন এক ভয়াবহ ইতিহাসের স্মৃতি সৌধ। ৭৪ বছর আগে নাৎসি জার্মানির নিয়ন্ত্রণাধীন বোহেমিয়া ও মোরাভিয়ার একটি গ্রাম ছিল লিদিৎসে।১০ জুন, ১৯৪২ সালে হিটলারের জার্মান সরকার ঘোষণা করেছিল, তারা চেকোস্লোভাকিয়ার একটি গ্রাম লিদিৎসে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে, এর সব প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ এবং প্রায় ৫২ জন নারীকে হত্যা করে এবং বাকী জীবিত নারী এবং শিশুদের ( করা সম্ভব এমন কয়েকটি শিশু ছাড়া, যাদের জার্মানিতে পাঠানো হয়েছিল) কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। নাৎসিরা এরপর দম্ভ করে ঘোষণা দেয়, লিদিৎসে, এর অধিবাসীদের, এই গ্রামের নাম পর্যন্ত স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হলো। কিন্তু লিদিৎসে’র নাম নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি হিটলার।
লিদিৎসে এখন শান্ত একটা শহর, যার পাশেই এখন আছে ধ্বংস হয়ে যাওয়া পুরনো গ্রামের কিছু পাথূরে অবশেষ, নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মরণে গড়া স্মৃতি সৌধ, লিদিৎসের হারিয়ে যাওয়া শিশুদের স্মরণে একটি হৃদয়স্পর্শী একগুচ্ছ ব্রোঞ্জ মূর্তি, একটি গোলাপ বাগান, মিউজিয়াম, লিদিৎসে মেমোরিয়াল।
কি হয়েছিল সেদিন লিদিৎসে গ্রামটিতে? তার আগে কিছুটা ইতিহাস বলতে হবে।
১৯৩৮, মিউনিখ চুক্তির পরেই হিটলারের সেনাবাহিনী জাতিগতভাবে জার্মান প্রধান বোহেমিয়া এবং মোরাভিয়ার বেশ কিছু এলাকার দখল নেয়, এর কিছু দিন পর অন্যদিকে হাঙ্গেরি দক্ষিণ স্লোভাকিয়া এবং রুথেনিয়া এলাকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৯৩৯ সালের মার্চ মাসে হিটলার আরো কিছু চেক অংশ দখল করে নিলে, চেকোস্লোভাকিয়ার আর কোনো অস্তিত্ব থাকেনা, আর বাকী স্লোভাকিয়া তখন একটি নাৎসিদের পুতুল রাষ্ট্রে পরিণত হয়। নাৎসি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এরপর দ্রুত বাড়তে থাকে চেকদের প্রতিরোধ আন্দোলন। আর সেই আন্দোলন দমন করতে, এসএস (SS বা Schutzstaffel, যার আক্ষরিক অর্থ প্রতিরক্ষা বাহিনী, যা নাৎসি পার্টির অধীনে একটি প্যারামিলিটারি বাহিনী ছিল) এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইনহার্ড হেইড্রিশকে ১৯৪১ এর সেপ্টেম্বরে জার্মান দখলকৃত এলাকায় উপপ্রধান হিসাবে নিয়োগ দেয় জার্মান হাই কম্যান্ড।
রাইনহার্ড এর সংক্ষিপ্ত ত্রাসের রাজত্বে প্রায় ৫০০০ ফ্যাসিবাদ বিরোধী যোদ্ধা এবং তাদের সাহায্যকারীদের বন্দী করা হয়। মার্শাল কোর্টের দ্রুত বিচারে বা কখনো বিনা বিচারে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়, রাইনহার্ড এই সময় কুখ্যাত ছিলেন ‘প্রাহার কসাই’ নামে।