আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ এখন কী করবে

রেজা ঘটক  

কেউ কী বলতে পারবেন “বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মায়ানমার নাগরিক শুমারি, ২০১৫” প্রকল্পটির এখন কী অবস্থা? ২০১৬ সালের মার্চের মধ্যে এই শুমারি শেষ করার কথা ছিল। গৃহীত ওই উদ্যোগে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শুমারির আওতায় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও পটুয়াখালীর রোহিঙ্গাদের গণনা করার কথা ছিল। এজন্য ২১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল।

বাংলাদেশে মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা আছে বলে জাতিসংঘ স্বীকার করে। আর কক্সবাজারের স্থানীয়দের মতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ২ থেকে ৫ লাখের বেশি। বাস্তবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৭ লাখেরও বেশি।

বাংলাদেশ ছাড়াও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সৌদি আরবে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু রয়েছে। মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের সেদেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করে না। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বর্তমানে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে। অর্থাৎ রোহিঙ্গা জাতির অর্ধেকের বেশি বিভিন্ন দেশে উদ্বাস্তু। যার মধ্যে প্রায় ৯০% বাংলাদেশে।

মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে 'গ্যাটো' নামে সরকারিভাবে কিছু জায়গায় রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে মিয়ানমার সরকার। সরকারের অনুমতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের গ্যাটো এলাকা থেকে বের হবার সুযোগ নেই। মিয়ানমারের ভূমি ও সম্পত্তি আইন অনুযায়ী রোহিঙ্গারা কোনো জমির মালিক হতে পারে না। রোহিঙ্গারা মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টিতে অবৈধ অভিবাসী বা বিদেশী। মিয়ানমার ১৩৫টি জাতিগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও রোহিঙ্গাদের স্বীকৃতি দেয়নি।

আন্তর্জাতিক মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলোর সঙ্গে রোহিঙ্গাদের এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলোর জঙ্গি কর্মীদের একটা বড় উৎস হলো রোহিঙ্গা। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক মুসলিম জঙ্গি সংগঠনগুলো তাদের জঙ্গি কর্মী হিসেবে রিক্রুট করছে।

রামুতে বৌদ্ধ বিহারে সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের সুস্পষ্ট জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা, চোরাকারবারি, ধর্ষণসহ নানা ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রমাণ রয়েছে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে গিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করারও প্রচুর উদাহরণ রয়েছে।

১৯৭৮ সালে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সামরিক সরকারের শাসনামলে মিয়ানমার থেকে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। মুসলিম বিশ্বের কাছে দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জনের কৌশল হিসেবে জিয়ার সামরিক সরকার জাতিসংঘের মানবিক আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের উদ্বাস্তু হিসেবে থাকার সুযোগ প্রদান করে।

রোহিঙ্গা ইস্যুটি বাংলাদেশের জন্য সেই থেকে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মত ঝুলে আছে। নপুংসক জাতিসংঘ মিয়ানমার সরকারকে কিছু বলে না। অথচ যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক। মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, লাওস ও থাইল্যান্ডের। অথচ জাতিসংঘ কেবল বাংলাদেশকে রোহিঙ্গাদের জন্য সীমান্ত খুলে দেবার অনুরোধ করার পেছনে পশ্চিমাদের কূটকৌশল জড়িত।

ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী বাংলাদেশের প্রতি পশ্চিমা শক্তিশালী দেশগুলোর কুনজর বর্তমান সময়ে একটি বড় ধরনের আন্তর্জাতিক ইস্যু। রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশে একটি মহল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোরও চেষ্টা করছে। যে কারণে বাংলাদেশের পক্ষে নতুন করে সীমান্ত খুলে দিয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ করানোর কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সবসময় রোহিঙ্গাদের মানবিক সহযোগিতা করেছে। ২০১২ সালে মিয়ানমারে জাতিগত দাঙ্গার সময়েও বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের উচিত রোহিঙ্গা ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত জোরালোভাবে উপস্থাপন করা। একই সঙ্গে বাংলাদেশে থাকা ৭ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের ফিরিয়ে নেবার জন্য মিয়ানমারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করা। বাংলাদেশ যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ না করে, তাহলে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের জন্য সমূহ ক্ষতি করবে স্থানীয় মৌলবাদী শক্তি ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারী শক্তিগুলো।

অতএব রোহিঙ্গা ইস্যুতে মানবিকতার চেয়েও সরকারকে আরো বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। নতুবা গোদের উপরের বিষফোঁড়া বাংলাদেশের জন্য এক নতুন আপদ তৈরি করবে।
২০ নভেম্বর ২০১৬

রেজা ঘটক, সাহিত্যিক, নির্মাতা

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ